বিজয়ের মাস ও পার্বত্য চুক্তি

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে সেদিনের পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক ও সামরিক বিজয়কেই সাধারণতঃ বিজয় হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু মূল বিজয় সেখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মানবতার স্বাধীন বিকাশের লক্ষ্যেই রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা হয়। তার জন্য জান-মাল উৎসর্গ করা হয়। কিন্তু বিগত ২৬ বছর যাবৎ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আমরা কি উন্নত মানবতার স্বাধীন বিকাশে সক্ষম হয়েছি? পেরেছি কি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের জান-মাল ও ইয্যতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে? পেরেছি কি বিদেশী চাপমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে?

বিজয়ের এই আনন্দঘন মাসের ২ তারিখ মঙ্গলবারে আমরা আমাদের দেশের এক দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামকে ৩০ হাযার বাংলাদেশীর হত্যাকারী প্রতিবেশী দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও লেলিয়ে দেওয়া ‘শান্তি বাহিনী’ নামক গুন্ডাবাহিনীর হাতে সমর্পণ করেছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্বত্য নাগরিকরা এ চুক্তি মেনে নেয়নি। তারা আজ বিজয়ের আনন্দে নয় বরং পরাজয়ের গ্লানিতে ও জান-মাল-ইয্যত হারানোর ভয়ে প্রতি মুহূর্তে শংকিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত। তাদের যুবক ছেলেরা মায়েদের কাছ থেকে দো‘আ চেয়ে শেষ বিদায় নিচ্ছে তাদের স্বাধীন সত্তাকে অক্ষুন্ন রাখার লড়াইয়ের জন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে কাশ্মীরের হিন্দু ডোগরা রাজা অন্যায়ভাবে কাশ্মীরকে ভারত ভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করে কাশ্মীরের দুই তৃতীয়াংশকে ভারতের অধীনস্থ করে গেছে। এখন সেই রাজাও নেই ভারতের তৎকালীন নেতারাও নেই। কিন্তু আছে চুক্তির নোংরা ফসল হিসাবে স্থায়ী অশান্তি। কাশ্মীরী মুসলমানদের জান-মাল ও ইয্যত প্রতি মুহূর্তে লুটছে বিশ্বের তথাকথিত বৃহৎ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের লেলিয়ে দেওয়া সেনাবাহিনী। সেখানে চলছে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। আমাদেরও ভয় হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ মাত্র আড়াই লাখ চাকমা নাগরিকের স্বার্থে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঁচ লাখ মুসলমান ও আড়াই লাখ অন্য উপজাতিদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বর্তমান চুক্তির মাধ্যমে সেখানে কাশ্মীরের ন্যায় স্থায়ী রক্ত ঝরার ব্যবস্থা করা হ’ল কি-না। বর্তমান সরকার নির্দলীয় বা জাতীয় সরকার নয় বরং একটি দলীয় সরকার মাত্র। দলীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচে তারা এখন দেশের এক তৃতীয়াংশ নাগরিকের সমর্থন নিয়ে সরকারে আছেন। তাই সরকারী দলের বাইরে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আবেগ অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা জানালে সরকার বরং লাভবান হবে ও আগামীতে তারা অধিকাংশ জনগণের শ্রদ্ধা ও সমর্থন কুড়াতে সক্ষম হবে।

বিজয়ের এই মাসে আমরা আল্লাহ রববুল আলামীনের কাছে দো‘আ করি তিনি যেন আমাদের এই বিজয়ের আনন্দকে চিরকাল অক্ষুন্ন রাখেন এবং এই বিজয়কে সত্যিকারের মানবতার বিজয়ে পরিণত করার জন্য আমাদেরকে তাওফীক দান করেন-আমীন!