রামাযান ও বর্ষবরণ

আল্লাহ বলেন, ‘রামাযান হ’ল সেই মাস, যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। যা মানুষের জন্য পথ প্রদর্শক ও সুপথের স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। সত্য-মিথ্যার মানদণ্ড পবিত্র কুরআন আমাদের সামনে রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সুন্নাহ। যিনি ছিলেন ‘মানুষের মধ্যে পার্থক্যকারী মানদণ্ড’ (বুঃ মিশকাত হা/১৪৪)। তিনি বলেন আল্লাহ বলেছেন, আদম সন্তান যামানাকে গালি দেয়। অথচ আমি যামানার সৃষ্টিকর্তা। আমার হাতেই সকল ক্ষমতা। আমিই রাত্রি ও দিনের বিবর্তন ঘটাই’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/২২)। নবীর শিক্ষায় দিন-রাত, মাস-বছর সবই আল্লাহ্র সৃষ্টি। সকল  মাস ও সময় স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে দীপ্যমান। সেখানে কোন মাস ও বর্ষকে বরণ ও বর্জনের সুযোগ নেই। প্রতিটি সূর্যোদয় নতুন দিনের বারতা নিয়ে আসে। ঘুমজাগা মানুষ আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করে নতুনের আশায় বুক বেঁধে নতুন দিনের সূচনা করে। সেখানে ঘটা করে বর্ষবরণের স্থান কোথায়? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, এসো হে বৈশাখ... মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জ্বরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’। ক্ষুৎ-পিপাসায় কাতর পূর্ববঙ্গের হাড্ডিসার ৯০ শতাংশ মুসলিম কৃষক প্রজা বোশেখের রুদ্র তমাটে আকাশের নীচে কাঠফাটা রোদে পুড়ে খাক হয়ে জমিদারের খাজনা পরিশোধ করে। কিন্তু তাতে পদ্মা নদীর পাড়ে মন মাতানো বায়ু হিল্লোলে আরাম কেদারায় বসা কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠির জমিদারের কি যায়-আসে? বৈশাখের প্রতি আহ্বান খাজনা পাওয়ার আশায়। কিন্তু রামাযানের প্রতি আহ্বান নেই কেন? যা মুসলিমদের ঘরে ঘরে পরকালীন মুক্তির বারতা নিয়ে আসে। শোষণে জর্জরিত মুসলিম প্রজা সাধারণ, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, যাদের সাহারী-ইফতারের সংস্থান নেই, তাদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে কেন তিনি বললেন না, এসো হে রামাযান! এমনকি বৈশাখে যারা রোদে পুড়ে ঘাম ঝরিয়ে খাজনা পরিশোধ করে, তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে তিনি নিজে কি কখনো অগ্নিস্নানে শুচি হয়েছেন? অথচ কে না জানে যে, বৈশাখের কোন ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা আছে জমিদারের ও তার লাঠিয়াল বাহিনীর। নিজেকে আড়াল করে বৈশাখকে সামনে এনে এই কবিতা ইংরেজদের পদলেহী জমিদারদের নিত্যদিনের শোষণ ও যুলুমের প্রতিচ্ছবি নয় কি?         

বস্তুতঃ পহেলা বৈশাখ হিন্দু বা মুসলিম কোন বাঙালীরই নববর্ষ নয়। এটি এদেশের সংস্কৃতিরও অংশ নয়। কেননা মানুষের ভিতরকার অনুশীলিত কৃষ্টির বাহ্যিক পরিশীলিত রূপকে বলা হয় ‘সংস্কৃতি’। যা মানুষের সার্বিক জীবনাচারকে শামিল করে। অথচ এদেশের কোন হিন্দু বা মুসলিমের জীবনাচারে পহেলা বৈশাখের আলাদা কোন গুরুত্ব ছিল না সম্রাট আকবরের আমলে ৫ই নভেম্বর ১৫৫৬ থেকে ফসলী সন চালুর পর থেকে খাজনা দেওয়া ও হালখাতা করা ছাড়া।

মূলতঃ ‘ছায়ানট’ নামক সংগঠনটি ঢাকার রমনা বটমূলে বরং অশ্বত্থমূলে ১৯৬৭ সালে প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে।  যা কেবল গান-বাজনার অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ১৯৮৬ সালে ‘চারুপীঠ’ নামের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথম পহেলা বৈশাখে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ করে। পরের বছর ঢাবির চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পহেলা বৈশাখে বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল বের করা হয়। তখন নাম ছিল ‘নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা’। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে ‘নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম পাল্টিয়ে ‘নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৩ সালে ‘বাংলা ১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, হুতোম পেঁচা, ঘোড়া ও বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। সেই সঙ্গে নাচ-গান, মুখে কালি মেখে হনুমান সাজা, ঢোল বাজানো, রং ছিটানো, বাসন্তী শাড়ী পরে পরপুরুষের সামনে নারীদের অঙ্গ ঢলানো, সাপ ও কুমিরের বৃহদায়তন মূর্তি ও মুখোশ বহন ইত্যাদি। এর সাথে শুরু হ’ল ইলিশ-পান্তা খাওয়া। যা কোন বিনোদন নয় বা সংস্কৃতি নয়। বরং স্রেফ প্রবৃত্তি পরায়ণতা। যার মধ্যে মানুষের সুকুমার বৃত্তির কোন প্রকাশ নেই। অথচ ইসলামী সংস্কৃতিতে সর্বদা মানুষের সুকুমার বৃত্তির প্রকাশ ঘটে থাকে।

জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ সালের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। প্রশ্ন হ’ল অগণিত শিল্প-সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্যের এই দেশে মাত্র কয়েক বছর পূর্বের এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কেমন করে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে গেল? পহেলা বৈশাখে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কিভাবে বাঙালীর ঐতিহ্য হ’ল? অথচ ব্রিটিশপূর্ব যুগেও ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র কোন অস্তিত্ব ছিল না।

একটি জাতীয় দৈনিকের ১লা বৈশাখ সংখ্যায় বাংলাদেশের কথিত সংস্কৃতিসেবীদের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তির ‘সংস্কৃতির মোড় ফেরা ও সংস্কৃতির বদলে যাওয়া’ শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধে বাঙালা ভাষার অভিধান (কলিকাতা ১৯৮৮) এবং অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারীর দু’টি সংজ্ঞার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, প্রথম সংজ্ঞাটির প্রেক্ষিত এই উপমহাদেশ। বিশেষ করে বাঙালী সমাজ। যেখানে হৃদয় ও আত্মা কথা দু’টি আছে। দ্বিতীয় সংজ্ঞাটির প্রেক্ষিত পশ্চিমা সমাজ। যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্কৃতিকে সভ্যতার একটি অংশ হিসাবে দেখানো হয়েছে। অতঃপর তিনি দেশীয় ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির রূপান্তরের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেছেন এবং শেষে গিয়ে বলেছেন, সংস্কৃতি যেসব মূল্যবোধ এক সময় শিখাতো সেগুলো এখন ক্রমশঃ বিলীয়মান। গত ৬০/৭০ বছর আগে বাঙালী মুসলমান যে সংস্কৃতির চর্চা করত, তা এখন পরিত্যক্ত। আগামী ৩০/৪০ বছর পর ভিন দেশের কেউ এদেশে এলে তিনি যে সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবেন তার চিত্রটা কি হবে কে জানে?’ আরেকজন অতি প্রসিদ্ধ সংস্কৃতি সংগঠক ‘সংস্কৃতি চর্চা থেকে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে’ শিরোনামে লিখেছেন, ১৯৫০-৬০-এর দশকে বাঙালীর সাংস্কৃতিক জাগরণের নেপথ্যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, পরমতসহিষ্ণুতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার বড় ভূমিকা ছিল। তারই পরম্পরায় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বপ্ন ছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী জাতীয়তাবাদের। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি ছিল ৭২-এর সংবিধান। অথচ সেখানে ফেরার কথা কোন সরকারই মুখে আনেনা’।

প্রশ্ন হ’ল, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা’ বলতে তিনি কি বুঝাতে চান? যদি এর দ্বারা তিনি অনৈসলামিক চেতনা বুঝাতে চান, তবে সেটি হবে তার অবাস্তব দাবী। অতঃপর ৭২-এর সংবিধান কারা রচনা করেছিল? সেখানে লিখিত চারটি মূলনীতি কি ভারতের চাপিয়ে দেওয়া ছিল না? আজও ভারতের সংবিধানে ঐ চারটি মূলনীতি রয়েছে। কিন্তু সেদেশে একজন মুসলিমের জীবন একটি গরুর জীবনের চাইতেও মূল্যহীন। সেদেশের হাইকোর্ট একজন মুসলিম নারীর হিজাব পরিধানের ধর্মীয় অধিকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়। সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংসের হোতাদের বেকসুর খালাস দেয় এবং সে স্থানে হিন্দু মন্দির স্থাপনের অনুমতি দেয়। যেদেশে সংখ্যালঘুদের জান-মাল ও ইয্যতের কোন মূল্য নেই, সেটাই কি তাহ’লে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তব উদাহরণ? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে তারা কি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র নামে হিন্দুত্ববাদী ভারতের কদর্য সাম্প্রদায়িকতা আমদানী করতে চান? জানা আবশ্যক যে, বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে, সেটি কেবল ইসলামেরই বরকতে। রাজনৈতিক নেতারাই বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেন তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে।  

তিনি লিখেছেন, সংস্কৃতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। অতএব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে আলোকিত করতে হবে। এগুলি ছাড়া দেশ ও জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার’। তাঁর কথাতেই বুঝা যাচ্ছে, ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার মধ্যেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। তাদের জানা উচিত যে, এদেশের মানুষ জীবন দেবে, কিন্তু স্বাধীনতা বিকিয়ে দিবে না। আর ইসলাম বিকিয়ে দেওয়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠেনা।

এবারে ১২ই রামাযানে ১লা বৈশাখ এসেছে। কিন্তু বরণবাদীদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে লোকজন তেমন না থাকায় এইসব সংস্কৃতি সংগঠকরা বড়ই হতাশ হয়েছেন। তারা হিসাব মিলাতে পারছেন না, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তাদের কথিত ‘অসাম্প্রদায়িক’ চেতনার এই বেহাল-দশা কেন? দেশের নেতৃস্থানীয় দু’জন সংস্কৃতি সংগঠকের বক্তব্যে যে হতাশার সুর ফুটে উঠেছে, তাতে তাদের চাপিয়ে দেওয়া চেতনা যে এদেশের মানুষ গ্রহণ করেনি, সেটি ভালোভাবে স্পষ্ট হয়ে গেছে।

বস্তুতঃ বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা এদেশের সাধারণ মানুষের চেতনা থেকে বহু দূরে। তাদের এ সত্যটি অস্বীকার করা উচিত হয়নি যে, ধর্মবিশ্বাসই মানুষের চেতনাকে শাণিত ও চালিত করে। মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল স্ব স্ব ধর্মীয় চেতনা অক্ষুণœ রেখেই। যালেমের বিরুদ্ধে মযলূমের চেতনাই ছিল সেখানে মুখ্য। আর ইসলামী চেতনা হ’ল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদের চেতনা- হাত দিয়ে, কথা দিয়ে বা অন্তর দিয়ে ঘৃণার মাধ্যমে। ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে নিরীহ-নিরস্ত্র জনগণের উপর তৎকালীন পাকিস্তানী সেনাদের সশস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জিহাদী চেতনাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। কোন মুসলমানকে বা কোন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানকে তাদের স্ব স্ব ধর্মবিশ্বাস পরিত্যাগ করে ‘অসাম্প্রদায়িক’ হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। মূলতঃ এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের জিহাদী চেতনার বাস্তব প্রতিফলন হ’ল স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি এই চেতনাকে কাজে লাগিয়েছিল তাদের আধিপত্য বিস্তারের স্বার্থে। এই জিহাদী চেতনা যতদিন জনগণের মধ্যে অক্ষুণ্ন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকবে ইনশাআল্লাহ। এর বিপরীতে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র নামে এই চেতনাকে ধ্বংস করার চক্রান্ত যত বৃদ্ধি পাবে, দেশের স্বাধীনতা তত দ্রুত প্রতিবেশী আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রের কুক্ষিগত হবে। পবিত্র রামাযান মাসের ইসলামী চেতনার আবেগময় স্রোতের সামনে আমদানীকৃত ‘বর্ষবরণ’ ও বৈশাখী চেতনার বর্জ্য খড়কুটোর মত ভেসে যেতে বাধ্য। এতে কিছু লোকের হা-হুতাশ করে লাভ নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই আল্লাহ্র বিধানে মাসসমূহের গণনা হ’ল বারোটি। যার মধ্যে চারটি মাস হ’ল ‘হারাম’ (মহা সম্মানিত)। এটিই হ’ল প্রতিষ্ঠিত বিধান। অতএব এ মাসগুলিতে তোমরা পরস্পরের প্রতি অন্যায় করো না। আর তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ সংযমীদের সঙ্গে থাকেন’ (তওবা-মাদানী ৯/৩৬)। মুশরিকরা আল্লাহ্র এই বারো মাসের প্রতিষ্ঠিত বিধানের বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধে নেমেছে। তাই ঈমানদারগণও তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সংযমের সাথে যুদ্ধ করবে, এটাই স্বাভাবিক।

ভাষায় বাঙালী আর জাতিতে বাঙালী এক নয়। বরং সে হয় মুসলিম বাঙালী, নয়তো অমুসলিম বাঙালী। স্ব স্ব ধর্মীয় চেতনা অক্ষুণ্ন রেখেই তারা বাঙালী। সেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র নামে সব চেতনাকে একাকার করা কল্পনার ফানুস ছাড়া কিছুই নয়। ইসলাম আল্লাহ্র মনোনীত একমাত্র দ্বীন। যা আল্লাহ্র দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকারের স্বীকৃতি দেয়। কুফরী ও শিরকী চেতনাকে ইসলাম কখনোই স্বীকার করে না। কিন্তু ইসলাম কারু চেতনার উপরে যবরদস্তি করে না। কেননা প্রত্যেকের বিশ্বাস ও কর্মের ভিত্তিতে পরকালে তার জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। সে কারণেই তো দেখা যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় খাদেম ইহূদী বালককে যবরদস্তি মুসলমান করেননি। তার মৃত্যুকালে তিনি তাকে সেবা করতে গিয়ে শুধু বলেছিলেন, যদি তুমি কালেমা পাঠ করতে তাহ’লে আমি তোমার জন্য পরকালে শাফা‘আত করতে পারতাম! তাতেই সে তার ইহূদী পিতার আদেশে ‘কালেমা’ পাঠ করে (বুখারী হা/১৩৫৬; মিশকাত হা/১৫৭৪)। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ যদি কখনো স্বাধীনভাবে ইসলামী চেতনার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তবেই কেবল সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কাংখিত মানবাধিকারের চেতনা বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)।