আর কেন? এবার জনগণের কাছে আসুন!

গণতন্ত্রের পরিভাষায় জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। অথচ জনপ্রতিনিধিরাই এখন জনগণকে হত্যা করছে নির্বিচারে। প্রত্যেকে একে অপরকে দোষ দিচ্ছে। তাতে লাভ কি? নিহত ভোটারটি কি আর বেঁচে উঠবে? বা আগুনে পোড়া মানুষটি কি কখনও নেতাদের ক্ষমা করবে? ৭দিন চলে গেছে অনেক আগে। আর কেন? এবার ফিরে আসুন জনগণের আদালতে। সফলতা ও ব্যর্থতার বিচারভার তাদের উপর ছেড়ে দিন। মনে রাখতে হবে দায়িত্বহীন আর দায়িত্বশীল কখনও এক নয়। দায়িত্বহীনরা যা খুশী করতে পারে। কিন্তু দায়িত্বশীলরা স্বেচ্ছাচারী হ’তে পারে না। তারা অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হ’তে পারেন না। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে ট্রেনে একবার বোমা হামলা হ’ল। তাতে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী দায়-দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করলেন। আমাদের দেশে গত ৫৪ দিনে ১৪ বার ট্রেনে নাশকতা হ’ল। কিন্তু কেউ তো দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করলেন না। তাহ’লে দু’দেশের দুই গণতন্ত্রে নিশ্চয় কোন পার্থক্য আছে। সেটা কি, তা সহজেই অনুমেয়।

আমরা মুসলমান। এদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা হ’ল ইসলাম। আল্লাহর বিধানকে স্বাধীনভাবে মেনে চলে সুখ-শান্তির সাথে জীবন-যাপন করার জন্যই মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা ১৯৪৭ সালে পৃথক রাষ্ট্রের অংশ হয়েছিল। অতঃপর ১৯৭১ সালে একই মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান লাভ করে। আজ যদি সেই ইসলামী চেতনা হারিয়ে যায়, তাহ’লে এদেশের স্বাধীন সত্তা একদিন হারিয়ে যাবে। এপার বাংলা-ওপার বাংলার মাঝে বিভক্তির কোন যুক্তি আর অবশিষ্ট থাকবে না। ইসলামী চেতনা হ’ল মানুষের স্বভাবধর্ম এবং মানবতার সর্বোচ্চ চেতনা। যা সকল মানুষকে এক আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে গণ্য করে। আর আল্লাহর বিধান সকল মানুষের জন্য সমভাবে কল্যাণকর। যেমন আল্লাহর সৃ©র্ষ্ট চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস সবার জন্য কল্যাণকর। অজ্ঞরাই কেবল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র নাম নিয়ে ইসলামকে সাম্প্রদায়িক বলতে চায়। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে চায় এবং নিজেদের মনগড়া আইনে জনগণকে আল্লাহর গোলাম হওয়ার বদলে নিজেদের গোলাম বানাতে চায়।

এদেশের ১৬ কোটি মানুষের ইসলামী চেতনার সর্বোচ্চ বাস্তবায়নকারী হ’ল এদেশের সরকার ও আদালত। কিন্তু তারা কি সেটা করছেন? নিঃসন্দেহে নয়। ফলে রাজনীতির নামে স্রেফ ক্ষমতার জন্য হিংসা-প্রতিহিংসার মাধ্যমে যারা দেশকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে, তাদেরকেও মরতে হবে এবং আল্লাহর আদালতে দাঁড়াতে হবে? কি নিয়ে দাঁড়াবেন সেদিন তাঁর সামনে? আল্লাহ মানুষকে ক্ষমতা দেন তাকে পরীক্ষা করার জন্য। সেই পরীক্ষায় বিগত বা বর্তমান ক্ষমতাসীনরা কি উত্তীর্ণ হ’তে পেরেছেন? তারা কি আবুবকর ও ওমরের মত নিঃস্বার্থ ও ত্যাগী হয়ে গণমানুষের সেবক হ’তে পেরেছেন? পেরেছেন কি দ্বীনদার মানুষের হৃদয়ের গহীনে প্রবেশ করতে? হাযারো ফাসেকের গগণবিদারী শ্লোগানের চাইতে যাদের প্রাণখোলা দো‘আ আল্লাহ সাগ্রহে কবুল করে থাকেন এবং একজন তাওহীদবাদী প্রকৃত মুমিনের জন্য তিনি কিয়ামত পিছিয়ে দিবেন’ (মুসলিম)। সন্তানহারা মায়ের কান্না, স্বামীহারা বিধবার বুকফাটা আর্তনাদ, বুলেটবিদ্ধ তরুণের বাপ-মায়ের বোবা চাহনি, পেট্রোলবোমায় ঝলসানো মানুষের তীব্র অন্তর্বেদনা, কারাগারে ধুঁকে মরা হাযারো নিরপরাধ মানুষের আকুল ফরিয়াদ আর মযলূমের হৃদয় উৎসারিত দীর্ঘশ্বাস যিনি শুনেন, তিনি সবকিছুর চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিবেনই। কিছুটা দেরীতে অথবা এখনই। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ, আল্লাহর প্রতিশোধ নেমে আসার আগেই বিরত হৌন! দায়িত্বশীলরাই সেটা করবেন সর্বাগ্রে।

নমরূদ, ফেরাঊন, তৈমুর, হালাকু, চেঙ্গীয, হিটলার, মুসোলিনী, লেনিন, স্ট্যালিন, মাওসেতুং প্রমুখ বিশ্বসেরা অত্যাচারী শাসকদের সবাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের নাম নিতেও ভয়ে আঁৎকে ওঠে। তৈমুর লং-এর এক পা ল্যাংড়া ছিল। কুরআনের হাফেয ছিলেন। ফিকহ শাস্ত্রে পান্ডিত্য ছিল। কিন্তু মানুষ মেরে আনন্দ পেতেন। হাযার হাযার নিরপরাধ মানুষের মাথার খুলি দিয়ে সুউচ্চ মিনার বানিয়ে তিনি অন্যদের ভয় দেখাতেন। এ যুগের অত্যাচারীরা এটমবোমা মেরে নিমেষে লাখো বনু আদমকে হত্যা করে বিশ্বকে ভয় দেখিয়েছে। আজও তারা পৃথিবীর দিকে দিকে সেটা করে চলেছে। অন্যদিকে ইরাকের জনৈক স্বঘোষিত খলীফার (?) হুকুমে তার লোকেরা মানুষকে গাজর-মূলার মত শিরশ্ছেদ করে বিশ্বব্যাপী ভিডিও দেখাচ্ছে। উদ্দেশ্য মানুষকে ভয় দেখানো। এরা ইসলামের সাচ্চা মুজাহিদ সেজে ইসলামের শিক্ষাকে বিদ্রুপ করছে। লাভ কি হচ্ছে তাতে? মানুষ কি তাদের ভয়ে পরিশুদ্ধ হচ্ছে? নাকি সবাই তাদের গোলাম হচ্ছে? চূড়ান্ত বিচারে এদের সবারই ফলাফল শূন্য। বাংলাদেশের হিংসান্ধ নেতৃবৃন্দ কি এদেরই মত ইতিহাসের পাতায় কালো তালিকাভুক্ত হ’তে চান?

বিগত দিনে আল্লাহর গযবে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ৬টি সমৃদ্ধ জাতির কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তারা হ’ল কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, কওমে লূত, মাদিয়ান ও কওমে ফেরাঊন। তাদের সকলের ধ্বংসের কারণ ভিন্ন ভিন্ন থাকলেও চরিত্রগত কারণ ছিল একটাই- দাম্ভিকতা। যার ফলে তারা সুন্দর পৃথিবীটাকে ফাসাদ ও বিশৃংখলায় তছনছ করে ফেলেছিল। ফলে নেমে এসেছিল চূড়ান্ত গযব। নূহের কওমকে সর্বব্যাপী প্লাবণে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল (নূহ ২৫)। পরবর্তী সমৃদ্ধ জাতি ‘আদ-এর নেতারা বলেছিল, আমাদের চাইতে শক্তিধর জাতি আর কে আছে? (হা-মীম সাজদাহ ১৫)। তারা অযথা সুউচ্চ টাওয়ার ও মযবুত প্রাসাদরাজি নির্মাণ করত। তারা দুর্বলদের উপর নিষ্ঠুরভাবে আঘাত হানতো এবং মানুষের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাতো (শু‘আরা ১২৮-৩০)। অবশেষে নেমে এল ইলাহী প্রতিশোধ। সাত রাত্রি ও আট দিন ব্যাপী প্রবল ঘূর্ণিবায়ু ও বজ্রাঘাতে তারা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল (হা-ক্কাহ ৬-৮)। ‘আদ-এর পরবর্তী সমৃদ্ধ ছিল ছামূদ জাতি। তারা ধ্বংস হয়েছিল তাদের ন’জন নেতার কারণে। সমাজে অনর্থ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের কাজ (নমল ৪৮)। তারা তাদের নবী ছালেহকে তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, আল্লাহর গযব আনো দেখি, যার ভয় তুমি দেখাচ্ছ? (আ‘রাফ ৭৭)। তাদের তিন দিন তওবা করার অবকাশ দেওয়া হ’ল। কিন্তু তারা মানেনি। অবশেষে ৪র্থ দিন সকালে নেমে এল ভয়াবহ এক নিনাদ ও প্রবল ভূমিকম্প। যাতে নিমেষে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল (হূদ ৬৭-৬৮)। লূত, মাদিয়ান ও কওমে ফেরাঊনের গযবের ইতিহাস আরও মর্মান্তিক। অতএব মানুষের আয় বৃদ্ধি বড় কথা নয়, বরং সুখ-শান্তি বৃদ্ধিই বড় কথা। সুতরাং হে মানুষ! তওবা করে ফিরে এস আল্লাহর পথে। তাহ’লেই তোমরা সফলকাম হবে’ (নূর ৩১)। আল্লাহ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা কর! -আমীন (স.স.)