আল্লাহ
বলেন, وُجُوهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ- إِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ- ‘সেদিন
অনেক চেহারা উজ্জ্বল হবে’। ‘তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩)।
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি জীবন ও মৃত্যুদাতা। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর নিজস্ব আকার আছে। কিন্তু তা কারু সাথে তুলনীয় নয়। তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন (শূরা ৪২/১১)। তিনি নিরাকার বা শূন্যসত্তা নন। তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলী রয়েছে। যা বান্দার নাম ও গুণাবলীর সাথে তুলনীয় নয়। তিনি সাত আসমানের উপরে আরশে সমুন্নীত। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও শক্তি সর্বত্র বিরাজিত। আসমান-যমীন ও এর মধ্যকার সবকিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং এগুলিকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। ক্বিয়ামতের দিন মুমিন নর-নারী আল্লাহকে তাঁর স্বরূপে দেখবেন। আর সেটাই হবে তাদের জন্য সবচাইতে আনন্দঘন মুহূর্ত। আললাহ বলেন, ‘সেদিন অনেক চেহারা উজ্জ্বল হবে’। ‘তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩)।
এবিষয়ে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ قَالَ :
يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟
فَيَقُولُونَ أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ
وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ : فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا
أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلٰى رَبِّهِمْ عَزَّ
وَجَلَّ ثُمَّ تَلاَ : لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ-
‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি
অতিরিক্ত আরও কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেননি?
আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি?
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ স্বীয় পর্দা উন্মোচন করবেন। তখন
তাঁকে দেখার চাইতে প্রিয়তর কোন বস্ত্ত আর থাকবে না’। আর এটিই হ’ল
‘অতিরিক্ত’। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন,لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى
وَزِيَادَةٌ، ‘যারা সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ও আরও কিছু
অতিরিক্ত অর্থাৎ আল্লাহর দর্শন লাভ’ (ইউনুস ১০/২৬)।[1]
হযরত জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, ‘আল্লাহ সেদিন উজ্জ্বল চেহারায় হাসতে হাসতে মুমিনদের সাক্ষাৎ দিবেন...(মুসলিম হা/১৯১)।
আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, লোকেরা বলল,يَا
رَسُولَ اللهِ هَلْ نَرٰى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- هَلْ تُضَارُّونَ فِى الْقَمَرِ
لَيْلَةَ الْبَدْرِ؟ قَالُوْا لاَ يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ : فَهَلْ
تُضَارُّونَ فِى الشَّمْسِ لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ؟ قَالُوْا لاَ يَا
رَسُولَ اللهِ. قَالَ : فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذٰلِكَ- ‘হে আল্লাহর
রাসূল! আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে ক্বিয়ামতের দিন দেখতে পাব? তিনি বললেন,
মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য বা পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়?
তারা বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা অনুরূপভাবেই তোমাদের
প্রতিপালককে সেদিন দেখতে পাবে’।[2] জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর বর্ণনায়
এসেছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا-
‘তোমরা সত্বর তোমাদের প্রতিপালককে স্পষ্ট দেখতে পাবে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে,
তিনি বলেন, আমরা একদিন পূর্ণিমার রাতে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে বসেছিলাম। তখন
তিনি আমাদের বললেন,إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هٰذَا
الْقَمَرَ- ‘তোমরা সত্বর তোমাদের প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে এই
পূর্ণিমার চাঁদের মত’।[3]
মু‘তাযেলী বিদ্বানগণ ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ দর্শনে বিশ্বাসী নন। তাঁরাإِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ- ‘তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’-এর ব্যাখ্যা করেন,إِلٰى ثَوَابِ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ‘তাদের প্রতিপালকের ছওয়াবের দিকে’ তাকিয়ে থাকবে। অথবা إِلٰى رَحْمَةِ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ، أَوْ إِلٰى ثَوَابِهِ أَوْ مُلْكِهِ ‘তার প্রতিপালকের রহমতের দিকে’ বা ‘তার ছওয়াবের দিকে বা তার রাজত্বের দিকে’। তাবেঈ বিদ্বান মুজাহিদ (২১-১০৪ হি.) থেকেও উক্ত মর্মে একটি ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে, যা ছহীহ নয় (কুরতুবী)। নিঃসন্দেহে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ মুতাওয়াতির হাদীছ সমূহের বিপরীতে এসব কাল্পনিক ব্যাখ্যার কোন মূল্য নেই।
আল্লামা যামাখশারী (৪৬৭-৫৩৮ হি.) إِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ--এর তাফসীরে বলেছেন,فَاخْتِصَاصُهُ بِنَظَرِهِمْ إِلَيْهِ لَوْ كَانَ مَنْظُورًا إِلَيْهِ، مُحَالٌ، ‘তাদের প্রতিপালকের দিকে বাক্যটি আগে আনা হয়েছে তাঁকে খাছ করার জন্য, যদি তিনি দর্শন দান করেন, বিষয়টি অসম্ভব’ (কাশশাফ, আল-বাহরুল মুহীত্ব)। এ ব্যাখ্যা তিনি তাঁর মু‘তাযেলী আক্বীদা অনুযায়ী দিয়েছেন, যেটি ভুল। তাছাড়া বাক্যটি আগে আনা হয়েছে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য, খাছ করার জন্য নয় (মুহাক্কিক কাশশাফ)। কারণ দুনিয়াতে কোন চোখ আল্লাহকে দেখতে পাবে না। যেমন আল্লাহ বলেন, لاَ تُدْرِكُهُ الْأَبْصارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصارَ، ‘কোন দৃষ্টি তাঁকে (দুনিয়াতে) বেষ্টন করতে পারে না। বরং তিনিই সকল দৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করেন’ (আন‘আম ৬/১০৩)। যেমন মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ বলেছিলেন, لَنْ تَرَانِي، ‘তুমি কখনোই আমাকে দেখতে পাবে না’ (আ‘রাফ ৭/১৪৩)। যামাখশারী ও তাঁর সম আক্বীদার মুফাসসিরগণ দুনিয়ার দৃষ্টিতে আখেরাতকে বিচার করেছেন। অথচ এটি ফাসেদ ক্বিয়াস।
ক্বিয়ামতের দিন মুমিনদের জন্য আল্লাহকে প্রত্যক্ষ দর্শনের হাদীছসমূহ ‘মুতাওয়াতির’। যা অবিরত ধারায় বর্ণিত এবং সনদের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে তর্কাতীত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাহমিয়া, মু‘তাযিলা, খারেজী প্রভৃতি ভ্রান্ত ফের্কার ন্যায় অনেক সুন্নী বিদ্বানও এ ব্যাপারে সন্দেহবাদে পতিত হয়েছেন (দ্র. তাফসীরুল কুরআন ২৯ তম পারা সূরা ক্বলম ৬৭/৪২ ও সূরা ক্বিয়ামাহ ৭৫/২২-২৩ আয়াত)। অথচ হাদীছের প্রকাশ্য অর্থ অনুযায়ী এখানে আল্লাহ দর্শনকে পূর্ণিমার চাঁদ দর্শনের স্পষ্টতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, আল্লাহকে চাঁদের দৃশ্যের সাথে নয়। যেমনটি শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) ধারণা করেছেন (থিসিস ১২৪ পৃ.)। কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকগণ তাদের অবিশ্বাস ও কপট বিশ্বাসের কারণে এই মহা সৌভাগ্য হ’তে বঞ্চিত হবে।
ইমাম
মালেক (রহঃ)-কে অত্র আয়াতের ব্যাখ্যা إِلٰى ثَوَابِهِ ‘তার ছওয়াবের দিকে’
করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হ’লে তিনি বলেন, كَذَبُوا ‘ওরা মিথ্যা বলেছে’।
‘তাহ’লে তারা সূরা মুত্বাফফেফীন ১৫ আয়াতের ব্যাখ্যায় কি বলবে? যেখানে
আল্লাহ কাফেরদের সম্পর্কে বলেছেন,كَلَّآ إِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ
يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوبُونَ- ‘কখনই না’। তারা অবশ্যই সেদিন তাদের
প্রতিপালকের দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৫)। অতঃপর
ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হি.) বলেন, লোকেরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহকে সরাসরি
দেখবে। যদি মুমিনগণ তাঁকে দেখতে না পান, তাহ’লে কাফিরদের দর্শন থেকে বঞ্চিত
করার অর্থ কি হবে?[4]
শায়েখ আলবানী
(১৩৩৩-১৪২০ হি.) বলেন, ঐসব লোকেরা কত বড় ভ্রান্তির মধ্যে আছে, যারা তাদের
ইমামদের তাক্বলীদ করতে গিয়ে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ দর্শনকে অস্বীকার করে।
অথচ তাদের কাছে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআনকে তারা রূপক (مَجَازٌ) নামে
অর্থহীন (يُعَطِّلُونَهُ بِاسْمِ الْمَجَازِ) করেছেন। অতঃপর সুন্নাহে তারা
সন্দেহ পোষণ করেন একক ছাহাবীর বর্ণনা (حَدِيثُ آحَادٍ) বলে। অথচ ‘আল্লাহ
দর্শন’ বিষয়ের হাদীছ সমূহ মুতাওয়াতির, যা অবিরত ধারায় বর্ণিত।[5]
ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) বলেন,أَمَا وَاللهِ لَوْ لَمْ يُوقِنْ مُحَمَّدُ بْنُ إِدْرِيسَ أَنَّهُ يَرٰى رَبَّهُ فِي الْمَعَادِ لَمَا عَبَدَهُ فِي الدُّنْيَا- ‘আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস (শাফেঈ)-এর নিকট এটা স্পষ্ট না হ’ত যে, সে তার প্রতিপালককে আখেরাতে দেখতে পাবে, তাহ’লে সে কখনো দুনিয়াতে তার ইবাদত করতো না’ (কুরতুবী; তাফসীর সূরা মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৫)।
প্রকৃত ঈমানদারগণ সর্বদা আল্লাহর দর্শন কামনা করেন। সেকারণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাত তাদের নিকট সর্বাধিক কাম্য। মৃত্যুর পর্দা উন্মোচিত হ’লেই সে দেখতে পায় এক আনন্দময় জগত। ক্বিয়ামতের দিন বিচার শেষে মুমিনগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় দর্শন দান করবেন। বস্ত্ততঃ এটাই হবে মুমিনদের জন্য সর্বাধিক প্রিয় মুহূর্ত।
আল্লাহর দীদার কামনা (رجاء لقاء الله) :
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সর্বদা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের জন্য উন্মুখ থাকে। আর সেকারণেই আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) মৃত্যুর প্রাক্কালে কেবলই বলেছিলেন,اللَّهُمَّ الرَّفِيْقَ الْأَعْلَي- ‘হে আল্লাহ! হে সর্বোচ্চ বন্ধু’! আর এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, এর দ্বারা আমি বুঝলাম যে, এখন তিনি আর আমাদের পসন্দ করবেন না’।[6]
বস্ত্ততঃ দুনিয়াদাররা দুনিয়া ছাড়তে চায় না। তারা এখানকার ক্ষণস্থায়ী আরাম-আয়েশ থেকে বের হ’তে চায় না। পক্ষান্তরে ঈমানদারগণ দুনিয়ার চাইতে আখেরাতকে ভালবাসেন। তারা এখানকার কষ্ট-মুছীবতকে হাসিমুখে বরণ করেন আখেরাতে চিরস্থায়ী শান্তি লাভের জন্য। এ কারণেই বলা হয়েছে, الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ- ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার ও কাফেরের জন্য জান্নাত’।[7] আর তাই মুমিন দ্রুত দুনিয়া ছেড়ে আখেরাতে যেতে চায় তার প্রিয়তমের সাক্ষাৎ লাভের জন্য। ঠিক যেমন কারাবন্দী বা প্রবাসী ব্যক্তি পাগলপারা হয়ে ছুটে আসে তার পরিবার ও প্রিয়তম সাথীদের কাছে। এখানে মৃত্যু কামনা নয়। বরং প্রিয়তমের দীদার কামনাই মুখ্য। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللهِ كَرِهَ اللهُ لِقَاءَهُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে অপসন্দ করে, আল্লাহ তার সাক্ষাতকে অপসন্দ করেন’।[8] ফলে আল্লাহ যে কাজ পসন্দ করেন, মুমিন সর্বদা সে কাজেই লিপ্ত থাকে। যে কাজ তিনি পসন্দ করেন না, মুমিন সে কাজ কখনই করে না। যদিও শয়তান তাকে তা করার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করে। আল্লাহ বলেন,...فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَآءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَّلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا- ‘...অতএব যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে। সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহফ ১৮/১১০)। অর্থাৎ লোক দেখানো বা লোককে শুনানোর জন্য ইবাদত না করে, বরং সে যেন খালেছ অন্তরে স্রেফ আল্লাহকে রাযী-খুশী করার জন্য ইবাদত করে। নইলে সেটা ‘রিয়া’ হবে, যা ছোট শিরক। যা হ’ল কবীরা গোনাহ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ। যার ফলে উক্ত লোক দেখানো ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। মোটকথা নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাস ও শরী‘আত অনুমোদিত নেক আমল এবং ইখলাছ হ’ল পরকালে আল্লাহর দীদার লাভের একমাত্র উপায়।
মুমিন যতদিন দুনিয়ায় থাকে, ততদিন সে তার জান-মাল, সময় ও শ্রম সবকিছু ব্যয় করে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। যেন খুশীমনে তার প্রতিপালকের সামনে নেকীর ডালি নিয়ে সে হাযির হ’তে পারে। অন্যদিকে তার প্রতিপালক তাকে খুশী হয়ে পুরস্কারের ডালি ভরে দেন। আল্লাহ বলেন,وَاتَّقُوْا يَوْمًا تُرْجَعُوْنَ فِيْهِ إِلَى اللهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُوْنَ- ‘আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)। বস্ত্ততঃ এটিই ছিল বান্দার প্রতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ বাণী। যা রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর মাত্র ৭ বা ২১ দিন পূর্বে নাযিল হয় (কুরতুবী)।
পাপ-পঙ্কিলতায়
ভরা এ পৃথিবীকে মুমিন তার জন্য পরীক্ষাস্থল মনে করে। আল্লাহ তাকে পরীক্ষার
জন্য যতদিন চাইবেন, ততদিন সে এখানে থাকবে সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের সাথে,
সর্বোচ্চ নেকী সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে। জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে
জিজ্ঞেস করল,أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ! أَيُّ النَّاسِ
خَيْرٌ؟ قَالَ: مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُهُ. قَالَ: فَأَيُّ
النَّاسِ شَرٌّ؟ قَالَ: مَنْ طَالَ عُمُرُهُ وَسَاءَ عَمَلُهُ- ‘কোন
ব্যক্তি উত্তম? তিনি বললেন, যার বয়স বৃদ্ধি পেল এবং আমল সুন্দর হ’ল। পুনরায়
সে জিজ্ঞেস করল, কোন ব্যক্তি সবচেয়ে মন্দ? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, যার
বয়স বৃদ্ধি পেল এবং আমল মন্দ হ’ল’।[9]
মাঝে-মধ্যে আল্লাহ তার নেককার বান্দাকে কঠিন বিপদে ফেলেন বা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন, তাকে সাবধান করার জন্য। যাতে সে আবার পূর্ণোদ্যমে নেকী অর্জনে লিপ্ত হয়। জান্নাতের সর্বোচ্চ ‘তাসনীম’ ঝর্ণার মিশ্রণযুক্ত পানীয় লাভের জন্য সে যেন প্রতিযোগিতা করে। যেমন আল্লাহ বলেন,تَعْرِفُ فِي وُجُوْهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيْمِ- يُسْقَوْنَ مِنْ رَّحِيْقٍ مَّخْتُوْمٍ- خِتَامُهُ مِسْكٌ وَّفِي ذَلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ- وَمِزَاجُهُ مِنْ تَسْنِيْمٍ- عَيْنًا يَّشْرَبُ بِهَا الْمُقَرَّبُوْنَ- ‘তুমি তাদের চেহারাসমূহে স্বাচ্ছন্দ্যের প্রফুল্লতা দেখতে পাবে’ (২৪)। ‘তাদেরকে মোহরাংকিত বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে’ (২৫)। ‘তার মোহর হবে মিশকের। আর এরূপ বিষয়েই প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত’ (২৬)। ‘আর তাতে মিশ্রণ থাকবে তাসনীমের’ (২৭)। ‘এটি একটি ঝর্ণা, যা থেকে পান করবে নৈকট্যশীলগণ’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/২৪-২৮)।
নিঃসন্দেহে আল্লাহর দীদার ও তার দর্শন কেবল জান্নাতীরাই লাভ করবে, জাহান্নামীরা নয়। আল্লাহ বলেন,كَلَّآ إِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَ- ثُمَّ إِنَّهُمْ لَصَالُو الْجَحِيْمِ- ‘কখনই না। তারা সেদিন তাদের প্রতিপালকের দর্শন হ’তে বঞ্চিত থাকবে’। ‘অতঃপর তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৫-১৬)। ফলে কাফের-মুশরিক ও মুনাফিকরা আল্লাহর দর্শন থেকে বঞ্চিত হবে।
অনেক মানুষ মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু তাতে আল্লাহর দীদার লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকে না। ঐ মৃত্যু তার জন্য ক্ষতির লক্ষণ। সেকারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُوْلُ يَا لَيْتَنِى مَكَانَهُ مَا بِهِ حُبُّ لِقَاءِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ- ‘অতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না কোন ব্যক্তি কারু কবরের পাশ দিয়ে যাবে এবং বলবে, হায় যদি আমি তোমার স্থানে হ’তাম! অথচ তার মধ্যে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকবে না’।[10] অন্য বর্ণনায় এসেছে,لَيْسَ بِهِ الدِّيْنُ إِلاَّ الْبَلاَءُ- ‘তার মধ্যে দ্বীন থাকবে না বিপদের ভয় ব্যতীত’।[11] অর্থাৎ আল্লাহর দীদার লাভের জন্য সে মৃত্যু কামনা করবে না। বরং দুনিয়ার কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য সে মৃত্যু কামনা করবে। এরূপ মৃত্যু আদৌ আল্লাহর কাম্য নয়।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, মুমিন কবরবাসীকে
উঠিয়ে বসানো হবে ভয়হীন ও দ্বিধাহীন চিত্তে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে,
তুমি কোন দ্বীনের উপর ছিলে? সে বলবে, ইসলাম। অতঃপর বলা হবে, এই ব্যক্তি কে?
সে বলবে, মুহাম্মাদ, যিনি আল্লাহর রাসূল। যিনি আমাদের নিকটে আল্লাহর পক্ষ
হ’তে স্পষ্ট প্রমাণাদি সহ এসেছিলেন। অতঃপর আমরা তাঁকে সত্য বলে জেনেছিলাম।
তখন বলা হবে, তুমি কি আল্লাহকে দেখেছ? সে বলবে, কারু পক্ষে দুনিয়াতে
আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। অতঃপর তার জন্য জাহান্নামের দিকের দরজা খুলে
দেওয়া হবে। তখন সে সেখানকার ভয়ংকর দৃশ্য দেখবে যে, আগুনের ফুলকি সমূহ একে
অপরকে দলিত-মথিত করছে। এসময় তাকে বলা হবে, দেখ কি বস্ত্ত থেকে আল্লাহ
তোমাকে রক্ষা করেছেন। অতঃপর তার জন্য জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবে
এবং সে জান্নাতের সুখ-সম্ভার দেখতে থাকবে। তখন তাকে বলা হবে এটাই তোমার
ঠিকানা। তুমি দৃঢ় বিশ্বাসের উপরে ছিলে। উক্ত বিশ্বাসের উপরেই তুমি
মৃত্যুবরণ করেছ এবং আল্লাহ চাহেন তো তার উপরেই তুমি পুনরুত্থিত হবে।[12]
বিভিন্ন গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল প্রমুখ বিদ্বানগণ স্বপ্নে আল্লাহকে ১০০ বার দেখেছেন বলে যেসব লিখিত হয়েছে, সেগুলি সবই ভিত্তিহীন ও পরবর্তী যুগের অতিভক্ত গল্পকারদের বানোয়াট কাহিনী মাত্র। কারণ কোন মানুষ জাগ্রত অবস্থায় হৌক বা ঘুমন্ত অবস্থায় হৌক, আল্লাহকে দেখতে পায় না। কেননা আল্লাহ বলেন,لاَ تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ- ‘কোন দৃষ্টি তাঁকে (দুনিয়াতে) বেষ্টন করতে পারে না। বরং তিনিই সকল দৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করেন। তিনি অতীব সূক্ষ্মদর্শী এবং ভিতর-বাহির সকল বিষয়ে বিজ্ঞ’ (আন‘আম ৬/১০৩)। আল্লাহর আকার কেউ ধারণ করতে পারেনা। তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই। যেমন আল্লাহ বলেন,لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَّهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ- ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই। তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন’ (শূরা ৪২/১১)। মূসা (আঃ) আল্লাহকে দেখেননি (আ‘রাফ ৭/১৪৩)। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও মে‘রাজে আল্লাহকে দেখেননি। বরং তাঁর নূর দেখেছিলেন।[13] এমনকি রাসূল (ছাঃ)-কে যারা দুনিয়াতে দেখেনি, তারা তাঁকে স্বপ্নে দেখতে পারেনা। যেমন তিনি বলেন,مَنْ رَّآنِى فِى الْمَنَامِ فَسَيَرَانِى فِى الْيَقَظَةِ أَوْ لَكَأَنَّمَا رَآنِى فِى الْيَقَظَةِ لاَ يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِى- ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখেছে, সে আমাকে সত্তর দেখতে পাবে জাগ্রত অবস্থায়। কেননা শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারেনা’।[14] অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা হ’লে ঐ ব্যক্তি দুনিয়াতে আমাকে দেখবে অথবা আখেরাতে দেখবে (মিরক্বাত)। যারা কখনো দেখেনি, তারা স্বপ্নে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখার দাবী করলে সেটির সত্যায়ন করবে কে?
বর্তমানে অনেক পীরের গল্প শোনা যায় যে, তাদের কাছে গিয়ে তাদের বানোয়াট অযীফা সমূহের উপর আমল করলে আল্লাহকে দেখা যায় এবং আল্লাহ তার মনস্কামনা পূর্ণ করেন। অনেকে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখতে পান। কেউ তাদের দরগাহ গেটের নাম রাখে ‘বাবে রহমত’। কেউ আবার খানক্বার পুকুরে ওযূ করার সময় বদনা ছুঁড়ে মারেন। আর ভক্তদের বলেন, কা‘বা ঘরে কুকুর ঢুকছিল, তাই খেদিয়ে দিলাম’। বস্ত্ততঃ এগুলি সবই ভক্তের পকেট ছাফ করার অপকৌশল মাত্র। এইসব ধর্ম ব্যবসায়ী থেকে সাবধান!
যারা আল্লাহ দর্শনে বিশ্বাস করেন, তাদের পুরস্কার হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,جَنَّتَانِ مِنْ فِضَّةٍ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا. وَمَا بَيْنَ الْقَوْمِ وَبَيْنَ أَنْ يَّنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلاَّ رِدَاءُ الْكِبْرِيَاءِ عَلَى وَجْهِهِ فِي جَنَّةِ عَدْنٍ- ‘দুটি জান্নাত আছে এমন, যেগুলির পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী রুপার তৈরি। অন্য দুটি জান্নাত আছে এমন, যেগুলির পাত্রাদি ও সমুদয় সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি। জান্নাতীগণ ‘আদন’ নামক জান্নাতে আল্লাহর দীদার লাভ করবে। এ সময় তাদের ও আল্লাহর মাঝে তাঁর মহিমার চাদর ব্যতীত আর কোন অন্তরায় থাকবে না’।[15] ‘মহিমার চাদর’ অর্থ আল্লাহর মর্যাদার প্রভাব এবং ‘আদন’ অর্থ স্থায়ী বসবাসের স্থান। এর দ্বারা অন্য নামের জান্নাতকেও বুঝানো হয়েছে। কেননা সকল জান্নাতই চিরস্থায়ী বসবাসের জন্য (মিরক্বাত)।
উপসংহার : জান্নাতে
মুমিনগণ আল্লাহকে সরাসরি দেখবেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে এজন্য
শর্ত হ’ল দুনিয়াতে একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহর ইবাদত করা। যেমন রাসূল (ছাঃ)
বলেন,أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَّمْ تَكُنْ تَرَاهُ
فَإِنَّهُ يَرَاكَ- ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে
পাচ্ছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহ’লে এমনভাবে ইবাদত কর যেন তিনি
তোমাকে দেখছেন’।[16] সেই সাথে জান্নাতে আল্লাহর দীদার কামনার আকাঙ্খী হওয়া।
কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللهِ أَحَبَّ اللهُ
لِقَاءَهُ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতকে ভালবাসে, আল্লাহ তার
সাক্ষাতকে ভালবাসেন’।[17]
জান্নাতে দয়াময় প্রতিপালক ‘সালাম’ দিয়ে ঐসব সৎকর্মশীল মুমিনদেরকে সাদর সম্ভাষণ জানাবেন। যেমন তিনি বলেন, سَلامٌ، قَوْلاً مِّنْ رَّبٍّ رَّحِيمٍ- ‘অসীম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে তাদেরকে ‘সালাম’ বলে সম্ভাষণ জানানো হবে’ (ইয়াসীন ৩৬/৫৮)। তিনি আরও বলেন,تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلاَمٌ، وَأَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيمًا- ‘যেদিন তারা তাঁর (আল্লাহর) সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের সম্ভাষণ হবে ‘সালাম’। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান’ (আহযাব ৩৩/৪৪)। ফেরেশতারাও চারদিক থেকে তাদের সালাম করবে। আল্লাহ বলেন,وَالْمَلآئِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ- سَلامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ- ‘ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে’। ‘তারা বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বিধায় তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হৌক! কতই না সুন্দর তোমাদের এই পরিণাম গৃহ’ (রা‘দ ১৩/২৩-২৪)। আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতে তাঁকে দর্শনের সৌভাগ্য দান করুন- আমীন!