আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ

পরিচিতি

قُلْ هٰذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْآ إِلَى اللهِ عَلٰى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَآ أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ-

উচ্চারণ : ‘কুল হা-যিহী সাবীলী আদ্‘ঊ ইলাল্লা-হি ‘আলা বাছীরাতিন্ আনা ওয়া মানিত্ তাবা‘আনী; ওয়া সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন’।

অর্থ : ‘তুমি বল এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে, জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ-মাক্কী ১২/১০৮)।

ফার্সী সম্বন্ধ পদে ‘আহলেহাদীছ’ এবং আরবী সম্বন্ধ পদে ‘আহলুল হাদীছ’-এর আভিধানিক অর্থ : হাদীছের অনুসারী। পারিভাষিক অর্থ : পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী। যিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তকে নিঃশর্তভাবে মেনে নিবেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু  ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ছাহাবায়ে কেরামের তরীকা অনুযায়ী নিজের সার্বিক জীবন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন, কেবলমাত্র তিনিই এ নামে অভিহিত হবেন।

ছাহাবায়ে কেরাম হ’লেন জামা‘আতে আহলেহাদীছের প্রথম সম্মানিত দল, যাঁরা এ নামে অভিহিত হ’তেন (খতীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ ১২ পৃ.)। ‘বড়পীর’ বলে খ্যাত শায়খ আব্দুল ক্বাদের জীলানী বাগদাদী (রহঃ) বলেন, ‘আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্য কোন নাম নেই ‘আহলেহাদীছ’ ব্যতীত’ (গুনিয়াতুত ত্বালেবীন (মিসরী ছাপা) ১/৯০ পৃ.)।

শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেন, ‘হিজরী চতুর্থ শতকের আগ পর্যন্ত কোন মুসলিম নির্দিষ্টভাবে কোন একটি মাযহাবের অনুসারী ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ ১/২৬০ পৃ.)। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভাষায় নিন্দিত ৪র্থ শতাব্দী হিজরীতে ‘তাক্বলীদে শাখছী’ বা ইমামদের অন্ধ অনুকরণের বিদ‘আত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে (ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কে‘ঈন ২/১৪৫ পৃ.)। ফলে অখণ্ড মুসলিম মিল্লাত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীকায় বিভক্ত হ’তে শুরু করে। ইসলামের নামে চার মাযহাব মান্য করা ফরয (?) ঘোষণা করা হয়। অতঃপর তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে ও শী‘আ মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রে ৬৫৬ হিজরীতে বাগদাদের আব্বাসীয় খেলাফত ধ্বংস হয়। অতঃপর ৮০১ হিজরীতে মুসলিম ঐক্যের প্রতীক কা‘বাগৃহের চারপাশে চার মাযহাবের চার মুছাল্লা কায়েম হয় (‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ থিসিস ৮৯ পৃ.)। যা ১৩৪৩ হিজরী পর্যন্ত ৫৪২ বছর যাবৎ স্থায়ী ছিল। যারা এই অনৈক্যের বিরোধী ছিলেন এবং মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন, তারা ‘আহলেহাদীছ’ নামে কথিত হন। ভারত উপমহাদেশে বিরোধীরা তাদেরকে ‘লা-মাযহাবী’ ‘গায়ের মুক্বাল্লিদ’ ‘ওয়াহ্হাবী’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে দুর্নাম করে (এনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলাম, লণ্ডন ১/২৫৯ পৃ.)।

‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ ও অন্যান্য ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল, ‘তাক্বলীদে শাখছী’ বা অন্ধ ব্যক্তিপূজা। তাক্বলীদপন্থী ইসলামী দলগুলি কেবল ঐ সকল হাদীছ মান্য করে, যেগুলি তাদের ইমাম কর্তৃক স্বীকৃত বা মাযহাব কর্তৃক গৃহীত। মাযহাবী ফৎওয়াবিরোধী কোন ছহীহ হাদীছ তারা মানতে প্রস্তুত থাকেন না। 

পক্ষান্তরে আহলেহাদীছগণ সকল প্রকার মাযহাবী সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করেন। তারা যাবতীয় শিরক-বিদ‘আত ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সর্বদা আপোষহীন থাকেন।

‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ তাই প্রচলিত কোন মাযহাব বা মতবাদের নাম নয়; এটি একটি পথের নাম। এ পথ আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র পথ। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথ। এ পথের শেষ ঠিকানা হল জান্নাত। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের যাবতীয় হেদায়াত এ পথেই মওজুদ রয়েছে। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম ও সালাফে ছালেহীন সর্বদা এ পথেই দাওয়াত দিয়ে গেছেন। এ আন্দোলন তাই মুমিনের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র আন্দোলন। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ মানুষকে সর্বদা সে পথেই আহ্বান জানিয়ে থাকে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধন আহলেহাদীছ আন্দোলনের সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য।

পাঁচটি মূলনীতি :

১. কিতাব ও সুন্নাতের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা :

এর অর্থ- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত আদেশ ও নিষেধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। তাকে নিঃশর্তভাবে ও বিনা দ্বিধায় মেনে নেওয়া এবং সে আনুযায়ী আমল করা।

২. তাক্বলীদে শাখ্ছী বা অন্ধ ব্যক্তিপূজার অপনোদন :

‘তাক্বলীদ’ অর্থ- শারঈ বিষয়ে বিনা দলীলে কারো কোন কথা চোখ বুঁজে মেনে নেওয়া। ‘তাক্বলীদ’ দু’প্রকারের- জাতীয় তাক্বলীদ ও বিজাতীয় তাক্বলীদ। জাতীয় তাক্বলীদ বলতে ধর্মের নামে প্রচলিত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীকার অন্ধ অনুসরণ বুঝায়। আর বিজাতীয় তাক্বলীদ বলতে বৈষয়িক ব্যাপারের নামে প্রচলিত পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রভৃতি বিজাতীয় মতবাদের অন্ধ অনুসরণ বুঝায়।

৩. ইজতিহাদ বা শরী‘আত গবেষণার দুয়ার উন্মুক্তকরণ :

‘ইজতিহাদ’ অর্থ- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে যুগ-জিজ্ঞাসার জওয়াব দানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। এই অধিকার ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের হাদীছপন্থী যোগ্য ও মুত্তাক্বী আলেমের জন্য খোলা রাখা।

৪. সকল সমস্যায় ইসলামকেই একমাত্র সমাধান হিসাবে পরিগ্রহণ :

এর অর্থ- ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের সকল সমস্যায় ইসলামকেই একমাত্র সমাধান হিসাবে গ্রহণ করা।

৫. মুসলিম সংহতি দৃঢ়করণ :

এর অর্থ- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আদেশ ও নিষেধকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

উপরোক্ত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূলনীতিসমূহের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ চায় এমন একটি ইসলামী সমাজ, যেখানে থাকবে না প্রগতির নামে কোন বিজাতীয় মতবাদ; থাকবে না ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ।

চার দফা কর্মসূচী :

‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর চার দফা কর্মসূচী হল- তাবলীগ, তানযীম, তারবিয়াত ও তাজদীদে মিল্লাত। অর্থাৎ প্রচার, সংগঠন, প্রশিক্ষণ ও সমাজ সংস্কার। এর মধ্যে সমাজ সংস্কারই হল মুখ্য।

১. তাবলীগ বা প্রচার :

এ দফার করণীয় হল, (ক) ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ও সম্প্রীতির মাধ্যমে জনগণের নিকট সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। (খ) প্রতিদিন বাদ এশা মুছল্লীদের সম্মুখে অর্থসহ একটি করে হাদীছ শুনানো। (গ) প্রতিদিন বাদ ফজর মুছল্লীদের সম্মুখে সংগঠনের তাফসীর বা অন্যান্য গ্রন্থ থেকে পাঠ করা। (ঘ) সাপ্তাহিক তা‘লীমী বৈঠক ও পারিবারিক তা‘লীম। (ঙ) তাবলীগী সফর ও মাসিক ইজতেমা। (ছ) যেলা সম্মেলন ও বার্ষিক কেন্দ্রীয় তাবলীগী ইজতেমা। এতদ্ব্যতীত জুম‘আর খুৎবা, সুধী সমাবেশ, কর্মী সম্মেলন ও সংগঠনের প্রকাশনা সমূহ ব্যাপকভাবে প্রচার করা ইত্যাদি।

২. তানযীম বা সংগঠন :

(ক) কর্মীদের স্তর তিনটি : প্রাথমিক সদস্য, সাধারণ পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় পরিষদ সদস্য।

(খ) সাংগঠনিক স্তর পাঁচটি : শাখা, এলাকা, উপযেলা, যেলা ও কেন্দ্র। যে সকল মানুষ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের জীবন, পরিবার ও সমাজে যথার্থরূপে ইসলামী বিধান কায়েমে প্রস্তুত হন, তাদেরকে ‘ইমারত’-এর অধীনে সংঘবদ্ধ করা। কোন স্থানে কমপক্ষে ৩ জন ‘প্রাথমিক সদস্য’ থাকলে সেখানে একজনকে সভাপতি, একজনকে সাধারণ সম্পাদক ও একজনকে সদস্য করে একটি শাখা গঠন করা যাবে। যেলা না থাকলে উক্ত শাখা কেন্দ্র কর্তৃক সরাসরি অনুমোদিত হ’তে হবে।

৩. তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণ :

এ দফার করণীয় হল, (ক) প্রতিদিন নিয়মিতভাবে কুরআন, হাদীছ ও সাংগঠনিক বই-পত্রিকা অধ্যয়ন করা (খ)  সাপ্তাহিক তা‘লীমী বৈঠকে যোগদান করা (গ) প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণ করা (ঘ) নিয়মিতভাবে তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল ছালাত আদায় করা এবং সপ্তাহে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বা মাসে তিন দিন আইয়ামে বীয-এর নফল ছিয়াম পালন করা (ঙ) সুন্নাতী দাড়ি রাখা, ঢিলাঢালা তাক্বওয়ার লেবাস পরিধান করা ও বাড়ীতে ইসলামী পর্দা রক্ষা করা (চ) নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে কর্মীদের গড়ে তোলা এবং ধর্ম ও প্রগতির নামে প্রচলিত যাবতীয় কুসংস্কার ও জাহেলিয়াতের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জের মুকাবিলায় ইসলামকে বিজয়ী করার মত যোগ্য ও সচেতন কর্মী তৈরীর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. তাজদীদে মিল্লাত বা সমাজ সংস্কার :

এ দফার করণীয় হল, আল্লাহ প্রেরিত ‘অহি’ ভিত্তিক সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’ নীতির আলোকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। সেই সাথে সংগঠনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সংশোধনের ব্যবস্থা করা।

অতঃপর সমাজের আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে আমরা নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে চাই।-

১. শিক্ষা সংস্কার :

উক্ত লক্ষ্যে আমাদের কর্মসূচী হল,

  • (ক) দেশে প্রচলিত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্বিত করে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একক ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। সেই সাথে সরকারী ও বেসরকারী তথা কিণ্ডার গার্টেন, প্রি-ক্যাডেট, ও-লেভেল, এ-লেভেল ইত্যাদি নামে পুঁজিবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে বৈষম্যহীন ও সহজলভ্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
  • (খ) ছেলে ও মেয়েদের পৃথক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে উভয়ের জন্য উচ্চ শিক্ষা এবং পৃথক কর্মক্ষেত্র ও কর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করা।
  • (গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবতীয় দলাদলি ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ড নিষিদ্ধ করা এবং প্রয়োজনবোধে সেখানে বয়স, যোগ্যতা ও মেধাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
  • (ঘ) আক্বীদা বিনষ্টকারী সকল প্রকার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বর্জন করা এবং তদস্থলে ছহীহ আক্বীদা ও আমল ভিত্তিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি চালু করা।

২. অর্থনৈতিক সংস্কার : 

হালাল রূযী ইবাদত কবুলের অন্যতম পূর্বশর্ত। অথচ সূদ-ঘুষ, জুয়া-লটারী ইত্যাদির পুঁজিবাদী অর্থনীতি বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চালু রয়েছে। সেই সাথে যোগ হয়েছে দেশী ও বিদেশী সূদখোর এনজিও সমূহের অপতৎপরতা। যার ফলে দারিদ্র্য বিমোচনের নামে দারিদ্র্য স্থায়ী হচ্ছে। তাদের অনেকে সাধারণ জনগণের ঈমান ও নৈতিকতা হরণ করছে। যা আন্তর্জাতিক সূদীচক্র ও সাম্রাজ্যবাদীদের সুদূরপ্রসারী নীল নকশারই অংশ।

এক্ষণে অর্থনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে আমাদের  কর্মসূচী হল,

  • (ক) সকল প্রকারের হারাম উপার্জন হ’তে বিরত থাকা।
  • (খ) সর্বদা হালাল রূযী গ্রহণে সচেষ্ট থাকা।
  • (গ) যাবতীয় অলসতা, বিলাসিতা ও অপচয় পরিহার করা এবং ‘অল্পে তুষ্ট থাকার’ ইসলামী নীতির অনুশীলন করা।
  • (ঘ) নির্দিষ্ট ইমারত-এর অধীনে সুষ্ঠু পরিকল্পনা মোতাবেক ‘বায়তুল মালে’র সংগ্রহ ও বণ্টন ব্যবস্থা  নিশ্চিত করা।
  • (ঙ) সমাজকল্যাণমূলক ইসলামী প্রকল্পসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
  • (চ) অনৈসলামী অর্থব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা এবং সরকারের নিকট ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালুর জোর দাবী পেশ করা।

৩. নেতৃত্বের সংস্কার :

অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসৎ নেতৃত্ব আজ সমাজ জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। শান্তিপ্রিয় সৎ নেতৃত্ব সর্বত্র মুখ লুকাচ্ছে। এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য পূর্বে বর্ণিত শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক কারণ সমূহ ছাড়াও নিুোক্ত বিষয়গুলিকে আমরা মৌলিক কারণ হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি।-

  • (ক) সরকারী ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক পদ্ধতি এবং হরতাল, ধর্মঘট ও মিছিলের হিংসাত্মক প্রথা।
  • (খ) দল ও প্রার্থীভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা।
  • (গ) দলীয় প্রশাসন, দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র ও দীর্ঘসূত্রী বিচার ব্যবস্থা।
  • এক্ষণে নেতৃত্ব সংস্কারের লক্ষ্যে জাতির নিকটে আমাদের প্রস্তাবসমূহ নিম্নরূপ :
  • (ক) সর্বত্র দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন নীতি অনুসরণ করা এবং ‘ইমারত’ ও ‘শূরা’ পদ্ধতি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করা।
  • (খ) আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসাবে মেনে নেওয়া এবং তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ ‘অহি’ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে রাষ্ট্রীয় আইনের মূল ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করা।
  • (গ) স্বাধীন ও ইসলামী বিচার ব্যবস্থা চালু করা।


আমাদের দাওয়াত :

‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এদেশে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিজয় ও বাস্তবায়ন দেখতে চায়। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ইমারতের অধীনে পূর্ণ ইখলাছের সাথে ‘আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকারে’র কর্মসূচী নিয়ে জামা‘আতবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে চায়। অতএব কিতাব ও সুন্নাতের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে বিশ্বাসী সকল মুমিন ভাই-বোনকে আমরা এই মধ্যপন্থী কাফেলায় শামিল হয়ে জান ও মালের কুরবানী পেশ করার উদাত্ত আহ্বান জানাই!

মুসলিম ঐক্য :

‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ মানুষকে মানুষের রচিত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীকার বেড়াজাল হ’তে মুক্ত হয়ে সরাসরি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুসরণের আহ্বান জানায়। এ আন্দোলন সংকীর্ণ রাজনৈতিক দলাদলি, মাযহাবী ফের্কাবন্দী ও পীর-মুরীদীর ভাগাভাগি ভুলে গিয়ে নিঃশর্তভাবে কেবল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নির্দেশ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য কামনা করে।

অতএব আসুন! উক্ত মহতী লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র পতাকা তলে সমবেত হই এবং সার্বিক জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করি!