নাস্তিক্যবাদ

বর্তমানে অনেকে বলছেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই। এর সরলার্থ হ’ল অনৈসলামিক বাংলাদেশ চাই। কেউ বলছেন, নাস্তিক্যবাদও একটি ধর্ম। অতএব তাকে রক্ষা করাও আমাদের কর্তব্য। কেউ বলছেন, রাসূল (ছাঃ)-কে গালি দিলেও সে মুসলমান। কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, এরা কোনটাই বুঝেন না। এক্ষণে আমরা কুরআন ও হাদীছের আলোকে তুলে ধরব নাস্তিক্যবাদ বা কুফর কাকে বলে? ‘কুফর’ অর্থ ঢেকে দেওয়া। পারিভাষিক অর্থ- আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত ইসলামী শরী‘আতকে অস্বীকার করা। যার বিপরীত হ’ল ঈমান। কুফরী দুই প্রকার : (১) ঐ কুফরী যা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। (২) যা খারিজ করে দেয় না। যেমন ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী ও পরস্পরে যুদ্ধ করা কুফরী’ (বুখারী)। এই কুফরী অর্থ মহাপাপ। যা তওবা ব্যতীত মাফ হয় না। প্রথম প্রকার কুফরী ৬ প্রকার : (ক) ইসলামে মিথ্যারোপ করা (নমল ৮৩-৮৪) (খ) অস্বীকার করা (নমল ১৪; বাক্বারাহ ৮৯) (গ) হঠকারিতা করা (বাক্বারাহ ৩৪) (ঘ) অন্তরে বিশ্বাস রাখা ও মুখে অস্বীকার করা (নিসা ৬১) (ঙ) এড়িয়ে চলা (হা-মীম সাজদাহ ৩-৫) (চ) সন্দেহ করা (ইবরাহীম ৯)। এগুলি তিনভাবে হয়ে থাকে : (১) বিশ্বাসগতভাবে। যেমন কাউকে আল্লাহ বা তাঁর গুণাবলীতে শরীক সাব্যস্ত করা বা অসীলা নির্ধারণ করা। আল্লাহর ইবাদতের ন্যায় অন্যকে সম্মান প্রদর্শন করা। যেমন কোন কিছুর সম্মানে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা, আল্লাহর ন্যায় অন্যকে মঙ্গলামঙ্গলের অধিকারী মনে করা ইত্যাদি। আল্লাহর স্ত্রী-পুত্র নির্ধারণ করা, তাঁর কৃত হারামকে যেমন সূদ-ব্যভিচার, মদ্যপান ইত্যাদিকে হালাল ধারণা করা। (২) কথার মাধ্যমে। যেমন আল্লাহ বা তাঁর রাসূলকে বা ইসলামকে গালি দেওয়া, হেয় করা, উপহাস ও ব্যঙ্গ করা। কুরআন বা তার কোন আয়াতকে অস্বীকার বা তাচ্ছিল্য করা (তওবাহ ৬৫)। (৩) কাজের মাধ্যমে। যেমন মূর্তি বা কবরে সিজদা করা। পবিত্র কুরআনকে তাচ্ছিল্যভরে ছুঁড়ে ফেলা বা পুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। যে ব্যক্তি এগুলি করবে, সে ব্যক্তি নিঃসন্দেহে কাফের। কোন মুসলিম এটা করলে সে মুরতাদ হবে। তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যা আদালতের মাধ্যমে সরকার কার্যকর করবে। না করলে ঐ সরকার কবীরা গোনাহগার হবে এবং তাকে আখেরাতে আল্লাহর নিকট জওয়াবদিহি করতে হবে। যারা আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, হাদীছ, ছালাত, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও কুৎসা-কটূক্তিতে লিপ্ত হয়, তারা এবং তাদের প্রকাশ্য সমর্থনকারী মহল পরিষ্কারভাবে কাফির। যদিও তাদের নাম বাহ্যতঃ ইসলামী হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের ৬টি স্তম্ভের  কোন একটিকে অস্বীকার করে সে কাফের। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্বীকার করে, কিন্তু শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ), কুরআন, ফেরেশতা, বিগত ইলাহী কিতাব ও নবী-রাসূলগণ, আখেরাতে জবাবদিহিতা এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দে অবিশ্বাস করে সে কাফের।

যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্বীকার করে। কিন্তু তাঁর বিধান সমূহকে অস্বীকার করে, সে কাফির। পক্ষান্তরে যদি বিধান সমূহকে স্বীকার করে, কিন্তু তার উপর আমল না করে, সে ব্যক্তি যালেম ও ফাসেক (মায়েদাহ ৪৪, ৪৫, ৪৭)। কোন সরকার এটা করলে সেও একই পর্যায়ভুক্ত হবে। তওবা না করা পর্যন্ত তারা আল্লাহর নিকটে ক্ষমা পাবে না। তাদের মাধ্যমে যত লোক আল্লাহর বিধান অমান্য করবে বা মান্য করতে অপারগ হবে, সকলের পাপভার ঐ লোকদের উপরে চাপবে, যাদের কারণে লোকেরা উক্ত পাপে লিপ্ত হয় (নাহল ২৫)

যারা কাফের-মুশরিকদের কাফের মনে করে না। বরং তাদের মনগড়া ধর্মকে সঠিক মনে করে, তারাও কাফের হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি নিজেদের মনগড়া বিধানকে ইসলামী বিধানের চাইতে উত্তম মনে করে, ইসলামের কোন কোন বিধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তার প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে, আল্লাহ-রাসূল ও কুরআন বা হাদীছের প্রতি কটূক্তি করে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করে, সে ব্যক্তি কাফের। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরী করে এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে চিরকাল থাকবে। এরা হ’ল সৃষ্টির অধম’। ‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, তারাই হ’ল সৃষ্টির সেরা’। ‘তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রতিপালকের নিকটে। চিরস্থায়ী বসবাসের বাগিচাসমূহ; যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও তাঁর উপরে সন্তুষ্ট। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে তার পালনকর্তাকে ভয় করে’ (বাইয়েনাহ ৬-৮)। আল্লাহ আমাদেরকে নাস্তিক্যবাদ থেকে রক্ষা করুন- আমীন! (স.স.)