এক নযরে হজ্জ

(১) ‘মীক্বাত’ থেকে ইহরামের পোষাক পরে ‘হজ্জে তামাত্তু’ সম্পাদনকারীগণ ওমরাহর নিয়ত করবেন এবং বলবেন ‘লাববাইক ওমরাতান’, ‘হজ্জে ‘ক্বিরান’ সম্পাদনকারীগণ একই সাথে হজ্জ ও ওমরাহর নিয়ত করবেন এবং বলবেন ‘লাববাইক ওমরাতান ওয়া হাজ্জান’ এবং হজ্জে ‘ইফরাদ’ সম্পাদনকারীগণ শুধুমাত্র হজ্জের নিয়ত করবেন এবং বলবেন ‘লাববাইক হাজ্জান’। অতঃপর সরবে ‘তালবিয়াহ’ পড়তে পড়তে কা‘বা গৃহে পৌঁছবেন।

(২) ‘হাজারে আসওয়াদ’ হ’তে ডান দিক থেকে ত্বাওয়াফ শুরু করে পুনরায় হাজারে আসওয়াদে এসে এক চক্কর শেষ করবেন। এসময় পুরুষেরা ডান কাঁধ ফাঁকা করে বাম কাঁধের উপর চাদর রাখবেন। ত্বাওয়াফে কুদূম ও ওমরার প্রথম তিন ত্বাওয়াফে রমল করবেন। মহিলারা স্বাভাবিক পোষাকে ও স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। এভাবে সাত চক্করের মাধ্যমে ত্বাওয়াফ সমাপ্ত করবেন। ‘রুক্নে ইয়ামানী’ ও ‘হাজারে আসওয়াদ’-এর মধ্যে ‘রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা ‘আযাবান্না-র’ দো‘আটি পড়বেন।

(৩) ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইব্রাহীমের পিছনে অথবা হারামের যেকোন স্থানে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবেন। এসময় সূরা ফাতিহা শেষে প্রথম রাক‘আতে ‘সূরা কাফেরূন’ ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ‘সূরা ইখলাছ’ পাঠ করবেন। অতঃপর যমযমের পানি পান করবেন।

(৪) এরপর ছাফা ও মারওয়া সাঈ করবেন। প্রথমে ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ করে দু’হাত তুলে কমপক্ষে তিন বার ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; আ-য়িবূনা তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা সা-জিদূনা লি রবিবনা হা-মিদূনা; ছাদাক্বাল্ল-হু ওয়া‘দাহু ওয়া নাছারা ‘আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াহদাহু’ দো‘আটি পড়ে ‘মারওয়া’র দিকে ‘সাঈ’ শুরু করবেন। অল্প দূর গিয়ে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যে কিছুটা দ্রুত চলবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। ‘ছাফা’ হ’তে ‘মারওয়া’ পর্যন্ত একবার ‘সাঈ’ ধরা হবে। এইভাবে সপ্তম বারে ‘মারওয়া’য় গিয়ে ‘সাঈ’ শেষ হবে।

(৫) ‘সাঈ’ শেষে মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সব চুল ছোট করবেন। মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ সামান্য চুল ছাঁটবেন।

(৬) ‘হজ্জে তামাত্তু’ সম্পাদনকারীগণ প্রথমে ওমরাহ শেষ করে হালাল হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। কিন্তু ‘হজ্জে ইফরাদ’ ও ‘ক্বিরান’ সম্পাদনকারীগণ ইহরামের পোষাকে থেকে যাবেন।

(৭) ৮ই যুলহিজ্জার দিন সকালে মক্কায় স্বীয় আবাসস্থল হ’তে গোসল করে ও খোশবু লাগিয়ে হজ্জের ইহরাম বেঁধে ‘লাববাইকা আল্ল-হুম্মা লাববায়েক, লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক; লা শারীকা লাক’ বলে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন।

(৮) মিনায় পৌঁছে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত পৃথক পৃথকভাবে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে ‘ক্বছর’ সহ আদায় করবেন। দুই ওয়াক্তের ছালাত একত্রে জমা করা যাবে না।

(৯) ৯ তারিখে সূর্যোদয়ের পর ধীর-স্থিরভাবে ‘তালবিয়াহ’ ও ‘তাকবীর’ বলতে বলতে আরাফাহ ময়দানের দিকে যাত্রা শুরু করবেন ও সেখানে গিয়ে অবস্থান নিবেন। অতঃপর ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ-ইস্তিগফার ও যিকর-আযকার অধিক হারে করবেন। অতঃপর হজ্জের খুৎবা শ্রবণ শেষে সূর্য পশ্চিমে ঢলার পর যোহর ও আছরের ছালাত যোহরের আউয়াল ওয়াক্তে ক্বছর সহ একত্রে ‘জমা’ করে পড়বেন।

অতঃপর সূর্যাস্তের পর আরাফাহ হ’তে মুযদালেফার দিকে রওয়ানা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে এক আযান ও দুই ইক্বামতে মাগরিবের তিন রাক‘আত ও এশার দু’রাক‘আত ছালাত ক্বছর সহ এশার আউয়াল ওয়াক্তে ‘জমা’ করে পড়বেন। অতঃপর ঘুমিয়ে যাবেন। ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের ছালাত আদায় করে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ-দরূদ ও যিকর-আযকারে লিপ্ত হবেন। অতঃপর ফর্সা হ’লে সূর্যোদয়ের আগেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। এ সময় মুযদালিফা হ’তে ৭টি কংকর সংগ্রহ করে সাথে নিবেন।

(১০) মিনায় পৌঁছে সূর্যোদয়ের পর ‘জামরাতুল আক্বাবা’য় অর্থাৎ বড় জামরায় গিয়ে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন ও প্রতিবারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। কংকর মারা হ’লে কুরবানী করবেন। অতঃপর মাথা মুন্ডন করবেন অথবা ছোট করে সমস্ত মাথার চুল ছাঁটবেন। তবে এতে আগপিছ হ’লে দোষ নেই।

(১১) এরপর ইহরাম খুলে ‘প্রাথমিক হালাল’ হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। এসময় স্ত্রী মিলন ব্যতীত বাকী সব কাজ সাধারণভাবে করা যাবে।

(১২) অতঃপর মক্কায় গিয়ে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ সেরে তামাত্তু হাজীগণ ছাফা-মারওয়া সাঈ করবেন। কিন্তু ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় পৌঁছে সাঈ সহ ‘ত্বাওয়াফে কুদূম’ করে থাকলে শেষে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ্’র পর আর সাঈ করবেন না।

(১৩) কা‘বা থেকে সেদিনই মিনায় ফিরে আসবেন ও সেখানে রাতে বিশ্রাম নিবেন। অতঃপর ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে প্রতিদিন দুপুরে সূর্য ঢলার পর তিন জামরায় ৩´৭=২১টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষে একটু দূরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে প্রাণ খুলে আল্লাহর নিকটে দো‘আ করবেন।

(১৪) ১২ তারিখে কংকর মারার পর সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি কেউ মক্কায় ফিরতে চান, তবে ফিরতে পারেন। কিন্তু ১২ তারিখে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই যদি মিনায় সূর্যাস্ত হয়, তাহ’লে তাকে সেখানে অবস্থান করে ১৩ তারিখে কংকর মেরে আসতে হবে।

(১৫) সবশেষে মক্কায় ফিরে মক্কা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ‘ত্বাওয়াফে বিদা’ বা বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। তবে ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী নারীদের জন্য এটা মাফ। ‘ত্বাওয়াফে বিদা‘র মাধ্যমে হজ্জ সমাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫; ‘বিদায় হজ্জের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ)

বি.দ্র. হজ্জের বিস্তারিত নিয়মাবলী জানার জন্য প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বইটি পাঠ করুন!