১. মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী! মূর্তিটা নামিয়ে দিন

ভেবেছিলাম প্রতিবাদের শুরুতেই মূর্তিটি নামিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন দেখছি এ্যাটর্নী জেনারেল সহ বড় বড় নাস্তিক্যবাদী নেতারা একযোগে এই দাবীকে স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী বলে চিৎকার করছেন। আমরা বিস্মিত হই, মূর্তি পূজারীদের দেশ হিন্দুস্থানের সুপ্রীম কোর্টে যে মূর্তির স্থান হ’ল না, সে মূর্তি কিভাবে মূর্তিভাঙ্গা মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টে স্থান পেল? কে এটা উঠালো? জাতীয় সংসদে কবে এ প্রস্তাব পাশ হ’ল? তাহ’লে কি এদেশের সরকার নাস্তিকদের সরকার? মুখে গণতন্ত্রের ফেনা তুলে অধিকাংশ মুসলমান ভোটারের হৃদয়তন্ত্রীতে রক্ত ঝরিয়ে এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত কে নিল? এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐসব নাস্তিকদের কত পার্সেন্ট অবদান আছে, তা জানার অধিকার আছে সচেতন দেশবাসীর। আজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সবুজ চত্বরগুলি নানা মূর্তি ও ভাস্কর্য দিয়ে ভরে দেওয়া হচ্ছে। মসজিদের নগরী বলে প্রসিদ্ধ রাজধানী ঢাকাকেও মূর্তির নগরীতে পরিণত করার পাঁয়তারা চলছে। আর এগুলিকে আইন সম্মত করার জন্যেই অতি সঙ্গোপনে সুপ্রীম কোর্টের সামনে নারীমূর্তি খাড়া করা হয়েছে। যিনিই করুন, যার ইঙ্গিতেই হৌক, দায়ী হবেন মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী। যিনি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেন ও আল্লাহর নিকট দৈনিক মাথা নত করেন। অতএব তাওহীদের এই দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সামনে থেকে শিরকের এই মূর্তিকে হটানোর দায়িত্ব তাঁরই।  

রোমান যুগের কথিত ন্যায়বিচারের প্রতীক মহিলা বিচারপতি ‘থেমিস’ (Themis)-এর আদলে তৈরী এই ভাস্কর্য সুপ্রীম কোর্টের মূল ভবনের সামনে লিলি ফোয়ারায় গত ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে স্থাপন করা হয়। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপামর ইসলামী জনগণের আক্বীদা-বিশ্বাসকে তোয়াক্কা না করে উক্ত দেবী মূর্তির পক্ষে সাফাই গেয়ে গত ৬ই ফেব্রুয়ারী’১৭ বলেছেন, ‘এটা তো মূর্তি নয়, ভাস্কর্য (Sculpture)। আর এখানে দেখানো হয়েছে তিনটা জিনিস। একটা হলো দাঁড়িপাল্লা, ন্যায়বিচারের একটা সূচক। আর ডান হাতে একটা তলোয়ার। যা দন্ড বা শাস্তির সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তৃতীয়তঃ চোখটা বাঁধা। অর্থাৎ একদম নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিচারের নিরপেক্ষতা তুলে ধরা হয় এই স্কাল্পচার দিয়েই’। 

উদ্ভট যুক্তি আর কাকে বলে? তিনি জাজ্বল্যমান একটা নারী মূর্তিকে ভাস্কর্য বলে আইন সিদ্ধ করতে চাচ্ছেন। দিল্লী হাইকোর্ট সহ উপমহাদেশের কোন আদালতেই এরূপ কোন মূর্তি নেই। তাহ’লে কিসের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা একাজ করলেন? হিন্দু নেতা রাজা রামমোহন রায়, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকলেই মূর্তিপূজার বিরোধী ছিলেন। তাহ’লে মুসলিম নামধারী হুতোম পেঁচাগুলো, যারা সুযোগ পেলেই ইসলামের বিরুদ্ধে ‘হুম’ করে ওঠেন, এরা কোন জাতের? এরা কবরে যাবে, না শ্মশানে যাবে? হাতে গোনা এই কথিত বিশিষ্ট নাগরিকদের এতটুকু অন্তত জানা উচিত ছিল যে, এটি ১৭ কোটি মুসলমানের দেশ। অতএব জনগণের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙার আগেই মূর্তি হটান।

১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকার্ট স্থাপিত হয়। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে ছিল দাঁড়িপাল্লা। বিগত ৬৮ বছরে কেউ এ বিষয়ে কিছু বলেনি। এতদিন পর হঠাৎ করে ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লার স্থানে গ্রীক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে কারা কোন ন্যায়বিচার কায়েম করতে চাচ্ছেন, সেটা জনগণের বোধগম্য নয়।

বলা হয়ে থাকে যে, বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত আইন শাস্ত্রের গোড়াপত্তন হয় রোমান যুগে। বাংলাদেশেও আইন শাস্ত্রে রোমান আইন পড়ানো হয়ে থাকে। অথচ ইসলামী আইনের কল্যাণকারিতা সমূহ তাঁদের চোখে পড়ে না। দেশের আদালতগুলি চলছে মূলতঃ  রোমান আইনের আলোকে। অথচ সেটি হওয়া উচিত ছিল কুরআনী আইনের আলোকে। দুর্ভাগ্য আমরা স্বাধীন হয়েছি কেবল ভৌগলিক মানচিত্রে। কিন্তু রয়ে গেছি আগের মত গোলামী মানসিকতার চক্রে। ভোটের মৌসুমে শুনতে পাই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন হবে না, মদীনার সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে। অথচ ক্ষমতায় গিয়ে হয় তার উল্টা। এভাবে ইসলামী জনগণের ভোট নিয়ে যারাই সরকারে যাচ্ছেন, তারাই ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। অবশ্যই এর অবসান হওয়া উচিত। আমাদের কথা ও কর্ম সর্বদা এক হওয়া উচিত।