তাবলীগী ইজতেমা ২০১২ উপলক্ষে সাক্ষাৎকার : প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

[মাসিক আত-তাহরীক-এর সম্পাদক মন্ডলীর মাননীয় সভাপতি ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবে’র এই স্মৃতিচারণমূলক সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন আত-তাহরীক-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম ও আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব]

প্রশ্ন-১ : ২২তম বার্ষিকী ‘তাবলীগী ইজতেমা ২০১২’ উপলক্ষ্যে মাসিক আত-তাহরীক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ২২ বছর চলে আসা এই তাবলীগী ইজতেমার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু জানতে চাই?

উত্তর : এই শুভ উদ্যোগের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ রইল। মূলতঃ আহলেহাদীছ-এর ঘুমন্ত দাওয়াত রাজধানীবাসীর নিকট তুলে ধরাই ছিল এই সম্মেলনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়তঃ আহলেহাদীছ ছাত্র ও তরুণরা অন্যান্য বস্ত্তবাদী দলে এবং কথিত ইসলামপন্থী দল সমূহে প্রবেশ করে তাদের বৈশিষ্ট্যগত স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে ফেলতে বসেছিল। আমরা তাদেরকে সেই আদর্শিক গোলামী ও বৈশিষ্ট্যের বিলুপ্তি থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম। চতুর্থতঃ সকল দল ও মতের ছাত্র ও জনগণের নিকট ইসলামের বিশুদ্ধ রূপ তুলে ধরাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু যত ভাল চিন্তা নিয়েই কাজ করিনা কেন, ভালকে সবাই ভাল নযরে দেখেন না। তার প্রমাণ পেলাম কাজে নামার পর। কিন্তু আমাদের দৃঢ় আত্মশক্তির কাছে পর্বতপ্রমাণ সেই বাধা কোন কাজে আসেনি আল্লাহর বিশেষ রহমতে।

জাতীয় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন আমাদের পুঁজি ছিল মাত্র সাড়ে ৬ টাকা। ত্রিশ হাযার টাকার বাজেট ১০ দিনের মাথায় ২৯,৬৪৮/= আদায় হয়ে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাননীয় জমঈয়ত সভাপতিকে বংশাল মসজিদে যখন আমি এই খবর দেই, তখন তিনি স্তম্ভিত হয়ে আমার দিকে একদৃষ্টে কেবল তাকিয়ে ছিলেন। তাঁর পরামর্শ ছিল জাতীয় সম্মেলন আদৌ না করার। আর করলে বংশাল মহল্লার মধ্যে করার।

ঢাকা যেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে ৫ই এপ্রিল’৮০-তে অনুষ্ঠিত ১ম দিনের জাতীয় সম্মেলন শেষে ছেলেরা আনন্দে ঢাকার রাজপথে ট্রাক মিছিল করে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ যিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিয়ে মুখর করে তুলেছিল। বায়তুল মুকাররম মসজিদ ঐ দু’দিন ‘আমীনের’ আওয়াযে গুঞ্জরিত ছিল। মসজিদের জনৈক ইমাম নিজের লোকদের মধ্যে বলে ফেলেন, ‘এত লা-মাযহাবী হঠাৎ কোত্থেকে এল’? অনতিদূরে মাগরিবের সুন্নাতরত সাতক্ষীরা ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র জনৈক কর্মী সালাম ফিরিয়ে সোজা গিয়ে ইমামকে চার্জ করল, আপনি একথা কেন বললেন? ছোট্ট ছেলের সাহস দেখে ইমাম ছাহেব প্রমাদ গুণলেন।

২য় দিন সেমিনারে যখন আমি ‘তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ’ শীর্ষক স্বরচিত প্রবন্ধটি পাঠ করি, তখন রাষ্ট্রদূত ফুওয়াদ আব্দুল হামীদ আল-খাত্বীব এক পর্যায়ে উঠে এসে আমার পিঠ চাপড়ে দেন এবং তাঁর ভাষণে উচ্চ প্রশংসা করেন এই বলে যে, বাংলাদেশে এসে ‘তওহীদে’র উপরে কোন সেমিনার আমার নিকটে এটাই প্রথম। সভাপতির ভাষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস প্রফেসর ডঃ সিরাজুল হক বলেন, আমি জীবনে বহু সেমিনার করেছি। কিন্তু আজই প্রথম একটি সেমিনার দেখলাম, যেখানে কোন হাত তালি পেলাম না। কেবল ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ছাড়া। তিনি আমাদের জন্য প্রাণখোলা দো‘আ করলেন।  উল্লেখ্য যে, উনি ইমাম ইবনে তায়মিয়াহর উপরে লন্ডন থেকে ‘ডক্টরেট’ করেছেন। মাওলানা মুন্তাছির আহমাদ রহমানী প্রবন্ধটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত সকলে সোৎসাহে তা সমর্থন করেন।

পরিশেষে বলব, কোনরূপ পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ‘যুবসংঘে’র উদ্যোগে রাজধানীতে সর্বপ্রথম আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী এই বিরাট আহলেহাদীছ সম্মেলন ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের আহলেহাদীছ জনগণের মধ্যে নবজীবনের সঞ্চার করে। সকলের মুখে মুখে এ সম্মেলনের আলোচনা চলতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে সর্বত্র ‘যুবসংঘে’র শাখা বৃদ্ধি পেতে থাকে দ্রুত গতিতে। ফালিল্লাহিল হামদ

প্রশ্ন-২ : রাজধানী ঢাকার পরিবর্তে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীকে ইজতেমাস্থল হিসাবে বেছে নেয়ার পিছনে বিশেষ কোন তাৎপর্য আছে কী অথবা আগামীতে স্থান পরিবর্তনের কোন পরিকল্পনা আছে কী?

উত্তর : এর পিছনে কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। আল্লাহ যেন আমাদেরকে এখানে ঠেলে নিয়ে এসেছিলেন। ভেবেছিলাম ঢাকায় কেন্দ্র থাকবে এবং প্রতিবছর ঢাকাতে নিয়মিতভাবে জাতীয় সম্মেলন করব। কিন্তু ভাগ্যের লিখন খন্ডাবে কে? সম্মেলনের পরের দিন বংশাল-মালিবাগ জামে মসজিদের পেশ ইমাম বন্ধুবর মাওলানা আব্দুর রশীদ মন্তব্য করলেন, ‘এবার আপনাকে ঢাকা থেকে তাড়াবে’। আমি হতবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন কি অপরাধ? বললেন, এতদিন যাবত নেতারা যা পারেননি, আপনারা তাই করলেন। এরপরেও আপনি ঢাকায় থাকতে পারবেন? এতবড় সাফল্যের পরেও ‘যুবসংঘ’কে ধন্যবাদ দিয়ে নেতার মুখে একটি বাক্যও কি শুনেছিলেন’? আমার তখন ঘোর কাটলো। গত বছর ঢাকার একটি হোটেলে ভাই আব্দুর রশীদ দেখা করতে এলে দু’জনে বসে পুরানো দিনের সেই স্মৃতিচারণ করছিলাম। তাঁর ছেলে নূরুদ্দীন বর্তমানে ঢাকা যেলা ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কর্মপরিষদ সদস্য।

অবশেষে মাওলানা আব্দুর রশীদের কথাই সত্যে পরিণত হয়েছিল। আমি ঢাকা থেকে বিতাড়িত হলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলাম। কেন্দ্রীয় অফিস তখনও ঢাকায় থাকল শামসুদ্দীন ভাইয়ের যিম্মায়। কিন্তু অবশেষে তাও গুটিয়ে আনতে হ’ল। ১৯৮০ সালের শেষদিকে ঢাকা থেকে এসেছি। আর কেন্দ্রীয় অফিস রাজশাহীর রাণীবাজার মাদরাসা মার্কেটে স্থানান্তরিত হয়েছে ১৯৮৪ সালের ৩০শে মে তারিখে। নতুন স্থানে নতুনভাবে সবকিছু গড়ে তুলতে সময় লাগল। যেহেতু তখন যুবসংঘের বিরুদ্ধে জমঈয়ত নেতৃবৃন্দের অবস্থান ছিল মারমুখী এবং আমি রাজশাহীতে হিজরত করলাম, ফলে ঢাকাতে আর জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

অবশেষে ১৯৯১ সালের ২৫শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে নওদাপাড়াতে দীর্ঘ এগারো বছর পরে ২য় জাতীয় সম্মেলন ও তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকে নিয়মিতভাবে এখানে বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, সংগঠনের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় এবং কর্মী সম্মেলনের পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট আহলেহাদীছের দাওয়াত পেশ করার উদ্দেশ্যে এখন থেকে ‘তাবলীগী ইজতেমা’ নামকরণ করা হয়।

রাজশাহীকে ইজতেমাস্থল হিসাবে বেছে নেবার পিছনে  বিশেষ কোন উদ্দেশ্য বা তাৎপর্য ছিল না। এখানে আমরা অবস্থান করি, কেন্দ্র এখানে, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ এখানে, মূলতঃ সেকারণেই এখানে ইজতেমাস্থল হয়েছে। যদি কখনো এখান থেকে সরে যেতে হয়, তখন ইজতেমাস্থল পরিবর্তন হবে কি-না, সেটা পরিস্থিতির আলোকে সংগঠনের মজলিসে শূরা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে রাজশাহী দেশের বৃহত্তর আহলেহাদীছ অধ্যুষিত যেলা হিসাবে এখানে সাধারণ জনসমর্থন আমাদের বেশী থাকাটাই স্বাভাবিক। যদিও সচেতন মানুষের সংখ্যা সর্বত্র নিতান্তই কম।

প্রশ্ন- ৩ : ১ম তাবলীগী ইজতেমা আর আজকের তাবলীগী ইজতেমার মধ্যে পরিধিগত এক বিরাট ফারাক পরিলক্ষিত হয়। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

উত্তর : ১ম জাতীয় সম্মেলন আর আজকের তাবলীগী ইজতেমার মধ্যে পরিধিগত বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের তাবলীগী ইজতেমায় সাতক্ষীরা থেকে আগত ৪৮টি বাস ও অন্যান্য যেলার রিজার্ভ বাসসমূহের বিরাট বহর দেখে রাজশাহী থেকে ঢাকার ফ্লাইটে আমার সামনের সীটের দু’জন যাত্রী আপোষে বলাবলি করছিলেন, রাজশাহীতে এতবড় সম্মেলন কিসের? জবাবে অন্যজন বললেন, এদেশে হানাফী ও আহলেহাদীছ দু’টি মাযহাবের লোক আছে। টঙ্গীতে হানাফী মাযহাবের তাবলীগী ইজতেমা হয়। আর রাজশাহীতে আহলেহাদীছদের তাবলীগী ইজতেমা হয়। এটা আহলেহাদীছদের বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা হচ্ছে।

হ্যাঁ, প্রতি বছর সত্যসন্ধানী দ্বীনদার মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তারা ছহীহ-শুদ্ধ ইসলামের খোঁজে আমাদের ইজতেমাতে আসে। ২০০৫ সালে আমাদের উপরে মিথ্যা অপবাদ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানোর ফলে মানুষের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আপোষহীনভাবে হক প্রচারের বরকতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হচ্ছে। আল্লাহর হুকুমে আল্লাহর বিনয়ী বান্দাদের অন্তর সমূহ ক্রমেই এদিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে প্রতি বছর তাবলীগী ইজতেমার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ সঠিক ঈমানী চেতনা ফিরে পাচ্ছে। তাওহীদ ও শিরক, সুন্নাত ও বিদ‘আতের পার্থক্য বুঝতে পারছে। নিজেদের জীবনাচরণ সংশোধন করে নিচ্ছে। যদি এভাবে আল্লাহর রহমত অব্যাহত থাকে এবং আমাদের দুর্বলতাগুলি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি, তাহ’লে ইনশাআল্লাহ আমাদের তাবলীগী ইজতেমা দেশের ঈমানদারগণের সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হবে। যা আমাদের কাঙ্খিত ইসলামী সমাজবিপ্লবে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখবে ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন-৪ : বাংলাদেশের ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থাকে সংস্কার করার জন্য এই তাবলীগী ইজতেমার আবেদন কতটুকু বলে আপনার মনে হয়?

উত্তর : সমাজব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সমাজের মানুষের সংস্কার আগে যরূরী। আর মানুষের সংস্কারের জন্য আগে তার বিশ্বাসের জগতে সংস্কার আনা যরূরী। মানুষ যদি দুনিয়া কেন্দ্রিক চিন্তাধারায় অভ্যস্ত হয়, তাহ’লে সে ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে কিছুই করবে না। ঠিক একটা পশুর মত সারা জীবন কেবল পেট নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। হীন ব্যক্তিগত স্বার্থে এমন কোন অপকর্ম নেই, যা সে করবে না। পক্ষান্তরে মানুষ যদি আখেরাত কেন্দ্রিক চিন্তাধারায় অভ্যস্ত হয়, তাহ’লে আখেরাতের স্বার্থের বাইরে সে কিছুই করবে না। পরকালীন মুক্তির জন্য সে মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবে। আখেরাতে মুক্তির স্বার্থে দুনিয়াতে যেকোন কল্যাণকর কাজে সে হাসিমুখে এগিয়ে যাবে। কিন্তু আখেরাতে মুক্তি কোন পথে, সেটা অধিকাংশ মানুষ জানে না। বস্ত্তবাদী সমাজনেতাদের যুলুম ও প্রতারণা এবং ধর্মনেতাদের অজ্ঞতা ও অনুদারতা মানুষকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এদু’য়ের মাঝে আমরা মানুষকে ছিরাতে মুস্তাকীমের দিকে ডাকছি। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথে আহবান জানাচ্ছি। বাতিলপন্থীরা এতে ক্ষিপ্ত হচ্ছে। তাদের মুখোশ খুলে পড়ছে। হকপন্থী মানুষের সামনে থেকে অন্ধকারের গাঢ় মেঘ ক্রমেই সরে যাচ্ছে। ঘুণে ধরা সমাজ ক্রমেই পরিচ্ছন্ন হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের তাবলীগী ইজতেমার আবেদন ও অবদান দু’টিই অনন্য। ফালিল্লাহিল হাম্দ

প্রশ্ন- ৫ : বাংলাদেশে আহলেহাদীছদের সবচেয়ে বড় জমায়েত রাজশাহীর এই তাবলীগী ইজতেমা। ছহীহ আক্বীদা ও আমলসম্পন্ন মানুষের এই বিশাল সমাবেশ কি আপনাকে বিশেষ কোন স্বপ্ন দেখায়? সত্যের খোঁজে আসা এসব মানুষের অন্তঃতাড়নাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

উত্তর : হকপন্থীদের এই বিশাল সমাবেশ আমাকে অবশ্যই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখায়। আমি স্বপ্ন দেখি সার্বিক সমাজবিপ্লবের। স্বপ্ন দেখি সমাজ জীবনের সর্বত্র আল্লাহর সাবভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার। স্বপ্ন দেখি শিরকবিমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর নিখাদ বাস্তবতার। সত্যের খোঁজে আসা মানুষগুলির হৃদয়ের তাড়না যেদিন বৃহত্তর সমাজে প্রতিবিম্বিত হবে, সেদিন মানুষ শয়তানের দাসত্বের শৃংখল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে এবং সার্বিক জীবনে কেবল আল্লাহর দাসত্ব বরণ করে সত্যিকারের সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের স্বচ্ছ আলোকে জীবন গড়ার এই অন্তঃতাড়নাকে আমি আগামী দিনে সমাজ বিপ্লবের বাস্তব তাড়না হিসাবে মূল্যায়ন করি।

প্রশ্ন- ৬ : হক-এর দাওয়াত নিয়ে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তাকে আপনি আগামীতে কোথায় দেখতে চান?

উত্তর : ‘আহলেহাদীছ’-কে যারা একটি Sect বা সম্প্রদায় মনে করেন, তারা একে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী গন্ডীতে আবদ্ধ করে ফেলেছিলেন। ফলে বিশেষ কিছু লোকের মধ্যেই এর আবেদন সীমাবদ্ধ ছিল। আমরা এটাকে ‘আন্দোলনে’ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ফলে জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ গন্ডী ছেড়ে এ দাওয়াত এখন সর্বমহলে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের উদারনৈতিক দাওয়াতের ফলে মাযহাবী ভাইয়েরা তো বটেই অনেক অমুসলিম ভাইও সরাসরি ‘আহলেহাদীছ’ হচ্ছেন। আগামীতে এ ‘আন্দোলন’ আরো বলিষ্ঠভাবে সার্বিক সমাজ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিক, আমি সেটাই কামনা করি।

প্রশ্ন- ৭ : ইতিমধ্যে মাসিক আত-তাহরীক তার প্রকাশনার ১৫তম বর্ষে পদার্পণ করছে। আপনার অনুভূতি কী?

উত্তর : আত-তাহরীক এক যুগ পেরিয়ে ১৫তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এর আনন্দানুভূতি তুলনাহীন। আমি এটাকে ছাদাক্বায়ে জারিয়া মনে করি। আমি এবং আমার সহযোগীরা কবরে গিয়েও এর নেকী পেতে থাকব, যদি নাকি আত-তাহরীক বর্তমানের ন্যায় আগামীতেও দ্বীনে হক-এর পথে তার আপোষহীন আদর্শিক ভূমিকা অব্যাহত রাখে। আমি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর ২০০৬ সালে আত-তাহরীক-এর রূহ কবয করার যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সে কথাগুলি ভুলে না যাওয়ার জন্য আমি আমার পরবর্তীদের হুঁশিয়ার করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন- ৮ : দীর্ঘ ১৫ বছরে একটি সমাজ সংস্কারমূলক পত্রিকা হিসাবে আত-তাহরীক বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক অঙ্গনে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর : আমি তৃপ্তিবোধ করি যে, আত-তাহরীক এখন এদেশের হকপিয়াসী মানুষের মাঝে আলোকবর্তিকা স্বরূপ কাজ করে যাচ্ছে। কোন বিষয়ে আত-তাহরীক কি বলে, সেদিকেই মানুষ তাকিয়ে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ, এদেশের সমাজ জীবনে আত-তাহরীক ঠিক কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা হয়ত আমরা এখনই অনুমান করতে পারব না। তবে এর মাধ্যমে সমাজের উপরতলা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যে এক ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে তা আমরা দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি। এজন্য অনেকেই আত-তাহরীককে একটি ‘নীরব বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আগামীতেও যেন আত-তাহরীক এই ভূমিকা অব্যাহত রাখতে পারে এবং অধিকতর সক্ষমতা ও উজ্জ্বলতা নিয়ে সমাজ সংস্কারে যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য সকলের আন্তরিক দো‘আ ও আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করছি। 

প্রশ্ন- ৯ : তাবলীগী ইজতেমা ২০১২ উপলক্ষ্যে পাঠকের সমীপে আপনার আহবান কী?

উত্তর : তাবলীগী ইজতেমা’১২ উপলক্ষে পাঠক সমীপে আমাদের আহবান, আবারও যদি ২০০৫-এর ২২ ফেব্রুয়ারীর তিক্ত অভিজ্ঞতা ফিরে আসে, তথাপি আপনারা হাল ছাড়বেন না। যেকোন ত্যাগের বিনিময়ে আপনারা আহলেহাদীছ আন্দোলনের দাওয়াতকে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিবেন ও দাওয়াতকে বিপ্লবে পরিণত করবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন-আমীন!