দর্শনীয় স্থানগুলি শিক্ষণীয় স্থান রূপে গড়ে তুলুন!

পৃথিবীতে যেকোন স্থানে যেকোন প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি। এগুলি দেখে বান্দা আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর অসীম ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে। সেকারণ তিনি মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি বল, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ কিভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন পুনরায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্ত্তর উপরে সর্বশক্তিমান’ (আনকাবূত ২৯/২০)। এর মধ্যে শিক্ষণীয় এই যে, নদী-নালা, পাহাড়-জঙ্গল, সমতলভূমি ও উচ্চভূমি সৃষ্টির মধ্যে কারু কোন হাত নেই। যারা এগুলিকে স্রেফ প্রকৃতির লীলা বলে আত্মতুষ্টি লাভ করে, তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়। সে (নিজের নিরাপত্তার জন্য) ঘর তৈরী করে। অথচ ঘর সমূহের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো সবচেয়ে দুর্বল। যদি তারা জানত’ (আনকাবূত ২৯/৪১)। তারা বলে, ‘আমাদের এই পার্থিব জীবন ভিন্ন আর কিছু নেই। আমরা এখানেই মরি ও বাঁচি। কালের আবর্তনই আমাদেরকে ধ্বংস করে। অথচ এ ব্যাপারে তাদের কোনই জ্ঞান নেই। তারা স্রেফ ধারণা ভিত্তিক কথা বলে’ (জাছিয়াহ ৪৫/২৪)। মানুষ নিজের আত্মাকে না দেখে বিশ্বাস করে। অথচ আত্মার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করতে পারে না। ধোঁয়া দেখে সেখানে আগুন আছে বলে বিশ্বাস করে। অথচ সৃষ্টি দেখে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করতে পারে না। সেদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, ‘তুমি আল্লাহর অনুগ্রহের নিদর্শন সমূহ দেখ, কিভাবে তিনি মৃত যমীনকে জীবিত করেন? এভাবেই তিনি মৃতকে জীবিত করবেন। আর তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান’ (রূম ৩০/৫০)। অতএব আল্লাহর সৃষ্ট প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থান সমূহ দেখে আল্লাহর প্রতি সর্বাধিক আজ্ঞাবহ হওয়া কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশী বেশী দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইব্রাহীম ১৪/৭)

যারা এসব দেখে আল্লাহর প্রতি অনুগত না হয়ে উদ্ধত হয়, তাদের মর্মান্তিক পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর। অতঃপর দেখ মিথ্যারোপকারীদের পরিণতি কেমন হয়েছে’ (আন‘আম ৬/১১)। বিগত যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি ছিল ৬টি : কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, কওমে লূত, মাদইয়ান ও কওমে ফেরাঊন। কওমে নূহ ধ্বংস হয় শিরক ও মিথ্যারোপের পাপে ডুবে থাকার শাস্তি হিসাবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পাপরাশির কারণে তাদেরকে ডুবিয়ে মারা হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে (কবরের) আগুনে প্রবেশ করানো হয়েছে। সেদিন তারা আল্লাহর মুকাবিলায় কাউকে তাদের সাহায্যকারী পায়নি’ (নূহ ৭১/২৫)। বর্তমান পৃথিবীতে যেসব মানুষ বসবাস করছে, তারা সবাই নূহের কিশতীতে উদ্ধার পাওয়া অল্পসংখ্যক মুমিন নর-নারীর বংশধর। আল্লাহ বলেন, ‘আর তার বংশধরগণকেই আমরা কেবল অবশিষ্ট রেখেছিলাম’ (ছাফফাত ৩৭/৭৭)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল চল্লিশ জন করে পুরুষ ও নারী মোট আশি জন। প্লাবনের পর তারা ইরাকের মূছেল নগরীর যে স্থানটিতে বসতি স্থাপন করেন, তা ‘ছামানূন’ বা আশি নামে খ্যাত হয়ে যায় (কুরতুবী, ইবনু কাছীর, হূদ ৪০ আয়াতের ব্যাখ্যা)

৯ম হিজরীতে তাবূক অভিযানের সময় উদ্ধত ছামূদ জাতির ধ্বংসস্থল ‘হিজর’ অতিক্রমকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাথী ত্রিশ হাযার সৈন্যের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা ঐসব লোকদের বাসগৃহ সমূহে প্রবেশ করো না, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তাতে তাদের বিপদ তোমাদের উপর আপতিত হ’তে পারে। তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থায় অতিক্রম কর। এ কথা বলে তিনি নিজে মাথা নীচু করেন এবং দ্রুত উপত্যকা অতিক্রম করেন’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫১২৫)। একইভাবে পৃথিবীর সর্বপ্রথম সমকামী জাতি লূত-এর কওমকে ধ্বংস করার বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন আমাদের নির্দেশ এসে গেল, তখন আমরা ঐ ভূখন্ডের উপরিভাগকে নীচের ভাগে করে দিলাম এবং তার উপরে একাধারে মেটেল পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলাম’ (হূদ ১১/৮২)। অর্থাৎ সাদূম সহ বিশাল সাতটি নগরীকে শূন্যে উঠিয়ে উপুড় করে ফেলে নিশ্চিহ্ন করা হয়। ফিলিস্তীন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী উক্ত ধ্বংসস্থলটির বর্তমান আয়তন দৈর্ঘ্যে ৭৭ কি.মি. (প্রায় ৫০ মাইল), প্রস্থে ১২ কি.মি. (প্রায় ৯ মাইল) এবং গভীরতায় ৪০০ মিটার (প্রায় কোয়ার্টার মাইল; নবীদের কাহিনী ১/১৬০)। বান্দার উচিৎ এসব স্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হ’তে বিরত থাকা।     

পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপূর্ব লীলাভূমি। এখানকার শীর্ষস্থানীয় দর্শনীয় স্থানগুলি নিম্নরূপ : (১) কক্সবাজার : এখানে রয়েছে ১২২ কি.মি. বিস্তৃত বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত। যা নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের আধার। (২) সেন্টমার্টিন : কক্সবাজার যেলার টেকনাফ নদী বন্দর থেকে ১৬ কি.মি. দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। যা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। আরব বণিকগণ তাদের ব্যবসায়িক সফরে এই নারিকেল গাছ অধ্যুষিত দ্বীপে বিশ্রাম নিত। ফলে তাদের মাধ্যমে এখানে প্রথম ইসলাম আসে। তখন থেকে অদ্যাবধি এখানে মুসলিম ব্যতীত অন্য কোন জাতির বসবাস নেই। (৩) সুন্দরবন : মোট ১০,০০০ বর্গ কি.মি. বনভূমির মধ্যে বাংলাদেশ অংশের ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটারের এই বিশাল বনভূমি জাতিসংঘ ঘোষিত বাংলাদেশের ৩টি ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ (World Heritage)-এর অন্যতম। এখানকার নদীগুলো লোনা পানি ও মিঠা পানির মিলনস্থল হওয়ায় এটি পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। যা ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হ’তে বাংলাদেশের ‘রক্ষা ব্যুহ’ হিসাবে কাজ করে এবং জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন উৎপাদনের আধার হওয়ায় একে ‘বাংলাদেশের ফুসফুস’ বলা হয়। (৪) সাজেক ভ্যালি বা সাজেক উপত্যকা রাঙামাটি যেলার অন্তর্গত এবং রাঙামাটির সোজাসুজি উত্তরে ১৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। একে ‘রাঙামাটির ছাদ’ বলা হয়। (৫) বান্দরবান : এই পার্বত্য যেলার নীলগিরি-কে ‘বাংলার দার্জিলিং’ বলা হয়। যা ২২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এছাড়া ১৫০০ ফুট উঁচুতে চিম্বুক পাহাড়, ১২০০ ফুট উচ্চতার ‘বগালেক’ এবং ৩১৭২ ফুট উচ্চতার ‘কেউক্রাডং’ পাহাড় অবস্থিত। যেলা শহরের ‘নীলাচল’ রেষ্ট হাউজটি প্রসিদ্ধ। (৬) নিঝুম দ্বীপ : মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত হাতিয়া উপযেলার অর্ন্তগত বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। ৯১ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপটি ১৯৫০ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত এখানে কোন লোকবসতি ছিল না। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৮ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করে। (৭) টাংগুয়ার হাওর : ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জ যেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর দুই উপযেলার ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাংগুয়ার হাওর যেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। (৮) কুয়াকাটা : ১৮ কি.মি. দৈর্ঘ্যের এই সমুদ্র সৈকতে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য দেখা যায়। যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। (৯) জাফলং : সিলেট শহর থেকে ৬২ কি.মি. উত্তর-পূর্বে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এটি পাহাড় ও নদীর অপূর্ব সম্মিলন স্থল। ভোলাগঞ্জ-জাফলং-য়ে পাওয়া যায় কঠিন শিলার নুড়ি। মাটির অল্প নীচে কঠিন শিলার এসকল মজুত থেকে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে দেশের সড়ক, সেতু, বাঁধ, ভেড়িবাঁধ ইত্যাদি নির্মাণে পাথরের চাহিদা মিটায়। শ্রমজীবি মানুষেরা পাথরের কাজ করে যুগ যুগ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। জাফলং নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। এখান থেকেও নুড়ি পাথর সংগ্রহ করা হয়। (১০) তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড়-পাটগ্রাম এলাকায় রয়েছে কঠিন শিলা কনক্রিশন। তেঁতুলিয়া নদী থেকে নুড়ি পাথর উত্তোলন করা হয়। এখান থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ এভারেষ্ট শৃঙ্গ দেখা যায়। সম্প্রতি এখানে ‘ওয়াচ টাওয়ার’ নির্মাণের দাবী উঠেছে। যাতে সারা বছর এই মনোরম দৃশ্য দেখা সম্ভব হয়। (১১) লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান : মৌলভীবাজার যেলায় অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এই বনাঞ্চল জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক ও হনুমানের জন্য এ বন বিখ্যাত। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেষ্টের মত এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এখানে রয়েছে মাধবপুর লেক ও হামহাম ঝর্ণা। এই যেলায় দেশের সর্ববৃহৎ ‘মাধবকুন্ড জলপ্রপাত’ অবস্থিত। যা ১৬২ ফুট উপর থেকে পতিত হয়। (১২) ষাট গুম্বজ মসজিদ : বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের (১৩৪২-১৩৫৮) বংশধর সুলতান নাছিরুদ্দীন মাহমূদ শাহের রাজত্বকালে (১৪৩৫-৫৯ খৃ.) খানজাহান আলী (১৩৬৯-১৪৫৯ খৃ.) দিল্লী থেকে যশোর-খুলনা অঞ্চলে আসেন। তিনি প্রথমে দিল্লীর সুলতানের এবং পরে বাংলার সুলতানের নিকট থেকে সুন্দরবন অঞ্চল জায়গীর হিসাবে পান। অতঃপর তিনি সুন্দরবনের কোল ষেঁষে দক্ষিণবঙ্গের একটি বৃহৎ অঞ্চলে গড়ে তোলেন ইসলামী খেলাফত। তাঁর প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ‘খলীফাবাদ’। যা বর্তমানে ‘বাগেরহাট’ নামে পরিচিত। ভৈরব নদীর তীরে যশোরের বারোবাজারেও ছিল তাঁর অন্যতম প্রশাসনিক কেন্দ্র। জনকল্যাণে তিনি ৩৬০টি মসজিদ ও বহু বড় বড় দীঘি খনন করেন। ‘ষাট গুম্বজ’ মসজিদ ছিল খানজাহানের সবচেয়ে বড় কীর্তি। ছালাত আদায়ের পাশাপাশি মসজিদটি খানজাহান আলীর ‘দরবার’ হিসাবেও ব্যবহৃত হ’ত। মসজিদটিকে ‘ষাট গুম্বজ’ বলা হ’লেও এতে আছে ৬০টি বড় বড় পাথরের খাম্বার উপর ৮১টি গুম্বজ। কথিত আছে যে, খানজাহান আলী ৯০ বছর বয়সে এই মসজিদের দরবার গৃহে এশার ছালাতরত অবস্থায় ৮৬৩ হিজরীর ২৬শে যিলহজ্জ মোতাবেক ১৪৫৯ সালের ২৫শে অক্টোবর তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। যাঁর কবর হয় তাঁর খননকৃত পার্শ্ববর্তী বিশাল দীঘির পাড়ে। মোগল আমলে ১৬১০ সালে ঢাকা বাংলার রাজধানী হওয়ায় এই অঞ্চল এক প্রকার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ এটিকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ (World Heritage) হিসাবে তালিকাভুক্ত করে।

দুর্ভাগ্য, এই বিজয়ী সেনাপতি ও রীতিমত একজন রাষ্ট্রনেতাকে এখন পীর বানানো হয়েছে এবং তাঁর কবরকে মাযার বানিয়ে পূজা করা হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে ষাট গুম্বজ মসজিদ সরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এখানে রেষ্ট হাউজ, গেষ্ট হাউজ এবং অন্যান্য ভৌত কাঠামো তৈরী করে স্থানটিকে আরও অধিক দর্শনীয় করা হয়েছে। বর্তমানে টিকেট সিস্টেমে দর্শকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। তবে কেবল আযান থেকে ছালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত মুছল্লীদের জন্য কোন টিকেট লাগে না। কিন্তু মসজিদের ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বিনষ্ট করা হচ্ছে মূলতঃ মুছল্লী ব্যতীত অন্যদের ঢালাও প্রবেশাধিকার দেওয়ার কারণে। এমনকি অর্ধনগ্ন মেয়েরাও সেখানে প্রবেশ করে সেলফী তোলায় ব্যস্ত থাকছে। যা মসজিদের ইমাম-মুওয়াযযিন ও সাধারণ মুসলমানদের ক্রমেই বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। অতএব কেবল অর্থ উপার্জন নয়, সরকারের কর্তব্য হবে মসজিদের ও খানজাহান আলীর কবরের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা। দর্শনীয় স্থান সমূহ ভ্রমণের উদ্দেশ্য হ’ল আল্লাহর রহমতের নিদর্শন সমূহ স্বচক্ষে দেখা ও সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আল্লাহ খানজাহান আলীকে দিল্লী থেকে যশোর-খুলনায় পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর এতদঞ্চলে ইসলামী বিধান কায়েম করেছেন এবং জনকল্যাণে বিপুল অগ্রগতি সাধন করেছেন। অমুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলটি এখন মুসলিম অধ্যুষিত। এটা কেবল আল্লাহর রহমতেই সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের কর্তব্য হবে নিজেদের জীবনকে ইসলামী বিধান অনুযায়ী পরিচালিত করা এবং অন্যদেরকেও সেদিকে আকৃষ্ট করা। যদি আমরা তাতে ব্যর্থ হই, তাহ’লে আল্লাহ বলেন, ‘এক্ষণে যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৮)। অতএব আমাদের কর্তব্য হবে প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলি থেকে আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব উপলব্ধি করা এবং তাঁর অবাধ্যতা হ’তে বিরত হওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনা কৌশল অনুধাবনের ও তাঁর প্রতি বিনীত হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন! (স.স.)।