মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৩য় কিস্তি)

পর্ব ১ । পর্ব ২। পর্ব ৩।  পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬। পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯। শেষ পর্ব। 

আমার বাংলা বই

ইবতেদায়ি  প্রথম শ্রেণি

পূণর্মুদ্রণ : আগস্ট ২০১৮

(৫৩) পৃ. ১৫ : ঐশী কিতাব পড়ে।

(এখানে একটি মেয়ের ছবি দিয়ে তার সামনে একটি রেহাল রাখা হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে, যেন সে কুরআন মজীদ পড়ছে)।

মন্তব্য : ঈশ্বর শব্দ থেকে ঐশীর উদ্ভব। হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঈশ্বর থেকে আগত বাণীকে ‘ঐশী বাণী’ বলে এবং ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তিকে বলে ঐশী শক্তি বা ঐশ্বরিক শক্তি। পক্ষান্তরে আল্লাহ নামের কোন প্রতিশব্দ নেই। তাঁকে কেবল আল্লাহ বলেই ডাকতে হবে, অন্য কোন নামে নয়। অতএব ‘ঐশী’ নাম তাওহীদের চেতনা বিরোধী। তাছাড়া কুরআন আল্লাহর কিতাব। এটি কোন ঐশী কিতাব নয়। আর কোন মুসলমান মেয়ের নাম ঐশী হ’তে পারেনা। এভাবে শিরকী শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সুকৌশলে হিন্দু সংস্কৃতি প্রচার করা হচ্ছে।

(৫৪) পৃ. ১৮                                                                                                                          ছড়া

ইতল বিতল

ইতল বিতল গাছের পাতা

গাছের তলায় ব্যাঙ্গের ছাতা।

বিষ্টি পড়ে ভাঙ্গে ছাতা

ডোবায় ডুবে ব্যাঙ্গের মাথা।

মন্তব্য : সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯ খৃ.) বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মহিলা কবি। কিন্তু তাঁর এই কবিতায় বাচ্চাদের কি শিখানো হচ্ছে? এতে না আছে কোন দ্বীনী শিক্ষা, না আছে কোন নীতিকথা। এতদ্ব্যতীত এই ছড়া-কবিতায় ব্যবহৃত ‘ইতল’ শব্দটি কোনো অভিধানে নেই। এর কোনো অর্থ বা প্রতিশব্দ বা বিপরীত শব্দ অথবা কোন কিছুর ঝংকার হিসেবেও এই শব্দ কারু জানা নেই। ‘বিতল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ, হিন্দু পুরাণে বর্ণিত দ্বিতীয় পাতাল। যা এই কবিতার সাথে সংগতিপূর্ণ নয় এবং ছোট শিশুদের তা জানারও প্রয়োজন নেই। অথচ এটি হ’ল মাদ্রাসার ১ম শ্রেণীর ২য় কবিতা।

(৫৫) পৃ. ২৪  বর্ণ শিখি : ট ঠ ড ঢ ণ

শুনি ও বলি (ছেলে ও মেয়ের যৌথ চিত্রসহ)।

টগর তুলি। ঠোঙা খুলি। ডাব খাই। ঢাকনা দিই। চরণ ফেলে মাঠে যাই।

মন্তব্য : চারটি ছবির প্রতিটিতেই পৃথকভাবে এক জোড়া করে ছেলে ও মেয়ে আছে। এতে পরবর্তীতে ক্লাসের একজোড়া ছেলে ও মেয়ে নিরিবিলি স্থানে একত্রিত হওয়ার দিকে প্ররোচিত করবে। যা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে প্রকাশ্যে বা আড়ালে-আবডালে এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে।

নীচের ছবিতে ছেলেটি ডুগডুগি বাজাতে বাজাতে ‘চরণ ফেলে মাঠে’ যাচ্ছে। আর সে তার পিছনে ‘টগর’ ফুলের গুচ্ছ নিয়ে এগিয়ে আসা মেয়েটির দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে দেখছে। এর দ্বারা তাদেরকে কি শিখানো হচ্ছে? ছেলে মেয়েরা পা ফেলে রাস্তায় চলে। কেউ তো চরণ ফেলে চলে না। তাছাড়া গোলাপ ফুল বাদ দিয়ে টগর ফুল কেন? আর মেয়ে কেন ছেলেকে ফুল দিচ্ছে? ছেলে কি ছেলেকে ফুল দিতে পারেনা?

মূলতঃ ‘চরণ’ বলে কুফরী দর্শনের অনুসারী লালনের (১৭৭৪-১৮৯০ খৃ.) কবিতা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, ‘গুরুর চরণ পরম রতন কর রে সাধন’। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১ খৃ.) তাঁর ‘চরণ’ নামক প্রভাত সংগীত শুরু করেছেন দেবীর বন্দনা গেয়ে। যেমন তিনি বলছেন,

দুখানি চরণ পড়ে ধরণীর গায়,

দুখানি অলস রাঙা কোমল চরণ।

মন্তব্য : মুসলমান ছেলে-মেয়েরা কারু চরণ ধূলায় বিশ্বাসী নয়। বরং তারা সকল কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।

অতঃপর সাদা পাঁচ পাতা বিশিষ্ট ‘টগর’ ফুল হ’ল দেবতা শিবের প্রিয় ফুল এবং ‘লাল জবা’ হ’ল কালী দেবীর প্রিয় ফুল। হিন্দুদের বাড়ীতে এ দু’টি ফুল গাছের চাষ দেখতে পাওয়া যায়। যে ফুল দিয়ে তারা নিয়মিত পূজা দেয়। মাদ্রাসার বইয়ে বাচ্চার হাতে ‘টগর’ ফুলের তোড়ার ছবি দিয়ে তাহ’লে কোন দিকে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে?

উল্লেখ্য হিন্দুমতে ভগবান বিষ্ণুর পসন্দের রং হ’ল সাদা। আর টগর ফুল হ’ল সাদা। আর মা কালীর পসন্দের রং হ’ল রক্তরাঙা জবা। তাহ’লে বইয়ে টগর ও জবা ফুলের ছবি দিয়ে আমাদের বাচ্চাদের কি বিষ্ণু পূজা ও কালী পূজার দিকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে?

একই পৃষ্ঠার মাঝের ছবিতে মেয়েটি ডাব খাচ্ছে। পাশে টগর ফুলের তোড়া নিয়ে ছেলেটি সেদিকে তাকিয়ে আছে। প্রশ্ন : ডাব খাওয়ার ছবি কেন? কারণ-

হিন্দু উপাসনায় নারিকেল এক অপরিহার্য বস্ত্ত। পূর্ণ ঘটের উপরে ডাব স্থাপন না করলে কোনও পূজাই সম্পন্ন হয় না। সমাজ-নৃতাত্ত্বিকদের মতে, পূর্ণ ঘট ও ডাব একত্রে এক বিশেষ প্রজনন-চিহ্ন, যা সভ্যতার আদিকাল থেকে মানুষের কাছে উপাস্য বলে বিবেচিত (অর্থাৎ মেয়েটি হ’ল ঘট, আর ছেলেটি হ’ল ডাব)। অন্যান্য সংস্কৃতিতে নারিকেল বা ডাবের এই ব্যবহার এখন দেখা যায় না। কিন্তু হিন্দু সংস্কৃতিতে ডাব বা নারিকেল আজও বিপুল গুরুত্ব পেয়ে থাকে। পূজা-অর্চনা ছাড়াও জ্যোতিষীরা বিশেষ গুরুত্ব দেয় নারিকেলকে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, নারিকেল মানুষকে দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করে। যেমন-

(১) অশুভ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে প্রতি মঙ্গলবার আধা মিটার লাল কাপড় দিয়ে একটি নারিকেলকে মুড়ে কোন ব্যক্তির চারপাশে ঘুরিয়ে নিতে হয়, তাতেই ওই ব্যক্তি অশুভ থেকে রক্ষা পায়। (২) আর্থিক সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হ’লে প্রতি মঙ্গলবার হনুমান মন্দিরে একটি নারিকেল নিয়ে যাওয়া বিধেয়। সেখানে হনুমান মূর্তির পা থেকে সিঁদুর নিয়ে সেই নারিকেলে স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকতে হবে। সেই সঙ্গে মন্দিরে বসে ‘হনুমান চল্লিশা’ পাঠ করতে হবে। এমনটা ৮ সপ্তাহ করা বিধেয়। (৩) শনিগ্রহের কোপ থেকে রক্ষা পেতে প্রতি শনিবার একটা নারিকেল গঙ্গাজলে ডুবিয়ে ওঁ রামদূতায়ঃ নমঃ মন্ত্র ৭ বার উচ্চারণ করতে হবে। এতে শ্রী হনুমানের প্রসাদপ্রাপ্ত হয়ে শনির কোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। (৪) কালসর্প দোষ থেকে রক্ষা পেতে গেলে একটি শুকনো নারিকেল এবং কম্বল কোন দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করা বিধেয়। উল্লেখ্য যে, স্বস্তিকা চিহ্ন  হ’ল, আদি আর্যদের বিজয় চিহ্ন। পরবর্তীকালে জার্মান নেতা হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫ খৃ.)-এর হিংস্রতার প্রতীক চিহ্ন। 

অথচ মুসলিমদের ঈমান হ’ল ভাল-মন্দ সবকিছুর মালিক আল্লাহ। ‘তিনি যদি কারু অমঙ্গল চান, তা দূর করার ক্ষমতা কারু নেই। আর তিনি যদি কারু মঙ্গল চান, তাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও কারু নেই’ (ইউনুস ১০৭)। তাহ’লে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী পাঠিয়ে আমাদের সন্তানরা কি হিন্দু সংস্কৃতি শিখে আসছে? বইয়ের কোথাও ঈমানী কোন বক্তব্য বা কবিতা নেই। যাতে মুসলিম সন্তানরা আল্লাহর উপরে বিশ্বাসী হ’তে পারে।

(৫৬) পৃ. ২৬ পাঠ-১৯ বর্ণ শিখি : ত থ দ ধ ন

দ্বিতীয় ছবিতে দ ও ধ-এর উদাহরণ হিসাবে দেখা যায় একটি মেয়ে একটি ছেলের ধামায় দই এগিয়ে দিচ্ছে। যেখানে লেখা হয়েছে, দই আনি। ধামা টানি।

প্রশ্ন হ’ল সবকিছু বাদ দিয়ে দই ও ধামা কেন? কারণ-

মন্তব্য : হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী সরস্বতী হ’ল বিদ্যা দেবী। সনাতন ধর্মীয় রীতিতে প্রত্যুষে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর ও চন্দন দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর চরণামৃত নেয় ভক্তরা। পূজার পর দিন পুনরায় পূজার পর চিড়া ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। এরপর পূজা শেষ হয়। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এজন্যই দেখা যায় অধিকাংশ দই ও মিষ্টির দোকান হিন্দুদের মালিকানাধীন।

অতঃপর দই নেওয়ার জন্য অন্যসব বাদ দিয়ে ধামা কেন? কারণ-

প্রতি বছর ফাল্গুন সংক্রান্তির সকালে ঘেঁটুপূজা অনুষ্ঠিত হয়। কারণ ঘেঁটু হ’ল চর্মরোগের দেবতা। আর চর্মরোগ বা খোস-পাঁচড়া সাধারণতঃ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অধিকহারে দেখা দেয়। এই পূজার জন্য লাগে মুড়ি ভাজার পুরোনো ঝুলকালি মাখা একটি মাটির খোলা। তার উপরে তিনটি গোবরের পিন্ড লাগিয়ে সেগুলি কড়ি, সিঁদুর ও ঘেঁটু ফুল দিয়ে সাজানো হয়। খোলার উপরে একটি বস্ত্রখন্ড বিছিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির উঠানে বা একটু দূরে রাস্তার তিনমাথা বা চারমাথার ধারে জনতার মাঝে এটি সম্পন্ন হয়। তখন ছড়া কাটা হয়-

ধামা বাজা তোরা কুলো বাজা

এলো এলো দ্বারে ঘেঁটু রাজা।

পূজার শেষে অল্পবয়সী ছেলেরা মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে খোলাটা ভেঙে দিয়ে হরিবিদ্বেষী ঘেঁটু দেবতাকে অপমান করে। তারপর দেŠড়ে পুকুরে গিয়ে হাত পা ধুয়ে আসে, যাতে তাদের চর্মরোগ না হয়। এরপর মহিলারা ওই বস্ত্রখন্ডটি এনে বাচ্চাদের চোখে বুলিয়ে দেন এবং খোলার ঝুলকালি কাজলের মতো পরিয়ে দেন, যাতে তাদের চোখ ভালো থাকে।

উল্লেখ্য যে, ঘেঁটু বা ঘন্টাকর্ণ হ’ল বাংলার জনসমাজের কল্পিত ঘৃণার্হ এক চর্মরোগের দেবতা, শিবের অনুচর এবং তীব্র হরিবিদ্বেষী। মঙ্গল দেবতা বিষ্ণুর বিপরীতে এই কাল্পনিক বিদ্বেষী দেবতার অবস্থান। বসন্ত ঋতুতে খোস-পাঁচড়া যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেজন্য এই কাল্পনিক অশুভ দেবতাকে মেরে বিদায় জানানো হয়।

প্রশ্ন : তাহ’লে ‘দই আনি। ধামা টানি’। বলে আমাদের বাচ্চাদের কি শিখানো হচ্ছে?

নীচের ছবিতে একটি মেয়ে নৌকায় হাল ধরে বসে আছে, আর ছেলেটি ধামা ভর্তি দই নিয়ে বসে আছে। অতঃপর লেখা হয়েছে, ‘নদীর জলে নাও চলে’।

প্রশ্ন : ‘জলে’ কথাটি হিন্দুরা বলে। মুসলিমরা ‘পানি’ বলে। তারা ‘আবহাওয়া’ বলে জলহাওয়া বা জলবায়ু নয়। তাহ’লে এটা নববই শতাংশ মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের ইসলামী বাংলা ভুলিয়ে হিন্দু বাংলায় অভ্যস্ত করার অপচেষ্টা নয় কি?

(৫৭) পৃ. ৩০ পাঠ-২১ ছড়া

বাক বাকুম পায়রা

মাথায় দিয়ে টায়রা

বউ সাজবে কাল কি?

চড়বে সোনার পালকি?

মন্তব্য : এটি হ’ল অত্র বইয়ের ৩য় ছড়া। রোকনুজ্জামান খান (১৯২৫-১৯৯৯ খৃ.) লিখিত উক্ত কবিতায় ‘বউ সাজবে কাল কি?’ বলে শিশুদের বউ বিষয়ে উৎসুক করে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে শিশুর নৈতিকতা বৃদ্ধির কোন শিক্ষা নেই।

(৫৮) পৃ. ৩৬ পাঠ-২৫ বর্ণ শিখি : শুনি ও বলি  ৎ  ং ঃ  ঁ

এ পৃষ্ঠায় ৪টি ছবির মধ্যে দু’টি ছবি হ’ল, সং সাজে। দুঃখ ভোলে।

মন্তব্য : দু’টি ছবিই ১লা বৈশাখ বর্ষবরণ উৎসবের প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ। যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া একটি ছেলেকে সং সাজিয়ে আর দু’টি মেয়েকে তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে থাকার মধ্যে সন্তানদের কি শিখানো হচ্ছে? এখন তো দেখা যাচ্ছে, এইসব সং সাজা কিশোররাই তাদের পরিচিত কিশোরীদের সম্ভ্রম নষ্ট করছে ও খুন করছে। আরেকটি ছবিতে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরা ছেলেটিকে একটি মেয়ে আদর করে দুঃখ ভোলাচ্ছে। কেন, একটি ছেলে অন্য ছেলেকে বা একটি মেয়ে অন্য মেয়েকে এরূপ আদর করে দুঃখ ভোলাতে পারত না?

(৫৯) পৃ. ৩৯ পাঠ-২৭ :                                                                                                           ছড়া

হনহন পনপন

চলে হনহন  ছুটে পনপন

 ঘোরে বনবন কাজে ঠনঠন...

মন্তব্য : এটি হল বইয়ের ৩য় ছড়া। কবি সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯২৩ খৃ.)-এর লেখা ৫ লাইনের উক্ত ছড়ায় ১ম শ্রেণীর শিশুদের জন্য কি শিক্ষনীয় রয়েছে? তারা যেন ভবিষ্যতে ‘কাজে ঠনঠন’ হয়, সেটাই কি শেখানো হচ্ছে? আজকাল অধিকাংশ শিক্ষিত ভবঘুরেদের দেখলে তো সেটাই মনে হয়।

(৬০) পৃ. ৪৪ পাঠ-৩২  আ-কার

কাকা যায়। ডাব খায়।

খালা যায়। জাম খায়।

মন্তব্য : আ-কার শিখানোর জন্য ‘চাচা’ বাদ দিয়ে ‘কাকা’ কেন? এদেশের কত শতাংশ শিশু ‘কাকা’ বলে? মুসলমানদের বিপরীতে এটা হিন্দুরা বলে থাকে। অথচ হিন্দুদের এ ভাষাটাই মুসলমান ছেলে-মেয়েদের মাদ্রাসায় বসিয়ে শিখানো হচ্ছে। ছবিতে ছেলেটি দাঁড়িয়ে ডাব খাচ্ছে। দাঁড়িয়ে পানি খাওয়া ইসলামী সংস্কৃতির বিরোধী। এর মাধ্যমে পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতি শিখানো হচ্ছে।

আ-কার শিখানোর জন্য ‘খাতা’ বাদ দিয়ে ‘খালা’ কেন? ছেলেটিকে তাহ’লে কি খালাদের প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ জড়তার বদলে তাদের সাথে ফ্রি মেলামেশার দিকে উসকে দেওয়া হচ্ছে? তাছাড়া খালারা কি ‘জাম’ খেতে খেতে রাস্তায় চলে? এর দ্বারা মেয়েদের পর্দাহীনতা শিখানো হচ্ছে।

(৬১) পৃ. ৪৭ পাঠ-৩৫  উ-কার

খুকুর ঘুঙুর। ঝুমুর ঝুমুর।

মুমুর পুতুল। আমের মুকুল।

মন্তব্য : ঘুঙুর, ঝুমুর বা পুতুল কেন? এগুলি কোন সংস্কৃতির ইঙ্গিত বহন করে? এদেশে কয়জন ছেলে-মেয়ে এগুলিতে অভ্যস্ত? ইসলামে গান-বাজনা ও পুতুল-প্রতিমা হারাম। অথচ মুসলিম সন্তানদেরকে মাদ্রাসায় এগুলির তালীম দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ‘মুমু’ কোন ছেলের নাম নাকি মেয়ের নাম, তা বুঝার উপায় কি? উ-কার দিয়ে কোন ইসলামী নাম কি লেখকদের জানা ছিলনা?

(৬২) পৃ. ৪৮ পাঠ-৩৬  ঊ-কার

ময়ূর যায়। নূপুর পায়। ..সূর্য হাসে।

মন্তব্য : আগের পৃষ্ঠায় ঘুঙুর, ঝুমুর ও পুতুল শিখানোর পর এ পৃষ্ঠায় ‘নূপুর’ শিখানো হচ্ছে। তাছাড়া ‘ময়ূর’ চিনানোর জন্য বাচ্চাদেরকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে হবে। যেয়ে দেখবে যে, সেই ময়ূরের পায়ে ‘নূপুর’ নেই। তখন ঐ শিক্ষার্থীর কাছে এটা কি ধোঁকা মনে হবেনা? এভাবে ছোট থেকেই বাচ্চাকে মিথ্যা শিখানো হচ্ছে। তাছাড়া দু’টি চোখ ও ঠোঁট দিয়ে ‘সূর্যে’র হাসি দেখিয়ে কি শিখানো হচ্ছে? সূর্যকে যারা দেবতা বলে ও পূজা করে, এটা কি তাদের খুশী করার জন্য? অথচ মুসলমানরা সূর্য-চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজির স„ৃষ্টকর্তা আল্লাহর ইবাদত করে।   

(৬৩) পৃ. ৫০ পাঠ-৩৮  এ-কার

জেলে জলে জাল ফেলে। মাছ ধরে হেসে খেলে।

 ছেলে মেয়ে খেলা করে।

মন্তব্য : মুসলিম জেলেরা ‘জলে’ জাল ফেলেনা। তারা ‘পানি’তে জাল ফেলে। সেখানে ছেলে ও মেয়ে একসাথে যায় না বা হেসে খেলে মাছ ধরে না। ছেলে ও মেয়ে একসাথে খেলাও করেনা। তাহ’লে এসবের মাধ্যমে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে স্বভাবজাত পর্দার বাঁধন ছিন্ন করার দূরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কি?

(৬৪) পৃ. ৫১ পাঠ-৩৮  ঐ-কার

বৈশাখ মাসে বৈকাল বেলা। সৈকতে বসেছে মেলা।

মন্তব্য : এর মাধ্যমে বৈশাখী মেলার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অথচ এসব ‘মেলা’ ইসলামে নেই।

(৬৫) পৃ. ৫২ পাঠ-৪০  ও-কার

লোপা বসে ছোলা খায়। ঢোল হাতে খোকা যায়।

মন্তব্য : ‘লোপা’ নাম অনৈসলামিক। তাছাড়া মুসলিম সন্তানরা ‘ঢোল’ হাতে রাস্তায় চলে না। মনে করি শিক্ষকদের সন্তানরাও এভাবে ঢোল নিয়ে রাস্তায় চলে না। তাহ’লে এর দ্বারা তাদেরকে হিন্দুদের ঢোল-তবলার দিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে না কি?

(৬৬) পৃ. ৫৩ পাঠ-৪১  ঔ-কার

চৌকা ঘুড়ি। তৈরি করি।

নৌকায় যায় বউ। মৌচাকে আছে মৌ।

মন্তব্য : ছাত্র-ছাত্রীরা কি তাহ’লে পড়া তৈরী বাদ দিয়ে ‘চৌকা ঘুড়ি’ তৈরী করবে? নৌকায় কি কেবল বউ যায়? নৌকা ভরে কি লাউ বাযারে নেওয়া যায় না? তাছাড়া বউ আর মউ-এর মধ্যে মধুর সম্পর্ক শিশুকাল থেকেই কি শিখানো হবে? এর ফলে শিশুদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন না দেখিয়ে স্থূল কামনা-বাসনার দিকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে পুরা বইতে ৫ম পৃষ্ঠায় ‘এত ডাকি তবু কথা, কও না কেন বউ’; ৩০ পৃষ্ঠায় ‘বউ সাজবে কালি কি? চড়বে সোনার পালকি?’ এবং ৫৩ পৃষ্ঠায় ‘নৌকায় যায় বউ। মৌচাকে আছে মৌ’ মোট তিনটি স্থানে শিশুদেরকে ‘বউ’-এর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়েছে। যার পরিণাম ভোগ করছে তারা তরুণ বয়স থেকেই। আজকে ধর্ষণ ও ইভটিজিং-এর মহামারিতে সমাজ ধ্বংস হ’তে চলেছে। এরপরেও বোর্ড কর্মকর্তাদের হুঁশ ফিরেনি।

(৬৭) পৃ. ৫৫ পাঠ-৪৩ কারচিহ্ন দিয়ে শব্দ লিখি

এখানে রয়েছে ঢোল, নূপুর, বীণ অর্থাৎ সাপুড়ের বাঁশির ছবি দেওয়া আছে। সবকিছুতেই হিন্দু সংস্কৃতির প্রোপাগান্ডা।

(৬৮) পৃ. ৫৮ পাঠ-৪৬ রুবির বাগান

‘বাগানের পাশে মাঠ জুড়ে রয়েছে সরষে খেত’।

মন্তব্য : এখানে ‘ক্ষেত’ বানানকে ‘খেত’ বানানো হয়েছে। অথচ এদেশে সর্বদা ‘ক্ষেত’ শব্দটি শস্যক্ষেত অর্থেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু গত ৬/৭ মাস থেকে এ শব্দটির বানান পরিবর্তন করে ‘খেত’ বানিয়ে প্রচার করছে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বহুল প্রচারিত সেক্যুলার দৈনিক পত্রিকাটি। একইভাবে তারা ‘আবহাওয়া’কে ‘জলবায়ু’ ও ‘জলহাওয়া’, ‘ইতিমধ্যে’কে ‘ইতোমধ্যে’, ‘রফতানী’কে ‘রপ্তানি’ বানিয়ে বিকৃতভাবে চালু করেছে। অথচ বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে আরবী, ঊর্দূ, ফার্সী, হিন্দী, সংস্কৃত প্রভৃতি শব্দ সমূহকে আপন করে নেওয়ার মাধ্যমে। আর ‘ক্ষেত’ শব্দটি হিন্দী। যা উর্দূ ও বাংলা উভয় ভাষায় ‘শস্যক্ষেত’ অর্থে বহুল প্রচলিত। জানিনা এখন থেকে রুবির মা রুবিকে দস্তরখানে ‘খেতে’ ডাকলে সে তার বাগানের পাশে সরিষা ‘ক্ষেতে’ চলে যাবে কি না!

ঐরূপ অযৌক্তিক বানান পরিবর্তনের অপপ্রভাব পড়েছে আরবী বানানগুলিতে। যা মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড প্রকাশিত বইসমূহে এবং ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের বানানসমূহে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। যেমন তারা আরবী বানান করেছে ‘আরবি’, ইসলামী বানান করেছে ‘ইসলামি’, ইবতেদায়ী বানান করেছে ‘ইবতেদায়ি’, ঈমানকে বানিয়েছে ‘ইমান’, তাওহীদকে বানিয়েছে ‘তাওহিদ’, নবীকে ‘নবি’, রাসূলকে ‘রাসুল’, মাজীদকে ‘মাজিদ’, তাক্বদীরকে ‘তাকদির’ ইত্যাদি। এইসব ভুল বানান দিয়ে আরবীর মূল অর্থকেই বিকৃত করা হয়েছে।

কবি নজরুল (১৮৯৯-১৯৭৬) চেয়েছিলেন আরবী-ফার্সী সমৃদ্ধ বাংলা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) চেয়েছিলেন সেখান থেকে আরবী-ফার্সী ছাঁটাই করতে। সে যুদ্ধ এখনো চলছে কলিকাতার বাংলা ও ঢাকার বাংলার মধ্যে। অথচ ঢাকার চিহ্নিত বাংলা দৈনিকটি এবং সাথে সাথে বাংলা একাডেমীর ভাষা ও বানানগত আচরণ যেন আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের ঘোর বিরোধী।

১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীতে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার বিরহ বেদনায় নজরুলের লিখিত ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতার ২২তম লাইন ‘উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুনর্বার’ প্রসঙ্গে কবি নিজেই বলেন, ‘কবিগুরুর আপত্তি সত্ত্বেও ‘খুন’-এর বদলে ‘রক্ত’ ব্যবহার আমি করিনি। এই গানটি সেদিন কবিগুরুকে দুর্ভাগ্যক্রমে শুনিয়ে ফেলেছিলাম। তাতে তিনি আপত্তি করে বলেছিলেন, ও লাইনটাকে- ‘উদিবে সে রবি মোদেরই রক্তে রাঙিয়া পুর্নবার’ও করা চলত। আমি বলি, কিন্তু তাতে ওর অর্ধেক ফোর্স কমে যেত’। তিনি বলেন, যেখানে ‘রক্তধারা’ লিখবার সেখানে জোর করে আমি ‘খুনধারা’ লিখি নাই। তাই বলে, ‘রক্ত-খারাবি’ও লিখি নাই। হয় ‘রক্তারক্তি’ না হয় ‘খুন-খারাবি’ লিখেছি’।

‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ ‘আমার কৈফিয়ত’ প্রভৃতি মোট ১০টি কবিতা নিয়ে নজরুলের ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ৬ই জ্যৈষ্ঠ লিখিত ২৬ লাইনের ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতাটির প্রথম লাইনগুলি ছিল নিম্নরূপ।-

দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার

লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার!

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,

ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?

কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।

এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!!

অতঃপর ১৯-২২ চার লাইনে তিনি লেখেন,

কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,

বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!

ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর

উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।

‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে নজরুল ছিলেন ৩৮ বছরের ছোট। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনার সময় ১৯২১ সালটিকে যদি নজরুলের কবি হিসেবে উন্মেষকাল ধরি, তখন রবীন্দ্রনাথ ষাট বছরে পৌঁছে গেছেন। কিন্তু রবীন্দ্র কাব্যবলয় থেকে বের হওয়ার প্রচেষ্টা যেমন কল্লোল যুগের কবিদের মধ্যে ছিল, সেটি নজরুলের মধ্যেও ছিল’।

একইভাবে তিনি তাঁর ৭৫ লাইনের দীর্ঘ ‘কোরবানী’ কবিতার শেষ তিন লাইনে লেখেন-

ওই খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ,

আজ আল্লার নামে জান কোরবানে ঈদের পূত বোধন।

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!

‘বিদ্রোহী’ ‘কোরবানী’ ও ‘মোহররম’ সহ মোট ১২টি কবিতা নিয়ে নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ) প্রকাশিত হয়। ১৯২২ সালের ১২ই আগস্ট নজরুল অর্ধ সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা বের করেন। পত্রিকার ২৬শে সেপ্টেম্বর সংখ্যায় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ নামে নজরুলের একটি রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হয়। ফলে ৮ই নভেম্বর উক্ত সংখ্যাটি বাযেয়াফত করা হয়। অতঃপর ২৩শে নভেম্বর তাঁকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে কলকাতায় আনা হয়। অতঃপর বিচার শেষে এক বছর কারাদন্ড ভোগ করে ১৯২৩ সালের ১৫ই অক্টোবর কলিকাতার আলীপুর জেলখানা থেকে তিনি মুক্তি পান। উল্লেখ্য যে, কারাগারে বছর গণনা করা হয় ৯ মাসে। ১৬ লাইনের উক্ত কবিতাটির প্রথম চার লাইন ছিল নিম্নরূপ।-

আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?

স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।

দেব-শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,

ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?

(৬৯) পৃ. ৬২ পাঠ-৪৮ মুমুর সাত দিন

মন্তব্য : এখানে মুমুর সাতদিনের কর্মতালিকা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একদিনও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত বা শুক্রবারের ইবাদতের কথা নেই। বরং ‘ওইদিন সে খেলাধুলা করে’। এতে কি শিক্ষণীয় রয়েছে?

(৭০) পৃ. ৬৪ পাঠ-৪৯ ছড়ায় ছড়ায় সংখ্যা

মন্তব্য : এখানে ১ থেকে ২০ সংখ্যা গণনা করা হয়েছে ছবি সহ দু’লাইনের ১০টি ছড়ার মাধ্যমে। যার মধ্যে কোনটিতেই কোন শিক্ষণীয় বিষয় নেই। যেমন, ‘পাঁচ আর ছয়। বাঘ দেখে ভয়’। ‘তের আর চৌদ্দ। বাঘে মোষে যুদ্ধ’। ‘এগারো আর বারো। হাতে হাত ধরো’। ছবিতে একটি মেয়ের দু’হাত দু’দিকে দু’টি ছেলে ধরে আছে। এসব কবিতা শিখে যদি যৌবনে ছেলেরা পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয় কিংবা কোন মেয়েকে অপহরণ করে, তাহ’লে তাদের দোষ দেওয়া যাবে কি?

এভাবে ৭২ পৃষ্ঠার বিশাল বইয়ের ৫৬টি পাঠের প্রায় সর্বত্র ছেলে ও মেয়েদের যৌথ ছবিতে ভরা। কোথাও কোন শিক্ষণীয় কবিতা বা গল্প নেই। হ্যাঁ, বইয়ের সর্বশেষ কভার পৃষ্ঠার বাইরে মাঝখানে বড় করে লেখা আছে ‘বড়দের সম্মান কর’। এটা পাঠ্য তালিকার বহির্ভূত। যদিও এই কভার পেজটি সর্বদা নীচেই পড়ে থাকে। আর সম্ভবতঃ সেজন্য বড়দের সম্মান এখন সর্বত্র নীচেই পড়ে আছে। প্রশ্ন হ’ল, প্রথম শ্রেণীর শিশুর জন্য ৭২ পৃষ্ঠার বিশাল বই কেন? তাকে তো ছোট বইয়ে অনেক কিছু শেখানো যেত। এছাড়াও রয়েছে তার ঘাড়ে অন্যান্য বইয়ের বোঝা।

আমার বাংলা বই

ইবতেদায়ি দ্বিতীয় শ্রেণি

পূণর্মুদ্রণ : আগস্ট ২০১৮

(৭১/১) ১ম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের মতো ২য় শ্রেণীর এ বইতেও শুরুতে রয়েছে জাতীয় সংগীত, যা শিরক মিশ্রিত। যা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ‘বঙ্গভঙ্গ’ আন্দোলনের বিরুদ্ধে। সেখানে তিনি বাংলাদেশকে মা দূর্গা কল্পনা করে দুই বাংলা ভাগ হওয়াকে দূর্গা মায়ের অঙ্গচ্ছেদ (vivisection of mother) বলে অভিহিত করেছিলেন। তাছাড়া দুই বাংলা পৃথক হ’লে কুষ্টিয়ার শৈলদহে বসে পূর্ববাংলার কৃষকদের উপরে তার জমিদারী চালানো বন্ধ হয়ে যেত। তাই যেকোন মূল্যে যেন দুই বাংলা এক থাকে, সেদিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাংলা মায়ের বন্দনা গেয়ে তিনি ১৯০৫ সালে উক্ত কবিতা লিখেছিলেন। অতঃপর হিন্দু নেতাদের চরমপন্থী কার্যক্রমের ফলে বাধ্য হয়ে বৃটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করেন। অতঃপর ১৯৪৭ সালে পুনরায় বঙ্গভঙ্গ হয় এবং পূর্ব বঙ্গ ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে স্বাধীন পাকিস্তানের অংশীভূত হয়। অতঃপর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রের উপর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। অতএব স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উক্ত কবিতায় কোন শিক্ষণীয় নেই। বরং বিপরীতটাই রয়েছে।    

(৭২/২) পৃ. ২ ‘ঐশী’ ও ‘ওমর’ এবং ‘দাদিমা’ অতঃপর ৬ পৃষ্ঠায় ‘অমি’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

মন্তব্য : এগুলির মধ্যে ‘ওমর’ বাদে বাকী সবই অনৈসলামী নাম।

(৭৩/৩)  পৃ. ১২  ‘আমাদের দেশ’ কবিতা

                       সোনার ফসল ফলে খেত ভরা ধান

                       সকলের মুখে হাসি, গান আর গান।

মন্তব্য : আ. ন. ম. বজলুর রশীদ (১৯১১-১৯৮৬ খৃ.) লিখিত অত্র কবিতায়  ‘খেত’ বানানে বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে। যদিও বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধান জানুয়ারী ২০১৪-এর ১৭শ সংস্করণে ৩২৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে : ‘খেত’ ‘ক্ষেত’ অর্থ মাঠ, চাষের জমি। সংস্কৃত ‘ক্ষেত্র’; প্রাকৃত ‘খেত্ত’; বাংলা ‘খেত’। অথচ এভাবে ভাগাভাগির কোন প্রয়োজন ছিলনা। যেটা প্রচলিত সেটা রাখাই যথেষ্ঠ ছিল। কেননা বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা দাওয়াত ‘খেতে’ যায়। কিন্তু অন্যের বেগুন ‘ক্ষেতে’ যায়না।

(৭৪/৪)  পৃ. ১৬ ‘শীতের সকাল’

নানা শরিফাকে নিয়ে রোদ পোহাচ্ছেন। হাতে খবরের কাগজ। আর শরিফা বই পড়ছে।

মন্তব্য : এখানে ‘শরিফা’ বানান ভুল। প্রকৃত বানান হবে ‘শরীফা’। অতঃপর বাংলাদেশে কয়জন নানা আছেন, যিনি চেয়ারে বসে শীতের সকালে খবরের কাগজ পড়েন? এছাড়া পুরা গল্পে কোন উপদেশ নেই। আবার নানার দাড়ি হ’ল কাটিং দাড়ি। যা সুন্নাতী দাড়ি নয়।

গল্পের শেষে নানা শরিফাকে বলছেন, ‘বেঁচে থাক বুবু। অনেকগুলো ভাল কাজ করেছ আজ’। অথচ সেখানে কোন দো‘আ নেই। বরং উচিৎ ছিল এটাই বলা যে, আল্লাহ তোমার হায়াত দারায করুন এবং তোমার মঙ্গল করুন! কেননা এ দো‘আর মধ্যে আল্লাহর সন্ধান রয়েছে। যা সন্তানের অন্তরে রেখাপাত করবে। অথচ ‘বেঁচে থাকো’ কথার মধ্যে আল্লাহর সন্ধান নেই। বরং ওটি তাকে নাস্তিক্যবাদের দিকে নিয়ে যাবে। যেমনটি আজকাল রেডিও-টিভিতে প্রায়ই বলা হচ্ছে, ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ইত্যাদি। অথচ ভাল-মন্দ থাকা ও বেঁচে থাকা না থাকা সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন।

(ক্রমশঃ)