বন্যায় বিপন্ন মানবতা

দেশের ৩৭টি যেলা বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। হাযার হাযার মানুষ ও লক্ষ লক্ষ প্রাণী অসহনীয় কষ্টে ও অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশায় দিনাতিপাত করছে। ইতিমধ্যে পৌনে তিন শতাধিক মানুষ মারা গেছে। অন্যান্য প্রাণী ও গবাদিপশুর কোন হিসাব নেই। বন্যার পানি সরছে না। দুষিত পানি পান করে ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের পাহাড়ী ঢল, ফারাক্কার খোলা গেইটের উপচে পড়া পানির স্রোত ও সাথে আকাশ বন্যার ত্রিমুখী চাপে বাংলাদেশ ভূখন্ডের আজ ত্রিশংকু অবস্থা। ...সর্বত্র সন্ত্রাস ও ব্যাপক চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ জনগণ বন্যার্তদের জন্য সাহায্য চাওয়াকে কোনভাবে নিবে, সেটা আঁচ করেই হয়তবা কেউ ময়দানে নামার সাহস পাচ্ছে না। সরকারী সাহায্যের অবস্থা হ’ল ‘খাজনার চাইতে বাজনা বেশী’। যা বাজেট রেডিও-তে শোনা যায়, তা আমলা ও ক্যাডারদের পার্সেন্টেজ বাদ দিয়ে বন্যার্তদের পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে কিছু তলানি থাকলেও থাকতে পারে। ফলে আল্লাহ ব্যতীত অসহায় বন্যার্তদের সত্যিকার অর্থে দেখার কেউ নেই। নদীমাতৃক বাংলাদেশ। ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা এ দেশের সঙ্গী-সাথী। তার সাথে আছে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের অঘোষিত পানিযুদ্ধ। শুকনা মৌসুমে পদ্মার পান আটকে রেখে তারা আমাদেরকে শুকিয়ে মারে। আবার বর্ষা মৌসুমে পদ্মার বাড়তি পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে ডুবিয়ে মারে। সেই সাথে রয়েছে আসামের পাহাড়ী ঢল। এরই মধ্যে ১২ কোটি মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সকলেই বিষয়টি বুঝেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বও বিষয়টি বুঝে। কিন্তু সবাই শক্তির পূজারী। গরীবের হক কথা শক্তিমানের হৃদয়কন্দরে আঘাত হানতে সক্ষম হয় না।

তাই আমাদেরকেই আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে। অপরের করুণা ভিক্ষা নয়। আল্লাহর উপরে ভরসা করে নিজেদের যা সম্পদ আছে, তাই নিয়ে বন্যা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সকল নৈতিক স্খলনের কারণে একটি জাতির উপরে আল্লাহর গযব নেমে আসে বলে হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে, তার প্রায় সবগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আমাদের সমাজে প্রকাশ পাচ্ছে। তাই বন্যা প্রতিরোধের চাইতে অনৈতিকতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রতি সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাথে সাথে সরকারের সকল প্রচার মাধ্যম এবং সকল ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনকে এ বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তৎপর হ’তে হবে। সর্বোপরি নেতৃবৃন্দ ও দায়িত্বশীলগণকে ব্যক্তি জীবনে সৎ ও আমানতদার হিসাবে প্রমাণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন! আমীন!