সমাজ পরিবর্তনে চাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা

إِنَّ اللهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِقَوْمٍ سُوءاً فَلاَ مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ-(الرعد 11)

‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের প্রতি অমঙ্গল ইচ্ছা করেন, তখন তা রদ হবার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (রা‘দ ১৩/১১)

বর্ণিত আয়াতাংশটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগের পক্ষে কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। একই মর্মে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلاَّ مَا سَعَى ‘মানুষ তার চেষ্টার বাইরে কিছুই পায় না’ (নাজম ৫৩/৩৯)।

বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষকে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। সাথে সাথে এটাও বলে দিয়েছেন যে, তিনি আগ বেড়ে কোন জাতির বা সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করবেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তনে সচেষ্ট হবে। রাসূল (ছাঃ) স্বীয় জীবন দিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি যদি কেবল কা‘বা গৃহে বসে মানুষকে উপদেশ দিতেন তাহ’লে তাঁকে প্রশংসাকারী লোকের সংখ্যা গুণে শেষ করা যেত না। অন্ততঃ পক্ষে তাঁর কোন শত্রু থাকত না। কিন্তু সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে মানুষ তৈরীর কাজ করতে গিয়ে তিনি কায়েমী স্বার্থবাদী সমাজনেতাদের চোখের বালি হন। নানাবিধ গীবত-তোহমত ও চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অবশেষে হত্যা প্রচেষ্টা এবং হিজরত। অতঃপর সেখানে গিয়েও হামলা ও যুদ্ধ বিগ্রহের মূল কারণ ছিল একটাই অহীর বিধানের আলোকে সমাজ সংস্কার প্রচেষ্টা। প্রচলিত শয়তানী বিধানের পরিবর্তে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকে বলা হয় ‘জিহাদ’। যাবতীয় শিরকী আক্বীদা-বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাওহীদ ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে চেয়েছিলেন। এই প্রচেষ্টায় তিনি ও তাঁর সাথীগণ জীবনপাত করেছেন। ফলে আল্লাহর রহমতে সমাজ পরিবর্তিত হয় এবং পরবর্তীতে ইসলামী খেলাফত কায়েম হয়। আজও বিশ্বের দিকে দিকে যে অগণিত মুসলিমের বসবাস এবং দৈনিক অসংখ্য মানুষ যারা ইসলাম কবুল করে ধন্য হচ্ছে, তার মূলে রয়েছে সেদিনের সমাজ পরিবর্তন প্রচেষ্টা। আজও যারা তাওহীদ ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে চান, তাদেরকে শেষনবী (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া তরীকায় সে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যা মানুষের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন পাল্টে দেবে। অতঃপর সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তন আসবে। এমনকি যথার্থ প্রচেষ্টা থাকলে দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় পরিবর্তন আসবে। কারণ সত্যের বিভাসে মিথ্যার চাকচিক্য বেশীক্ষণ টিকে না।

জানা আবশ্যক যে, এই পরিবর্তন প্রচেষ্টা হ’তে হবে সার্বিক জীবনে এবং হ’তে হবে ইসলামী তরীকায়। নইলে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে প্রচলিত ত্বাগূতী তরীকায় কোন ইসলামী দল ক্ষমতায় গেলেও তাতে সমাজের কোন পরিবর্তন আসবে না। বরং ইসলামের বদনাম হবে ও সমাজ আরও বিনষ্ট হবে। তাই সর্বাগ্রে তাগূতী রাস্তা ছাড়তে হবে ও আল্লাহর রাস্তা ধরতে হবে। মানুষকে হক ও বাতিল তথা ইসলাম ও জাহেলিয়াতের পার্থক্য বুঝাতে হবে। একজন মুমিন যেখানেই বসবাস করুন না কেন, তাকে সর্বদা এককভাবে ও সাংগঠনিকভাবে ব্যক্তি ও সমাজ পরিবর্তনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এতে তিনি নিহত হলে বা স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করলে উভয় অবস্থায় তিনি শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, সে শহীদ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ’।[1]

ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহ :

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় কয়েকটি ভ্রান্ত আক্বীদার জন্ম হয়েছে। যেমন (১) তাক্বদীরকে অস্বীকারকারী আক্বীদা। তারা বলেন, যেমন কর্ম তেমন ফল। অতএব তাকদীর বলে কিছু নেই। এদেরকে ‘ক্বাদারিয়া’ বলা হয়।

(২) বস্ত্তবাদী আক্বীদা : যারা বলেন বস্ত্তই সব। যথাযোগ্য ব্যবস্থাপনা এবং উপায়-উপকরণ থাকলে কাংখিত পরিবর্তন সম্ভব। অন্য কারু সাহায্যের প্রয়োজন নেই। এরা নিজেদেরকে সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ বলেন। (৩) যুক্তিবাদী আক্বীদা : যারা যুক্তির উপর নির্ভরশীল এবং পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে সবকিছু যুক্তির মাধ্যমে করতে চান। এরা মু‘তাযিলা বলে পরিচিত। (৪) নাস্তিক্যবাদী আক্বীদা : যারা বলেন, মানুষ নিজ প্রচেষ্টায় সবকিছু করতে পারে। আল্লাহ বলে কিছু নেই। এদেরকে নিরীশ্বরবাদী বা প্রকৃতিবাদী বলা হয়। আল্লাহ বলেন, তারা বলে, একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন। এখানেই আমরা মরি ও বাঁচি। কালের আবর্তনই আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্ত্ততঃ এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল ধারণা ভিত্তিক কথা বলে থাকে’ (জাছিয়াহ ৪৫/২৪)। কিয়ামত সম্পর্কে তারা বলে, ‘... আমরা জানিনা কিয়ামত কি? আমরা মনে করি এটি একটি ধারণা মাত্র এবং এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই’ (জাছিয়াহ ৪৫/৩২)। (৫) অদৃষ্টবাদী আক্বীদা : যারা আয়াতের শেষাংশের ভিত্তিতে বলেন, আল্লাহই সবকিছু করেন। তিনি যখন কারু ধ্বংস চান, তখন মানুষ নিজেই সেদিকে এগিয়ে যায়। এদের ভ্রান্তির বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘মুশরিকরা সত্বর বলবে, যদি আল্লাহ চাইতেন, তাহ’লে আমরা শিরক করতাম না বা আমাদের বাপ-দাদারাও করত না। আর কোন বস্ত্তকে আমরা হারামও করতাম না। বস্ত্ততঃ এভাবেই তাদের পূর্ব যুগের অবিশ্বাসীরা স্ব স্ব রাসূলদের মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল। অবশেষে তারা আমাদের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করেছিল। বলে দাও, তোমাদের কাছে (তোমাদের দাবীর পক্ষে) কোন প্রমাণ আছে কি? থাকলে আমাদের সামনে তা পেশ কর। মূলতঃ তোমরা কেবল ধারণার অনুসরণ করে থাক এবং অনুমানভিত্তিক কথা বল’ (আন‘আম ৬/১৪৮)

অথচ এবিষয়ে সঠিক আক্বীদা এই যে, মানুষকে তার সাধ্যমত সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। রোগী ঔষধ খাবে। কিন্তু ভরসা থাকবে আল্লাহর উপর। সর্বদা এ বিশ্বাস মযবুত রাখতে হবে যে, রোগ ও তা আরোগ্য দানের মালিক আল্লাহ। এতে বান্দার বা ডাক্তারের কোন হাত নেই। বান্দা চেষ্টা করবে। কিন্তু পূর্ণতা আল্লাহর হাতে। সফলতা ও ব্যর্থতার মালিক তিনি। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার সমাজ পরিবর্তনে সাধ্যমত চেষ্টা করলেন। কিন্তু বাহ্যতঃ ব্যর্থ হলেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে মদীনায় হিজরত করলেন। পথিমধ্যে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি ছওর গিরিগুহায় আত্মগোপন করে থাকলেন তিনদিন। এ সময় গুহা মুখে শত্রুর পদচারণা দেখে ভীত সাথীকে সান্ত্বনা দিয়ে তিনি বললেন, চিন্তিত হয়ো না। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’ (তওবা ৯/৪০)। ফলে আল্লাহর হুকুমে শত্রুর দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরে গেল। তিনি ও তাঁর সাথী নিরাপদ থাকলেন।

পক্ষান্তরে ওহোদ যুদ্ধকালে তীরন্দায বাহিনী শেষ মুহূর্তে গিয়ে প্রচেষ্টা বাদ দেয় এবং গণীমত সংগ্রহে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে মুসলিম বাহিনী সাক্ষাত বিজয় থেকে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায়। এখানে আল্লাহ তীরন্দাযদের পরিবর্তনের কারণে যুদ্ধের অবস্থা পরিবর্তন করে দেন। অবশ্য আয়াতের অর্থ এটা নয় যে, ব্যক্তি তার নিজস্ব ভুলের কারণেই কেবল বিপদগ্রস্ত হবে। বরং অনেক সময় অন্যের কারণে ব্যক্তির উপর বিপদ এসে থাকে। যেমন ওহোদ যুদ্ধে তীরন্দাযদের বৃহদাংশের ভুলের কারণে সেনাপতিসহ সংখ্যালঘু অংশ সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়েও নিহত হন। যার পরিণামে পুরা মুসলিম বাহিনীর উপর বিপর্যয় নেমে আসে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়,أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ ‘আমরা কি ধ্বংস হব, অথচ আমাদের মধ্যে রয়েছেন বহু সৎকর্মশীল মানুষ? স্ত্রী যয়নব বিনতে জাহশের এরূপ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخُبْثُ ‘হ্যাঁ! যখন পাপ আধিক্য লাভ করবে’।[2]

উপরোক্ত হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, পাপের প্রতি মানুষ খুব সহজে এবং দ্রুতবেগে ধাবিত হয়। যেমন তীরন্দায বাহিনীর ৫০ জনের ৪০ জনই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আদেশ ও তাদের সেনাপতির আদেশ অমান্য করে দুনিয়া লাভের প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। দ্বিতীয়তঃ পাপের কাজ চাকচিক্যপূর্ণ ও লোভনীয় হওয়ায় দ্রুতবেগে তা সমাজে বিস্তার লাভ করে। আর অধিকাংশ মানুষ তা গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে পাপের প্রতিরোধ ও সৎকর্ম সম্পাদনের কাজ আড়ম্বরহীন ও কঠিন হওয়ায় মানুষ ঝুঁকি নিতে ভয় পায় এবং তাদের সংখ্যা কম হয়। নিঃসন্দেহে তাদের পুরস্কারও বেশী। যেকারণ তারাই হবেন কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর মনোনীত বিজয়ী দল বা ফিরক্বা নাজিয়াহ।

উক্ত হাদীছে আরেকটি বিষয় প্রতিভাত হয় যে, পাপ প্রসারের জন্য নেতা বা সংগঠনের তেমন কোন প্রয়োজন হয় না। কেবল একটা ঝোঁক ও হুজুগই যথেষ্ট। কিন্তু মিথ্যার প্রতিরোধ ও সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর নামে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ আমীর ও মামূরের প্রয়োজন হয়। তাই ইমারত ও বায়‘আত বিহীন কোন ঠুনকো সংগঠন দিয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব নয়। ঐগুলি কোন ইসলামী সংগঠন হিসাবেও স্বীকৃত নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, হামযা, তালহা, যুবায়ের প্রমুখ একদল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানবায সাথী ছিলেন বলেই সে যুগে প্রচলিত মিথ্যার স্রোত প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল। যদিও দলের মধ্যে সুবিধাভোগী মুনাফিক ও চক্রান্তকারীদের অপতৎপরতা সর্বদাই অব্যাহত ছিল। এদের ব্যাপারে সতর্ক থেকেই হকপন্থীদের কাফেলা এগিয়ে যাবে কিয়ামত অবধি।

এক্ষণে সমাজ পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য বিষয় হ’ল তিনটি : (১) আক্বীদার পরিবর্তন। যেটা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। মাক্কী সূরা সমূহে বলতে গেলে এ বিষয়েই সর্বাধিক আলোচিত হয়েছে। (২) নিজস্ব আচরণের পরিবর্তন। কেননা আক্বীদা ও আচরণ দ্বিমুখী হলে বা সুবিধাবাদী হলে তা সমাজ পরিবর্তনে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। (৩) নির্দিষ্ট ইমারতের অধীনে সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলে সমৃদ্ধ নিবেদিতপ্রাণ একদল কর্মীবাহিনী। যেমন আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, حَسْبُكَ اللهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ ‘তোমার জন্য আল্লাহ ও তোমার অনুসারী মুমিনগণই যথেষ্ট’ (আনফাল ৮/৬৪)। তিনি বলেন, তুমি বলে দাও, এটিই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ মহাপবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)। যদিও আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, أَلَيْسَ اللهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ‘আল্লাহ কি তার বান্দার জন্য যথেষ্ট নয়? (যুমার ৩৯/৩৬)। এর অর্থ বান্দার জন্য সর্বাবস্থায় কেবল আল্লাহ যথেষ্ট। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের জন্য একক নেতৃত্বের অধীনে একদল আল্লাহভীরু কর্মীবাহিনী প্রয়োজন। একারণেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমাদের উপর জামা‘আতবদ্ধ জীবন অপরিহার্য এবং বিচ্ছিন্ন জীবন নিষিদ্ধ’।[3] কেননা বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে বা ছাগলকে নেকড়ে বাঘ ধরে খেয়ে নেয়’।[4] তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন জামা‘আতবদ্ধ জীবনকে অপরিহার্য করে নেয়’।[5] এখানেও শয়তানী ধোঁকায় পড়ে মুসলিম উম্মাহ যেন ধর্মের নামে শতধা বিচ্ছিন্ন না হয়, সেজন্য আল্লাহ কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلاَ تَفَرَّقُوْا ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে ধারণ কর এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩)। কিন্তু মুসলমানেরা আল্লাহর উক্ত নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে ধর্মের নামে অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়েছে এবং হাবলুল্লাহকে ছেড়ে অসংখ্য আব্দুল্লাহকে অাঁকড়ে ধরেছে। যেটা ছিল অভিশপ্ত ইহূদীদের রীতি। যে বিষয়ে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে সাবধান করে বলেন, إِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعاً لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ- ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং নিজেরা দলে দলে খন্ড-বিখন্ড হয়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। অতঃপর (কিয়ামতের দিন) তিনি তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবেন’ (আন‘আম ৬/১৫৯)। ইহূদী-নাছারা ও মুসলিম উম্মাহর শিরক ও বিদ‘আতপন্থী সকল মানুষ, যারা ফির্কা নাজিয়াহ ছেড়ে নিজেদের ফাসিদ রায় ও ক্বিয়াসের অনুসারী হয়ে দলে-উপদলে বিভক্ত হয়েছে। অতঃপর সেটাকেই উত্তম ভেবেছে, তাদের প্রতি আল্লাহ উপরোক্ত সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।

পরিশেষে দরসে বর্ণিত আয়াতটির সরলার্থ এই যে, নবীগণের তরীকায় আল্লাহর পথে দাওয়াত এবং শয়তানী পথ সমূহের বিরুদ্ধে আপোষহীন জিহাদের মাধ্যমেই কেবল শিরকী সমাজ পরিবর্তন করা এবং ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আর এজন্য প্রয়োজন আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভরশীল একদল যোগ্য কর্মীবাহিনী এবং আল্লাহর পথের নিঃস্বার্থ দাঈ। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন- আমীন!

[1]. মুসলিম হা/১৯১৫; মিশকাত হা/৩৮১১ ‘জিহাদ’ অধ্যায়

[2]. বুখারী হা/৩৩৪৬; মুসলিম হা/২৮৮০।

[3]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৬৩।

[4]. আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১০৬৭

[5]. তিরমিযী হা/২১৬৫।