সাদৃশ্য অবলম্বন

আল্লাহ বলেন,هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَّمِنْكُمْ مُؤْمِنٌ، وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ- ‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের ও কেউ মুমিন। আর তোমরা যা কিছু কর, সবই আল্লাহ দেখেন’ (তাগাবুন ৬৪/২)

অত্র আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। একদল সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আরেকদল অবিশ্বাস করে। ফলে দুই দলের বিশ্বাস ও কর্ম পৃথক হ’তে বাধ্য। বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ، فَالنَّاسُ رَجُلاَنِ : مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ وَفَاجِرٌ شَقِيٌّ، أَنْتُمْ بَنُوْ آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ- ‘হে জনগণ! আল্লাহ তোমাদের থেকে জাহেলিয়াতের অংশ ও পূর্ব পুরুষের অহংকার দূরীভূত করে দিয়েছেন। মানুষ দু’প্রকারের : মুমিন আল্লাহভীরু অথবা পাপাচারী হতভাগা। তোমরা আদম সন্তান। আর আদম ছিলেন মাটির তৈরী’ (অতএব মাটির কোন অহংকার নেই)। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন,يَآ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَّأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ- ‘হে মানবজাতি! আমরা তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হ’তে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হ’তে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যিনি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং তিনি সবকিছুর খবর রাখেন’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)[1] 

মুসলিম জীবন পরিচালিত হচ্ছে দু’টি মৌলিক ভিত্তির উপর। ১. তারা আবশ্যই বিগত অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট জাতি সমূহের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে। তাই এ থেকে বিরত থাকার জন্য মুসলিম উম্মাহকে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَآءَ، بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ، وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ، إِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহূদী-নাছারাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তারা তাদের মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (মায়েদাহ ৫/৫১)

অতঃপর তিনি অমুসলিমদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,لاَ يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَالِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِي شَيْءٍ إِلَّآ أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً، وَيُحَذِّرُكُمُ اللهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللهِ الْمَصِيرُ- ‘মুমিনগণ যেন মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের থেকে কোন অনিষ্টের আশংকা কর (সেটি স্বতন্ত্র)। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর (প্রতিশোধ গ্রহণ) সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন। আর আল্লাহর কাছেই সকলের শেষ ঠিকানা’ (আলে ইমরান-মাদানী ৩/২৮)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে সাবধান করে বলেন,لَتَتَّبِعُنَّ سُنَنَ مَنْ قَبْلَكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ، قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ! الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى؟ قَالَ : فَمَنْ؟ ‘অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি পদে পদে অনুসরণ করবে। এমনকি যদি তারা গুই সাপের গর্তে ঢুকে পড়ে, তাহ’লে তোমরাও তাদের অনুসরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি ইহূদী-নাছারা? তিনি বললেন, তবে আর কারা’?[2] তিনি আরও বলেন, خَالِفُوا الْيَهُودَ وَالنَّصارَى...والْمُشْرِكِينَ- ‘তোমরা ইহূদী-নাছারা... ও মুশরিকদের বিরোধিতা কর’।[3]

২. মুসলমানদের একটি দল ক্বিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর দেখানো সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যেমন আল্লাহ বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ- ‘তুমি বল এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ، لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ- ‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’ (মুসলিম হা/১৯২০, রাবী ছাওবান (রাঃ)

তিনি আরও বলেন,إِنَّ الْإِسْلاَمَ بَدَأَ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَأَ فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ، قِيلَ : مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ : الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ- ‘ইসলাম নিঃসঙ্গভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। সত্বর সেই অবস্থায় ফিরে আসবে। অতএব সুসংবাদ হ’ল সেই অল্পসংখ্যক লোকদের জন্য। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা? তিনি বললেন, যখন মানুষ নষ্ট হয়ে যায়, তখন তাদেরকে যারা সংস্কার করে’ (ছহীহাহ হা/১২৭৩)

মুসলমান প্রতি মুহূর্তে উপরোক্ত দু’টি দিকের টানাপোড়েনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। হক ও বাতিলের যুদ্ধাবস্থার মধ্য দিয়ে সে এগিয়ে চলেছে তার নির্ধারিত আয়ুষ্কালের প্রান্তসীমার দিকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে চলার সময় পথিক যেভাবে সদা সতর্ক থাকে, মুমিন সেভাবে নিজেকে সর্বদা পথভ্রষ্টদের রীতি ও সাদৃশ্য অবলম্বনকে পরিহার করে চলে। মুমিনের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অতি সুকৌশলে প্রবেশ করে নানাবিধ অনৈসলামী রীতি ও আচরণ। যা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা তার জন্য অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে। তবুও তাঁকে বাঁচতেই হয় পরকালে জান্নাত লাভের স্বার্থে।

অন্যদের সাথে সাদৃশ্য পরিদৃষ্ট হয় মূলতঃ ৩টি ক্ষেত্রে। ইবাদত, আদত ও ই’তিক্বাদে।

১ম ইবাদতের ক্ষেত্র সমূহে যেমন ধর্মের নামে মীলাদ-ক্বিয়াম, কুলখানি-চেহলাম, শবেবরাত-শবে মেরাজ ইত্যাদি অনুষ্ঠান। এছাড়া সুন্নাতে খাৎনা অনুষ্ঠান, জন্ম দিবস পালন ও সারা বছর ভাল থাকার আশায় এদিন কেক কাটা, মৃত্যুদিবস পালন, এজন্য কালো ব্যাজ ধারণ, শোক দিবস, শোকের মাস, শোকের বছর, শোক সভা, শোক র‌্যালী, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, মৃতের ছবিসহ সর্বত্র কালো ব্যানার টাঙানো, রাস্তার দর্শনীয় স্থান সমূহে পূর্ণদেহী বা অর্ধদেহী বিলবোর্ড, মূর্তি বা প্রতিকৃতি স্থাপন ও সে সবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি। বাংলাদেশে মুসলিম মাইয়েতের জন্য সাধারণতঃ ২৩টি শিরক ও ৯০টি বিদ‘আত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[4] যা মুমিনকে প্রতিনিয়ত জান্নাতের পথ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। 

২য় আদত বা অভ্যাস ও আচরণের ক্ষেত্র সমূহে যেমন ইহূদী-নাছারাদের ন্যায় ইসলামের কিছু অংশ পালন ও কিছু অংশ বর্জন, তাদের ন্যায় কুফরী রাজনীতি, পূঁজিবাদী ও সমাজবাদী অর্থব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা, নারী নির্যাতন, মদ-জুয়া, বখাটেপনা ও বেহায়াপনা, শিক্ষাব্যবস্থায়, পোষাকে ও চুলে, লেখায় ও কথায়, খানা-পিনায় তাদের অনুকরণ, বিনা বিবাহে সন্তান লাভ, সমকামিতা, পরনারীর সাথে লিভ টুগেদার, হোটেলের একই কক্ষে বেগানা নারী-পুরুষের নির্জন বাস, ভালোবাসা দিবস, থার্টিফার্স্ট নাইট সহ নানাবিধ দিবস পালনের অনৈসলামী রীতি-নীতি নিত্যদিন আমদানী হচ্ছে। যেমন আমদানী হয়েছে (ক) সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ। যার ফলে আমরা আদর্শিক জাতীয়তাবাদ ভুলে ক্রমেই সংকীর্ণ ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের গন্ডিভুক্ত হয়ে যাচ্ছি। সেই সাথে সৃষ্টি হচ্ছে দলীয় সংকীর্ণতা। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ... ‘যে ব্যক্তি এমন পতাকাতলে যুদ্ধ করে, যার হক-বাতিল হওয়া সম্পর্কে তার কোন স্পষ্ট জ্ঞান নেই। সে দলীয় প্রেরণায় ক্রুদ্ধ হয়, দলীয় প্রেরণায় লোকদের আহবান করে ও দলীয় প্রেরণায় মানুষকে সাহায্য করে, অতঃপর নিহত হয়। এমতাবস্থায় সে জাহেলিয়াতের উপর নিহত হয়’...।[5]

(খ) নারী স্বাধীনতার নামে চরম বেহায়াপনা ও পর্দাহীনতা। ফলে বেড়ে চলেছে নারী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন। অথচ আল্লাহ নারীদের বলেছেন,وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى، ‘তোমরা নিজ নিজ গৃহে অবস্থান কর এবং পূর্বতন জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না’ (আহযাব ৩৩/৩৩)। এতে বুঝা যায় যে, নারীরা বাইরে গেলে পূর্ণ পর্দা সহকারে যাবে। জাহেলী যুগের বেহায়া পোশাকে নয়। আল্লাহ পুরুষ ও নারী উভয়কে উভয়ের প্রতি দৃষ্টি নীচু করে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে নারীকে বলেছেন, ‘তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের উপর রাখে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে...। আর তারা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকট হয়ে পড়ে’... (নূর ২৪/৩০-৩১)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়াবী জৌলুস ও নারী জাতি থেকে সাবধান থাক। কেননা বনু ইস্রাঈলদের প্রথম ফিৎনা ছিল নারী জাতি’ (মুসলিম হা/২৭৪২; মিশকাত হা/৩০৮৬)। অথচ আমরা নারীদের ফুটবল ও ক্রিকেট সহ সব খেলা ও কর্মে পুরুষদের মুকাবিলায় দাঁড় করিয়েছি। শিক্ষাস্থল, কর্মস্থল, অফিস-আদালত সর্বত্র পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবস্থান নিশ্চিত করেছি। যা নারীর স্বভাব বিরুদ্ধ।

(গ) লেবাস-পোষাক ও চুল : আজকাল মুসলিমদের পোষাকে ও চুলে অমুসলিমদের অনুকরণ ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। পুরুষদের পোষাকে বুঝার উপায় থাকেনা যে তিনি মুসলিম না অমুসলিম! একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে হলুদ পোষাক পরিহিত দু’জন ব্যক্তি আসলে তিনি তাদের বলেন,إِنَّ هَذِهِ مِنْ ثِيَابِ الْكُفَّارِ فَلاَ تَلْبَسْهَا- ‘এগুলি কাফেরদের পোষাক। এগুলি পরিধান করোনা’ (মুসলিম হা/২০৭৭; মিশকাত হা/৪৩২৭)। খলীফা ওমর (রাঃ) আযারবাইজানে অবস্থানরত মুসলিম সেনাপতিকে নির্দেশ লিখে পাঠান যে,وَإِيَّاكُمْ وَالتَّنَعُّمَ وَزِيَّ أَهْلِ الشِّرْكِ، ‘তোমরা বিলাসিতা হ’তে ও মুশরিকদের পোষাক হ’তে বিরত থাক’ (মুসলিম হা/২০৬৯)। এখন নারীদের পোষাক হ’ল অর্ধনগ্ন ও টাইটফিট অথবা মাথা ও বুকের অর্ধেক খালি ও নীচে পায়ের তলা পর্যন্ত ঝুলানো। অন্যদিকে পুরুষদের প্যাণ্ট-পায়জামা-লুঙ্গি পায়ের তলা পর্যন্ত ঝুলানো। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزَارِ فِي النَّارِ- ‘টাখনুর নীচে যেটুকু ঝুলে থাকবে, সেটুকু জাহান্নামের আগুনে পুড়বে’ (বুখারী হা/৫৭৮৭; মিশকাত হা/৪৩১৪)

নারীদের স্বভাবগত লম্বা চুল ক্রমেই খাটো হয়ে যাচ্ছে এবং মাথার উপরে ঝুটি হচ্ছে। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘দু’টি দল হ’ল জাহান্নামের অধিবাসী। এক- নগ্ন পোষাকধারী নারী। যারা অন্যের প্রতি আকৃষ্ট এবং অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্টকারী। যাদের মাথাগুলো লম্বা গলার বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের মত। এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। দুই- ঐসব পুরুষ যাদের হাতে সর্বদা বেত থাকে গরুর লেজের মত, যা দিয়ে তারা মানুষকে পিটায়’ (আহমাদ হা/৯৬৭৮)। ইতিপূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর ৬টি জাতির অন্যতম ‘আদ জাতির ধ্বংসের অন্যতম কারণ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমরা কাউকে মার, তখন নিষ্ঠুর যালেমদের মত মার’ (শো‘আরা ২৯/১৩০)। বর্তমান গণতান্ত্রিক যুগে প্রকাশ্যভাবে পুলিশের লাঠি পেটা এবং হেফাযতে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বিগত ‘আদ জাতির ধ্বংসের কথা মনে করিয়ে দেয়।

পুরুষদের চুলেও নানা ধরনের কাটিং দেখা যায়। সেই সাথে দাড়ি মুন্ডণ যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা গোঁফ ছাটো ও দাড়ি ছাড়ো’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৪৪২১)। এর বিপরীতে আমরা মুশরিকদের মত গোঁফ দীর্ঘ করি ও দাড়ি চেঁছে ফেলি। এরপরেও আমরা পরকালে নবীর শাফা‘আত কামনা করি।

(ঘ) বর্তমানে বছরের প্রায় ৩৬৫ দিনই কোন না কোন দিবস পালনে কেটে যায়। জাহেলী যুগে এরূপ বহু ধরণের দিবস পালনের রীতি ছিল। ইসলাম এসে সব বাতিল করেছে এবং তার পরিবর্তে ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা চালু করেছে। এছাড়া রয়েছে ঈদুল আযহার পরে আইয়ামে তাশরীক্বের ৩ দিন, আরাফা ও আশূরার দিন এবং জুম‘আর দিন। এ কয়দিন বাদে বাকী সবই হ’ল কর্মের দিন। অথচ নানাবিধ অপ্রয়োজনীয় দিবসের পিছনে ব্যয় হচ্ছে মুমিনের অর্থ-সম্পদ ও তার মূল্যবান আয়ুষ্কাল। যার প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয়িত হওয়া প্রয়োজন ছিল পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে। অথচ দুনিয়াতে তার প্রতিটি সেকেন্ডের কর্মকান্ডের হিসাব আল্লাহর নিকট দিতে হবে এবং ক্বিয়ামতের দিন সে তার পুরাপুরি ফলাফল পাবে (বাক্বারাহ ২/২৮১)

মুশরিকদের ব্যবহারিক রীতি-নীতি, তাদের আইন ও বিধি-বিধান সমূহ অনুসরণ করায় মুমিন জীবন থেকে ঈমানী চেতনা ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতাদের পোষাকে ও শিষ্টাচারে প্রথমেই চেনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশী নেতাদের চেনা মুশকিল হয়। তারা ভাষা ও সংস্কৃতিতে অন্যের অনুকরণ করেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, অন্যদের রীতি-নীতির চাইতে ইসলামী রীতি-নীতি যে শ্রেষ্ঠ, এই অনুভূতিটুকুও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে অমুসলিমদের রক্তচোষা সূদী অর্থনীতির মাধ্যমে সমাজে চলছে ধনী-গরীবের পাহাড় প্রমাণ বৈষম্য। ‘প্রত্যেকের ভোটের মূল্য সমান’ গণ্যকারী প্রতারণাপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতির কারণে সমাজে নেতৃত্ব নিয়ে চলছে দলাদলি ও রক্তারক্তি। যা মহববতপূর্ণ মুসলিম সমাজকে পরস্পরে শত্রুসমাজে পরিণত করছে।

(ঙ) কথায়-বার্তায় ও বাহ্যিক শিষ্টাচারে ঘটেছে অন্যদের চরম সাদৃশ্য অবলম্বন। যেমন চাচা-চাচী, মামু-মামী, খালু-খালার স্থলে বলা হচ্ছে ‘আংকেল-আন্টি’। চাচাতো-মামাতো-খালাতো ভাইদের বলা হচ্ছে ‘কাজিন’। হিন্দুদের অনুকরণে বড় ভাইকে বলা হচ্ছে ‘দাদা’। ইংরেজদের অনুকরণে বাপকে বলা হচ্ছে ‘ড্যাডি’। দুপুরের খাবারকে বলা হচ্ছে ‘লাঞ্চ’। সালাম দেওয়ার বদলে বলা হচ্ছে ‘গুড মর্ণিং, গুড ইভিনিং, গুড নাইট’ ইত্যাদি। বিস্ময়ের ক্ষেত্রে সুবহানাল্লাহর বদলে বলা হচ্ছে ‘ওহ মাই গড!’ অথবা ‘ওয়াও!’ আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুন-এর বদলে বলা হচ্ছে ‘ভাল থাকুন’। সালাম-মুছাফাহার বদলে চালু হয়েছে দুই হাত ধরে মাথা ঝুঁকানো ও হিন্দুদের ন্যায় কুর্ণিশের ভঙ্গি করা। বিদায়ের সময় সালামের বদলে বলা হচ্ছে ‘গুড বাই’। কেউ হাত নাড়িয়ে বলেন, ‘বাই বাই, টা টা’।

৩য় ই’তিক্বাদ বা বিশ্বাসের ক্ষেত্র সমূহে যেমন এরূপ ধারণা করা যে, কবরস্থ ব্যক্তি জীবিত আছেন, তিনি আমাদের কথা শুনছেন, আমাদের ভাল-মন্দ দেখছেন এবং আমাদেরকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করছেন। তার অসীলায় আমরা মামলায় বা ইলেকশনে জিতে যাব এবং পরকালে মুক্তি পাব। এই বিশ্বাস নিয়ে মৃত ব্যক্তির নিকট নিজের ও অন্যদের জন্য দো‘আ চাওয়া, তার কবরে টাকা ফেলা। মুশরিকদের ন্যায় নিজেরা মিনার ও বেদী বানিয়ে বা সৌধ নির্মাণ করে সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা ইত্যাদি। কথিত পীর-আউলিয়া ও অন্যান্য ভ্রান্ত আক্বীদার লোকেরা বিভিন্ন কবরে এমনকি ভুয়া কবরে ধর্মের নামে ব্যবসা খুলে বসেছে। ইহূদীরা দুই উপাস্যের এবং খৃষ্টানরা তিন উপাস্যের পূজা করে (তওবা ৯/৩০; মায়েদাহ ৫/৭৩)। যদিও তারা ডলারে লেখে In God we trust এবং তাদের রাজার জন্য প্রার্থনা করে God save the king. তাদের দেখাদেখি মুসলমান নামধারী ভ্রান্ত লোকেরা মসজিদে আল্লাহর কাছে ও কবরে মৃতের কাছে প্রার্থনা করে। আবার দুই স্থানেই তারা সিজদা করে। এর ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হচ্ছে ও অন্যদের পথভ্রষ্ট করছে। অথচ এসব থেকে ইউটার্ণ করেই মুমিনকে সর্বদা জান্নাতের পথে চলতে হবে এক মনে এক ধ্যানে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকিত সরল পথে।

সাদৃশ্য অবলম্বনের প্রভাব : সৈনিকের পোষাকধারী একজন ব্যক্তির উপর তার পোষাকের যে প্রভাব পড়ে, অন্যদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী একজন মুসলিমের উপর তেমনি অন্যদের প্রভাব পড়ে। গেরুয়া বসনধারী ন্যাড়ামুন্ড একজন বৌদ্ধের পোষাক এবং টুপী-দাড়ি ও ঢিলা পায়জামা-পাঞ্জাবীধারী একজন মুমিনের পোষাক তাদের নিজেদের উপরে যেমন প্রভাব বিস্তার করে। টাইট-ফিট পোশাক পরা একজন অর্ধনগ্ন্ নারী এবং ঢিলা বোরক্বায় সারা দেহ আবৃত একজন মুসলিম নারীর পোষাক তাদের নিজেদের উপরে যেমন প্রভাব বিস্তার করে, তেমনিভাবে তা অন্যদের থেকে তাদের বিশ্বাস ও কর্মের পার্থক্য নির্দেশ করে। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ- ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে’।[6] এটি প্রকট হয়ে দেখা দেয়, যখন মুমিন ভিন্ন পরিবেশে যায় বা সেখানে অবস্থান করে। সেখানে তার স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ণ রাখা দুরূহ হয়ে পড়ে। কিন্তু জান্নাতের পথিক মুমিন কখনোই লক্ষ্যচ্যুত হয় না। বরং সেই-ই অন্যকে প্রভাবিত করে।

ইসলামী পোষাক ও রীতি-নীতি ভিনদেশী ও ভিন্নভাষীদের মধ্যে প্রথম সাক্ষাতেই মহববতের সঞ্চার করে। উভয়ের সম্ভাষণ ও অন্যান্য ইসলামী শিষ্টাচার পরষ্পরকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। ফলে সাদৃশ্য অবলম্বনের গুরুত্ব অন্য সবকিছুর চাইতে বেশী হয়ে দেখা দেয়।

এক্ষণে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন না করার বিষয়ে মৌলিক বিধান হ’ল, (১) তাদের ধর্মীয় ও বৈষয়িক সকল প্রকারের সাদৃশ্য অবলম্বনের পুরোপুরি বিরোধিতা করা।

(২) তাদের বাহ্যিক আচার-আচরণ থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা। যেমন বাম হাতে খানাপিনা, টেবিলে খাবার রেখে সেখান থেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরস্পরে গল্প করতে করতে খাওয়া, ভোজসভা করা ও সেখানে ভাষণ দেওয়া ইত্যাদি। অথচ প্রয়োজন ছিল শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করা ও শেষে তাঁর প্রশংসা করা। যিনি এই সুন্দর খাবার আমার নিকটে এনে দিয়েছেন, তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতা মূল্যায়ন করা ও সে বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করা।

(৩) ইসলাম কেবল ছালাত-ছিয়াম-হজ্জ ইত্যাদি ইবাদতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, বৈষয়িক ক্ষেত্রে অন্যদের বিধি-বিধান উত্তম, এই আপোষমুখী ধারণা পরিত্যাগ করা।

(৪) এ বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাস পোষণ করা যে, অমুসলিমদের দ্বীনী ও দুনিয়াবী সকল রীতি-নীতি বাতিল অথবা মন্দ পরিণতির বাহন। স্বর্ণযুগে আমাদের পূর্ববর্তীগণ এই বিধানটি ভালভাবে বুঝেছিলেন এবং এর উপর আমল করেছিলেন। এ বিষয়ে উম্মতকে তাঁরা সাবধান করে গিয়েছেন, যেন মুসলমানদের মধ্যে ঐসব মন্দ রীতি প্রবেশের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

(৫) কোন কোন অমুসলিমের মধ্যে সুন্দর চরিত্র পাওয়া যায়। কিন্তু তাদের হৃদয়গুলি ঈমান শূন্য। তারা পরকালে আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করেনা ও জান্নাতের আশায় কাজ করেনা। তাই ঐসব সদাচরণ ক্ষণস্থায়ী ও ফলবলহীন। তাই এদের দেখে ধোঁকা খাওয়া যাবেনা।

(৬) বিদেশী ভাষায় কথা না বলা। হযরত ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, لاَ تَعَلَّمُوا رَطَانَةَ الْأَعَاجِمِ- ‘তোমরা বিদেশী ভাষা শিখোনা’।[7] এর কারণ ছিল যাতে অনারবদের রীতি-নীতি ও কৃষ্টি-কালচার আরবদের মধ্যে প্রবেশ না করে। যা পরবর্তীতে প্রবেশ করেছে অনূদিত বই সমূহের মাধ্যমে। অথচ বিদেশী ভাষায় কথা বলাকে আজকাল বড় ক্রেডিট মনে করা হয়। ফলে সে নিজেরটা হারায়, পরেরটাতেও আনকোরা হয়। কেবল বাধ্যগত অবস্থায় এটি জায়েয। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যায়েদ বিন ছাবেতকে ইবরানী তথা হিব্রু ভাষা শিখতে বলেছিলেন তাদের চিঠি পড়া ও তাদের নিকট চিঠি লেখার জন্য।[8] এছাড়া তাদের আগত প্রতিনিধির সাথে দোভাষীর কাজ করার জন্য। যাতে তারা মুসলিমদের ধোঁকা দিতে না পারে। মুমিন তার মাতৃভাষায় সবকিছু করবে সহজ ও সাবলীলভাবে। কেননা ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি এবং এটি তাঁর সৃষ্টিবৈচিত্র্যের অন্যতম নিদর্শন। যেমন তিনি বলেন,وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلاَفُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَالِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ- ‘আর তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে অন্যতম হ’ল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করা এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা। নিশ্চয়ই এর মধ্যে বিজ্ঞদের জন্য নিদর্শন সমূহ রয়েছে’ (রূম ৩০/২২)

(৭) অমুসলিমদের অনুকরণে বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন ও স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন না করা। সেগুলিকে সম্মান করা ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্মৃতিবিজড়িত হেরা গুহা, ছওর গুহা, বায়‘আতুর রিযওযানের বৃক্ষ, হোদায়বিয়ার কূয়া প্রভৃতি। অনুরূপভাবে বদর, ওহোদ, খন্দক যুদ্ধ সমূহ প্রভৃতি স্থান নিয়ে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ।

বর্তমান যুগে নেতাদের ও সৎকর্মশীল মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি চলছে। এসব স্থানকে রীতিমত পূজার স্থানে পরিণত করা হয়েছে। এমনকি দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধান বিচারপতি, প্রধান সেনাপতিদেরকেও এসব স্থানে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। নইলে তাদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। ২০০২ সালের ২১শে জুন এদেশে একজন প্রেসিডেন্টের তো চাকুরী গেল মুহূর্তের মধ্যে মৃত নেতার কবরে এসে ফুল না দেওয়ার কারণে। অথচ এগুলি সবই অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন মাত্র। যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

অতএব মুসলিম উম্মাহকে সকল প্রকার শয়তানী ধোঁকা থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের অনুসারী হ’তে হবে এবং পরকালে জান্নাত লাভের জন্য দুনিয়াতে পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে। আর একদল মুমিন সর্বদা দ্বীনের পাহারাদার হিসাবে কাজ করবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,يَحْمِلُ هَذَا الْعِلْمَ مِنْ كُلِّ خَلَفٍ عُدُولُهُ يَنْفُونَ عَنْهُ تَحْرِيفَ الْغَالِينَ وَانْتِحَالَ الْمُبْطِلِينَ وَتَأْوِيلَ الْجَاهِلين- ‘কুরআনের এই ইলমকে বহন করবে পরবর্তী যুগের ন্যায়নিষ্ঠগণ। তারা এই ইলম থেকে সীমালংঘনকারীদের পরিবর্তন, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার ও মূর্খদের অপব্যাখ্যা সমূহ দূর করে দিবে’।[9] বস্ত্ততঃ এরাই হবে আল্লাহর দ্বীনের হেফাযতকারী। যারা কোন অবস্থায় অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে না কথায়-কর্মে, পোষাকে বা ব্যবহারিক রীতি-নীতিতে। আল্লাহ আমাদেরকে উক্ত হকপন্থী দলের অন্তর্ভুক্ত করুন- আমীন!


[1]. তিরমিযী হা/৩২৭০; আবুদাঊদ হা/৫১১৬; ঐ, মিশকাত হা/৪৮৯৯; ছহীহাহ হা/২৭০০; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৫৩৮ পৃ.

[2]. বুখারী হা/৭৩২০; মুসলিম হা/২৬৬৯; মিশকাত হা/৫৩৬১

[3]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২১৮৬; বুখারী হা/৫৮৯২; মুসলিম হা/২৫৯; মিশকাত হা/৪৪২১ রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।

[4]. দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ২৩৫-২৩৮ পৃ.।

[5]. মুসলিম হা/১৮৪৮; মিশকাত হা/৩৬৬৯ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।

[6]. আবুদাঊদ/৪০৩১; মিশকাত হা/৪৩৪৭, রাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)।

[7]. বায়হাক্বী হা/১৯৩৩৩; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৫/৩২৫।

[8]. আল-ইছাবাহ, যায়েদ বিন ছাবেত ক্রমিক ২৮৮২।

[9]. হায়ছামী, মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৬০১; বায়হাক্বী ১০/২০৯ হা/২১৪৩৯; মিশকাত হা/২৪৮; ছহীহাহ হা/২৭০-এর আলোচনা।