রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি ব্যঙ্গোক্তি

গত ৩০শে সেপ্টেম্বর’২০ ফ্রান্সের ম্যাগাজিন ‘শার্লি এবদো’র সর্বশেষ সংস্করণের প্রচ্ছদে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ব্যঙ্গ করে আঁকা ১২টি কার্টুন ছাপা হয়। এর পক্ষকাল পরে ১৬ই অক্টোবর ফ্রান্সের জনৈক স্কুল শিক্ষক ক্লাসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ছাত্রদের সামনে রাসূল (ছাঃ)-এর ব্যঙ্গ কার্টুন প্রদর্শন করেন। সেখানকার মুসলিম কমিউনিটি এর বিরোধিতা করে। একজন ইমাম মসজিদ থেকে এর বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রতিবাদের ডাক দেন। এরই মধ্যে গত ২৩শে অক্টোবর শুক্রবার ঐ শিক্ষক চেচেন এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। ফলে তাকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে ফ্রান্স জুড়ে চলছে সর্বত্র মুসলিম কমিউনিটির বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হামলা ও কঠোর পদক্ষেপ সমূহ। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ উক্ত ইমামের মসজিদ বন্ধ করে দেন। বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। চারদিকে ধরপাকড় শুরু হয় এবং প্রকাশ্য জনসভায় তিনি মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এর আগে অক্টোবরের শুরুতে তিনি ‘ইসলাম ধর্ম সংকটে’ বলে পশ্চিমা বিশ্বে বিতর্ক তৈরী করেন। এই ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলি ২০০৫ সালে প্রথম প্রকাশ করেছিল ডেনমার্কের ‘জিল্যান্ড পোস্ট’ পত্রিকা। এরপর কয়েকবার ফ্রান্সের ‘শার্লি এবদো’ ম্যাগাজিন ঐ ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলি ছাপায়। ২০১৫ সালে পুনরায় মহানবীকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনগুলি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে তিনি প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে উদার মত পোষণ করেন। এমনকি সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মুসলিম নারীদের হিজাব নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে মত দেন। কিন্তু ২০২০ সালের ২রা অক্টোবর তিনি সারা বিশ্বে ইসলাম একটি ‘সংকটকালীন অবস্থা’ অতিক্রম করছে বলে মত প্রকাশ করেন এবং ইসলামী উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ডিসেম্বরে একটি আইন উত্থাপন করবেন বলে ঘোষণা দেন। নিঃসন্দেহে এটি ছিল ভোটে পাস করার জন্য জনতুষ্টিবাদ মাত্র। আমেরিকা ও ভারতসহ বিভিন্ন বস্ত্তবাদী দেশে যার এখন চর্চা চলছে।

ব্যঙ্গোক্তি, কটূক্তি বা অপবাদ রটানো কোন ভদ্রলোকের কাজ নয়। কিন্তু নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে চিরকাল এক ধরনের অলস মস্তিষ্ক ব্যক্তিরা এরূপ করে গেছে। এর মাধ্যমে তাদের অবিশ্বাসী মন কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পেয়েছে। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর যুগে মক্কার মুশরিক নেতারা এ নিকৃষ্ট কাজটি সুচতুরভাবে সম্পন্ন করেছিল। এজন্য তারা হজ্জের মওসুমকে বেছে নিয়েছিল। কারণ ঐ সময় সারা বিশ্ব থেকে মানুষ হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কায় সমবেত হয়। নেতারা সিদ্ধান্ত নিল যে, মুহাম্মাদকে হত্যা করার চাইতে তার বিরুদ্ধে অপবাদ রটানোর কাজটাই সবচাইতে বেশী কার্যকর হবে। এর দ্বারা যেমন প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করা যাবে। তেমনি সাধারণ মানুষ দ্রুত সেটা লুফে নিবে। ফলে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত ব্যঙ্গোক্তি ও অপবাদ সমূহ তৈরী করল।

যেমন- তিনি (১) পাগল (২) কবি। ‘তারা বলল, আমরা কি একজন কবি ও পাগলের জন্য আমাদের উপাস্যদের পরিত্যাগ করব?’ (ছাফফাত ৩৭/৩৬)। (৩) জাদুকর (৪) মহা মিথ্যাবাদী। ‘কাফেররা বলল, এ লোকটি একজন জাদুকর ও মহা মিথ্যাবাদী’ (ছোয়াদ ৩৮/৪)। (৫) পুরাকালের উপাখ্যান বর্ণনাকারী। ‘এটা পূর্ববর্তীদের মিথ্যা উপাখ্যান ব্যতীত কিছুই নয়’ (আনফাল ৮/৩১)। (৬) অন্যের সাহায্যে মিথ্যা রচনাকারী। ‘তারা বলে যে, তাকে শিক্ষা দেয় একজন মানুষ’ (নাহল ১৬/১০৩)। (৭) মিথ্যা রটনাকারী। ‘কাফেররা বলে, এটা বানোয়াট ছাড়া কিছুই নয় যা সে উদ্ভাবন করেছে এবং অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে এব্যাপারে সাহায্য করেছে’ (ফুরক্বান ২৫/৪)। (৮) গণৎকার। ‘অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক। তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহে তুমি গণৎকার নও বা পাগল নও’ (তূর ৫২/২৯) (৯) ইনি তো সাধারণ মানুষ, ফেরেশতা নন। ‘তারা বলে যে, এ কেমন রাসূল যে খাদ্য ভক্ষণ করে ও হাট-বাজারে চলাফেরা করে? তার প্রতি কেন ফেরেশতা নাযিল করা হ’ল না, যে তার সাথে থাকতো সদা সতর্ককারী রূপে?’ (ফুরক্বান ২৫/৭)। (১০) পথভ্রষ্ট। ‘যখন তারা ঈমানদারগণকে দেখত, তখন বলত, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/৩২)। (১১) ধর্মত্যাগী। ‘আবু লাহাব বলত, তোমরা এর আনুগত্য করো না। কেননা সে ধর্মত্যাগী মহা মিথ্যাবাদী’ (আহমাদ হা/১৬০৬৯, ৩/৪৯২ পৃ.)। (১২) পিতৃধর্ম বিনষ্টকারী (১৩) জামা‘আত বিভক্তকারী (সীরাতে ইবনু হিশাম ১/২৯৫)। (১৪) জাদুগ্রস্ত। ‘যালেমরা বলে, তোমরা তো কেবল একজন জাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছ’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৪৭)। (১৫) ‘মুযাম্মাম’। আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত) নামের বিপরীতে ‘মুযাম্মাম’ (নিন্দিত) নামে ব্যঙ্গ কবিতা বলত (ইবনু হিশাম ১/৩৫৬)। (১৬) রা‘এনা। মদীনায় হিজরত করার পর সেখানকার দুরাচার ইহূদীরা রাসূল (ছাঃ)-কে ‘রা‘এনা’ (رَاعِنَا) বলে ডাকত (বাক্বারাহ ২/১০৪)। তাদের মাতৃভাষা হিব্রুতে যার অর্থ ছিল شَرِيْرُنَا ‘আমাদের মন্দ লোকটি’। এইসব অপবাদের জওয়াবে আল্লাহ বলেন, ‘দেখ ওরা কিভাবে তোমার নামে (বাজে) উপমা সমূহ প্রদান করছে। ওরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। অতএব ওরা আর পথ পেতে সক্ষম হবে না’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৪৮; ফুরক্বান ২৫/৯)। কুৎসা রটনাকারীদের বিরুদ্ধে যুগে যুগে এটাই হ’ল সর্বোত্তম জবাব (সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৩য় মুদ্রণ ৩১৫ পৃ.)

অতএব দেখা যাচ্ছে যে, নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গোক্তির বিষয়টি অতি পুরাতন। যদিও তা ইসলামের অগ্রযাত্রাকে কখনোই রুখে দিতে পারেনি। বরং বাড়িয়ে দিয়েছে। আধুনিক যুগে ১৯৮০-এর দশকে কুরআনের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের সালমান রুশদী লিখিত ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ (শয়তানের উক্তি সমূহ), ’৯০-এর দশকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ ও পাবনার দাঊদ হায়দারের ‘কালো সূর্যের কালো জ্যোৎসায় কালো বন্যায়’ নামে লিখিত ব্যঙ্গ কাব্য সমূহের নাম করা যায়। যেখানে হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ), যিশুখ্রীষ্ট এবং গৌতম বুদ্ধের বিরুদ্ধে অবমাননাকর উক্তি সমূহ ছিল। বর্তমানে রুশদী নিউইয়র্কে এবং শেষোক্ত দু’জন কলিকাতায় নির্বাসিত। এছাড়াও নাম করা যায় ১৯৯১ সালে প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক নীলফামারীর আনিসুল হকের ব্যঙ্গ কার্টুন সমূহ। অতঃপর ২০১০ সালের মার্চে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপযেলার জনৈক প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মজুমদার ১০ম শ্রেণীতে পড়ানোর সময় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কুরআন মানুষের বানানো একটি সাধারণ বই’। তিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে নিকৃষ্টতম উক্তি করেন। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে ঢাকার নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দার ও ব্লগার আসিফ-এর ব্যঙ্গ কার্টুন সমূহ। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা আসিফ মুহিউদ্দীন নিজেকে ‘খোদা’ দাবী করে এবং ঢাকা শহরের মসজিদগুলিকে পাবলিক টয়লেট বানানো উচিৎ বলে মন্তব্য করে (দ্র. আত-তাহরীক ১৬/৮ সংখ্যা, মে ২০১৩)

বলা বাহুল্য এসবের কারণে ইসলামের প্রতি অমুসিলমদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের গতি অপ্রতিহতভাবে এগিয়ে চলে। ইতিমধ্যেই জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গোলা মার্কেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে জার্মানী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পরিণত হবে। লন্ডনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের (১৯৯৭-২০০৭) শ্যালিকা সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী লরেন বুথ ২০১০ সালে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর আমেরিকাতে ইসলাম গ্রহণের হার পূর্বের যেকোন সময়ের চাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙার পর এবং বর্তমানে মোদী যুগে মুসলমানদের উপরে নির্যাতনের হার যত বাড়ছে, সেখানে ইসলাম গ্রহণের হার তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে বিশ্বের সর্বত্র ইসলাম তার আদর্শিক শক্তি বলে যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তাতে সেদিন আর বেশী দূরে নয়, যেদিন রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হবে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে এমন কোন মাটির ঘর বা পশমের ঘর (অর্থাৎ তাঁবু) বাকী থাকবে না, যেখানে আল্লাহ ইসলামের বাণী পৌঁছাবেন না, সম্মানী ব্যক্তির ঘরে সম্মানের সাথে এবং অপমানিতের ঘরে অপমানের সাথে। এক্ষণে আল্লাহ যাদেরকে সম্মানিত করবেন, তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণের যোগ্য করে দিবেন। আর যাদেরকে তিনি অপমানিত করবেন, তারা (কর দানের মাধ্যমে) ইসলামের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হবে’ (আহমাদ হা/২৩৮৬৫)

জ্ঞানী ব্যক্তিগণ বহু পূর্ব থেকেই মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা করে গেছেন। যেমন- (১) ফরাসী ঐতিহাসিক লেমারটিন (১৭৯০-১৮৬৯ খৃ.) বলেন, ‘দার্শনিক, বাগ্মী, ...একটি ধর্মরাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহাম্মাদ। আমরা জিজ্ঞেস করি, তাঁর চাইতে শ্রেষ্ঠ মানুষ আর কেউ আছে কি? (২) ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির স্বনামধন্য নেতা রোজার গার্দী (১৯১৩-২০১২) বলেন, ইসলামী সভ্যতার অবদানকে অস্বীকার করাই যেন সাম্রাজ্যবাদী ও জাতীয়তাবাদীদের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে (অথচ এর তুলনীয় কিছুই নেই)। (৩) জার্মানীর সাবেক চ্যান্সেলর ড. গুষ্টাফ বুইর (১৮৭০-১৯৪৪) বলেন, মুহাম্মাদ রক্তপিপাসু ও স্বেচ্ছাচারী আইনের পরিবর্তে পবিত্র ও মহান আইন পদ্ধতির প্রচলন করেন। (৪) বৃটিশ ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল (১৭৯৫-১৮৮১) বলেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশারী ছিলেন মুহাম্মাদ। আমি বলছি, স্বর্গের জ্যোতির্ময় দ্যুতি ছিলেন এই মহান ব্যক্তিটি। অবশিষ্ট সকল মানুষ ছিল জ্বালানীর মত তাঁর অপেক্ষায়। অবশেষে তারাও পরিণত হয়েছিলেন স্ফুলিঙ্গে। (৫) বৃটিশ রাজনৈতিক দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ’ (১৮৫৬-১৯৫০) বলেন, মুহাম্মাদের ধর্ম সম্পর্কে আমার ভবিষ্যদ্বাণী এই যে, আগামী দিনে এই ধর্ম অবশ্যই বিশ্ববাসীর নিকট গ্রহণীয় হবে এবং ইতিমধ্যেই তা ইউরোপীয়দের নিকট গ্রহণীয় হ’তে শুরু করেছে। আমি এই মানুষটিকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছি। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর মত কেউ যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়ক হ’তেন, তাহ’লে তিনি সব সমস্যার সমাধান করে পৃথিবীতে বহু কাঙ্খিত শান্তি ও সুখ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হ’তেন। (৬) খ্যাতনামা বৃটিশ পন্ডিত বাসওয়ার্থ স্মীথ (১৮৩৯-১৯০৮) বলেন, মুহাম্মাদ ছিলেন একাধারে একটি জাতি, একটি সাম্রাজ্য ও একটি ধর্মের স্থাপয়িতা। তিনি ছিলেন ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব সৌভাগ্য। সংস্কারকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। (৭) বৃটিশ রাজনীতিবিদ উইলিয়াম মূর (১৬৮৫-১৭৩২) বলেন, মুহাম্মাদের আবির্ভাবকালীন সময়ের মত সামাজিক অধোগতি আর কখনো ছিল না। আর তাঁর তিরোধানের সময়ের মত সামাজিক উন্নতি আর কখনো দেখা যায়নি। (৮) ভারতের জাতীয় কংগ্রেস নেতা লালা লাজপত রায় (১৮৬৫-১৯২৮) বলেন, এ কথা ঘোষণা করতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে, ইসলামের পয়গম্বরের প্রতি আমার সর্বাধিক শ্রদ্ধা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষক ও সংস্কারকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। (৯) ভারতের জাতির জনক বলে খ্যাত মি. গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮) ভারতীয় স্বরাজ পার্টির নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি তোমরা ভারতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাও, তাহ’লে ওমরের শাসন নীতি অনুসরণ কর। (১০) নিউইয়র্কের মাইকেল হার্ট (জন্ম : ১৯৩২) নিজে খৃষ্টান হয়েও বিশ্বের সেরা ১০০ মনীষীর জীবনীর তালিকায় প্রথমে রাখেন ইসলামের নবী ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে। (১১) বিখ্যাত হিন্দু পন্ডিত শ্রীযুক্ত গোপালচন্দ্র শাস্ত্রী এম.এ. ডি.এসসি বলেন, কোরআন এক মহামূল্য রত্ন। এই রত্ন যে না দেখিয়াছে, ধর্ম জগতে তার পূর্ণ প্রবেশাধিকার নাই। যাহারা কোরআনকে ‘বদমায়েশের কল্পিত উপন্যাস’ বলে, তাহারা রজক বাহকের সহিত সখ্যতা করিতে পারে। ধর্মানুসন্ধিৎসু কিংবা সাহিত্যপ্রিয় লোকদের সহিত তাহার সম্বন্ধ না থাকাই ভাল।... আমি নিজে হিন্দু হইয়াও এই গ্রন্থের শত মুখে প্রশংসা করিতে পারি। সমুদয় কোরআন সাগরে এক অপূর্ব বীরত্ব ব্যঞ্জক তেজের লহরী ছুটিতেছে। সেই তেজে এখনও মুসলমান জাতি বাঁচিয়া আছে। অন্যদিকে ধর্মের শান্তিময় ভাবও ধীরে ধীরে অর্ধ্ব লুক্কায়িত হইয়া দেখা দিতেছে। এ দৃশ্য বড়ই মনোহর। ইহা বেদেও নাই বা বাইবেলেও নাই’। (১২) ফরাসী বিজ্ঞানী ডঃ মরিস বুকাইলি (১৯২০-১৯৯৮) তাঁর সুবিখ্যাত ‘বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান’ বইয়ে প্রমাণ করেছেন যে, বর্তমান বিশ্বে এলাহী গ্রন্থ বলে যেসব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে কেবল কোরআনই বিশুদ্ধ। বাকী সবই জাল’। বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার এবং চিহ্নিত কথা সাহিত্যিক ও অধ্যাপকরা উপরের মন্তব্য সমূহ থেকে উপদেশ নিতে পারেন। যাদের নিকৃষ্ট উক্তি সমূহ লিখতে ও বলতে ঘৃণা বোধ হয়। যাদের সর্বসাম্প্রতিক হ’লেন ঢাবির অপরাধ তত্ত্ব বিভাগের জনৈক অধ্যাপক জিয়া আহসান। যিনি ‘আসসালামু আলায়কুম’ ও ‘আল্লাহ হাফেয’ বলাকে জঙ্গীবাদের চর্চা বলে মন্তব্য করেছেন।

নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তি : ইসলাম ত্যাগ করে কেউ মুরতাদ তথা নাস্তিক হয়ে গেলে অথবা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করলে ইসলামে তার শাস্তি হ’ল মৃত্যুদন্ড (মায়েদাহ ৫/৩৩; তওবা ৯/৬৫-৬৬)। তবে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের (কুরতুবী)। এ দায়িত্ব পালন না করলে সরকার কিবয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। রাসূল (ছাঃ) রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে উক্ত দন্ড দিয়েছিলেন (আবুদাঊদ হা/৪৩৫৪-৫৫; বুখারী হা/৪০৩৭-৩৮)

সকলের জানা উচিৎ যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ হ’ল ইসলাম। একমাত্র ইসলামের কারণেই আজ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘বাংলাদেশ’ পৃথক রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাই বাংলাদেশের শত্রুরা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এদেশের মানুষের আক্বীদা ও আমল থেকে ইসলাম ও ইসলামের নবীকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য। প্রশাসন সবকিছু জেনে-শুনেও যদি এদের তৎপরতা বাড়তে দেয়, তাহ’লে বাংলাদেশ পুনরায় সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীদের গ্রাসে চলে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন- আমীন! (স.স.)