যেলা পরিষদ মিলনায়তন, রাজশাহী ১৫ই জুলাই শনিবার : অদ্য সকাল ৯-টায় রাজশাহী যেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীরে জামা‘আত ও ‘যুবসংঘে’র প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) কেবল ধর্মীয় ক্ষেত্রে নন, বরং রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই বিশ্ব মানবতার আদর্শ। তাঁর আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে সমাজের প্রকৃত কল্যাণ ও অগ্রগতি। তিনি যুবসমাজকে রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে ব্যক্তি ও সমাজ গঠনের সংগ্রামে আত্মনিয়োগের আহবান জানান এবং এজন্য আদর্শবান জনশক্তি ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের জোর দাবী জানান।
তিনি বলেন, যুববকরাই দেশের চালিকাশক্তি। তাই রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে তাদেরকে হকপন্থী ও আপোষহীন হ’তে হবে। মনে রাখতে হবে, বিপ্লব হয় বিপ্লবী মানুষের মাধ্যমে; বাতিলপন্থী, অলস ও পেটপূজারী মানুষের মাধ্যমে নয়। অতঃপর তিনি বলেন, আমরা যে লেখনী ও সংগঠন রেখে যাচ্ছি, তার মাধ্যমে বাংলার যমীনে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিপ্লব সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ।
‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা দুর্রুল হুদা, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন, যুববিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, দফতর সম্পাদক ও আত-তাহরীক অনলাইন টিভির পরিচালক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম, ঢাকা মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড’-এর চেয়ারম্যান ও ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মাদ তরুণ হাসান (মেহেরপুর), ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুস্তাফীযুর রহমান সোহেল, ড. মুখতারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুস্তাকীম আহমাদ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি হাফেয আব্দুল মতীন, ‘আহলেহাদীছ পেশাজীবী ফোরামে’র সভাপতি ডা. শওকত হাসান, ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম, ‘আল-‘আওন’-এর কেনদ্রীয় প্রচার সম্পাদক শরীফুল ইসলাম।
এতদ্ব্যতীত ‘যুবসংঘ’-এর বর্তমান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ, ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি হাফেয আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ, কুমিল্লা যেলা সভাপতি রূহুল আমীন, গাইবান্ধা-পশ্চিম যেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মামূন, চট্টগ্রাম যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ জসীমুদ্দীন, জয়পুরহাট যেলা সভাপতি মুশতাক আহমাদ সারোয়ার, চুয়াডাঙ্গা যেলা সভাপতি হাবীবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ যেলা সভাপতি ইমরান হাসীন আল-আমীন, নরসিংদী যেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইসহাক প্রমুখ। সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ দেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আবুল কালাম। অতঃপর উদ্বোধনী ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম।
সকাল ৯-টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘যুবসংঘ’-এর প্রচার সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম ও আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার দশম শ্রেণীর ছাত্র হাফেয আব্দুল্লাহ নাহিয়ান। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), রোকনুয্যামান (সাতক্ষীরা), ইয়াকূব আলী (মেহেরপুর), মুহাম্মাদ আল-ইমরান ও রাতুল আসলাম (রাজশাহী), মাহফূযুর রহমান (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) ও মারকাযের মক্তব বিভাগের ছাত্র শিশুশিল্পী (৯) আব্দুল্লাহ আল-ফাহীম (কুষ্টিয়া)। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আহমাদুল্লাহ (কুমিল্লা) ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফায়ছাল মাহমূদ (সাতক্ষীরা)।
এতদ্ব্যতীত বিভিন্ন যেলা থেকে আগত ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ও শুভাকাংখীগণ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার প্রমুখ। সবশেষে সম্মেলনের সভাপতি কর্তৃক মজলিস ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে মাগরিবের প্রাক্কালে সম্মেলন সমাপ্ত হয়।
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :
সম্মেলনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা সমূহ পেশ করা হয়। ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আবুল কালাম প্রস্তাবনা পাঠ করেন ও উপস্থিত সকলে তা সমর্থন করেন।-
১. দেশের ৯০% জনগণের আক্বীদা-আমলের সাথে সঙ্গতি রেখে দেশের আইন, শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী ঢেলে সাজাতে হবে।
২. প্রাথমিক হ’তে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে ডারউইনের নাস্তিক্যবাদী বিবর্তনবাদ সহ সকল প্রকার ইসলাম বিরোধী মতবাদ প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে শিক্ষার সর্বস্তরে রাসূল (ছাঃ)-এর ‘সীরাত পাঠ’ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. ছেলে ও মেয়েদের সহশিক্ষা প্রথা বাতিল করতে হবে এবং মেয়েদের জন্য পৃথক শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শালীনতাপূর্ণ পোষাক ও পর্দাপ্রথা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে নারীদের বোরকা পরা ও পর্দা পালনে বাধা সৃষ্টিকারীদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৪. জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থাসহ মুসলিম সমাজে অনুপ্রবিষ্ট শিরক-বিদ‘আত ও কুসংস্কার সমূহ দূরীকরণার্থে ধর্মমন্ত্রণালয়ের অধীনে আহলেহাদীছ ওলামাসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের সমন্বয়ে কেন্দ্র থেকে যেলা পর্যন্ত ‘ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করতে হবে।
৫. দল ও কোটা ভিত্তিক নয়, বরং মেধাভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে সবাইকে সমভাবে দেশ সেবার সুযোগ দিতে হবে। জাতীয় বাজেটে যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে যুবসমাজকে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং সর্বক্ষেত্রে দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনবল ও সৎ জনপ্রশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. গ্রামে-গঞ্জে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সূদ প্রথার বিস্তার এবং অফিস-আদালত থেকে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৭. বিনোদন ও সংস্কৃতির নামে মিডিয়ার মাধ্যমে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রসার বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে যত্রতত্র মাদকদ্রব্যের সয়লাব রোধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. জঙ্গীবাদের ভয়ংকর থাবা থেকে ধর্মপ্রাণ যুবসমাজকে রক্ষার জন্য ‘যুবসংঘে’র গৃহীত পদক্ষেপ সমূহকে উৎসাহিত করতে হবে।
৯. এ সম্মেলন হাদীছ অস্বীকারকারী আহলে কুরআন, শেষনবীকে অস্বীকারকারী কাদিয়ানী, হিজবুত তাওহীদ, দেওয়ানবাগী প্রভৃতি ইসলামের নামে ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের বিরুদ্ধে সরকারীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছে।
১০. অত্র সম্মেলন সুইডেনে সেদেশের আদালতের অনুমতি নিয়ে ঈদুল আযহার দিন প্রকাশ্যভাবে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর বিরুদ্ধে এবং পুনরায় পোড়ানোর হুমকি দানের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের জোর দাবী জানাচ্ছে এবং সুইডেনের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানাচ্ছে।
১১. এই সম্মেলন নদীভাঙ্গা অসহায় মানুষদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবী জানাচ্ছে। সেই সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কঠোর হস্তে ভেঙ্গে দেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছে।
সম্মেলনের অন্যান্য খবর
কর্মী উপস্থিতি : দেশের প্রায় সকল যেলা থেকে প্রায় দুই হাযার কর্মী ও সুধী উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। মূল অডিটোরিয়ামে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরে চেয়ার ও প্রজেক্টরের ব্যবস্থা রাখা হয়।
স্টল সমূহ : সম্মেলনে সকাল ৯-টা থেকে মাগরিব পর্যন্ত মিলনায়তনের বাইরে মূল গেইটের পূর্ব পার্শ্বে ‘আল-‘আওন’ রাজশাহী-সদর যেলা কমিটির উদ্যোগে ব্লাড গ্রুপিং ও রক্তদাতা সদস্য সংগ্রহ ক্যাম্পিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ক্যাম্পিং পরিচালনা করেন রাজশাহী-সদর যেলা ‘আল-‘আওনে’র সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুয্যামান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হাফীযুর রহমান, অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ প্রমুখ। উক্ত ক্যাম্পিংয়ে ১০ জনের ব্লাড গ্রুপিং ও ১০ জন রক্তদাতা সদস্য বা ‘ডোনর’ তালিকাভুক্ত হন।
এছাড়াও মূল গেইটের পূর্ব পার্শ্বে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ ও ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় উদ্যোগে সংগঠন পরিচিতি বিষয়ক স্টল স্থাপন করা হয় এবং সেখান থেকে বই, সংগঠনের পরিচিতি, গঠনতন্ত্র, শ্লোগান সম্বলিত গেঞ্জি ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হয়।
[উল্লেখ্য যে, সম্মেলনের রিপোর্ট ১৬ই জুলাই ২০২৩ রবিবার দৈনিক ইনকিলাব ৮ম পৃষ্ঠার ২-৪ কলামে ছবিসহ প্রকাশিত হয়]।