عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ- صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ؟ ثُمَّ يَقُولُ: فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ- مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ-
অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘এমন কোন আদম সন্তান নেই, যে ফিৎরাতের উপরে জন্মগ্রহণ করে না। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহূদী, নাছারা বা অগ্নি উপাসক বানায়। যেমন চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা প্রসব করে। তোমরা তাতে কানকাটা দেখ কি? অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন, ‘আল্লাহর ফিৎরাত, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (রূম-মাক্কী ৩০/৩০; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ)।
উক্ত হাদীছের সারমর্ম হ’ল প্রত্যেক মানবশিশু ইসলাম কবুলের যোগ্যতা নিয়ে জন্ম লাভ করে। অতঃপর পিতা-মাতা তাকে পথভ্রষ্ট করে।
হাদীছের ব্যাখ্যা
(مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ) অর্থ مَا مِنْ بَنِى آدَمَ إِلاَّ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ ‘এমন কোন মানব সন্তান নেই, যে ফিৎরাতের উপরে জন্মগ্রহণ করে না’। অর্থাৎ প্রত্যেক আদম সন্তান ফিৎরাতের উপরে জন্মগ্রহণ করে থাকে। এখানে مَوْلُودٍ ‘মুবতাদা’ এবং يُولَدُ হ’ল তার ‘খবর’। الْفِطْرَةِ অর্থ الاختراع ‘প্রথম সৃষ্টি করা’। যেমন মহান আল্লাহ নিজেকে বলেছেন, فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ‘আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টিকারী’ (আন‘আম-মাক্কী ৬/১৪; ইউসুফ-মাক্কী ১২/১০১)। এর আরেক অর্থ الحالة والهيئة ‘অবস্থা ও প্রকৃতি’ (মির‘আত)। অর্থাৎ মানব প্রকৃতি ও স্বভাবধর্ম। নিঃসন্দেহে যা পশু প্রকৃতি ও পশুর স্বভাবধর্ম হ’তে পৃথক।
তবে প্রথমোক্ত বক্তব্যের প্রতি সূরা রূমের ৩০ আয়াটি সরাসরি ইঙ্গিত দেয়। যেখানে আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূলকে বলেছেনفَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيفاً فِطْرَةَ اللهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ‘তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দ্বীনের উপরে প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর ‘ফিৎরাত’ যার উপরে আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন’ (রূম ৩০/৩০)। মোল্লা আলী ক্বারী উক্ত আয়াতের আলোকে ‘ফিৎরাত’ অর্থ করেছেন ‘ঈমান’। অর্থাৎ সেই ঈমান যা সৃষ্টির সূচনায় মানবমন্ডলীকে উপস্থিত করে আল্লাহ পাক প্রশ্ন করেছিলেন أَلَسْتَ بِرَبِّكُمْ ‘আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই’? তখন সকলেই বলেছিল, হ্যাঁ (আ‘রাফ-মাক্কী ৭/১৭২)।
তিরমিযীর বর্ণনায় ফিৎরাত-এর স্থলে ‘মিল্লাত’ শব্দ এসেছে (হা/২১৩৮)। আর ‘মিল্লাত’ অর্থ দ্বীন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلٰى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ- ‘বল, আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করেছেন। যা একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের বিশুদ্ধ ধর্ম এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না’ (আন‘আম-মাক্কী ৬/১৬১)।
অতঃপর ছাহেবে মিরক্বাত হাদীছে বর্ণিত ‘ফিৎরাত-এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক মানব প্রকৃতিতে উক্ত দ্বীন চেনার যোগ্যতা নিহিত রয়েছে (مِنَ الْاسْتِعْدَادِ لِلْمَعْرِفَةِ)। এ থেকে মানুষ বিচ্যুত হ’ত না, যদি না সে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত ও প্রতারিত হ’ত’। এজন্যেই মুনাফিকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, أُوْلَئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرُوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى ‘তারা হেদায়াতের বদলে গুমরাহী খরীদ করেছে। এই ব্যবসায়ে তারা লাভবান হবে না এবং তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৬)। অত্র আয়াতে ‘হেদায়াত’কে মূল হিসাবে গণ্য করা হয়েছে- যা মুমিন-মুনাফিক, কাফির-মুশরিক সকলের প্রকৃতিতে নিহিত রয়েছে’। কিন্তু মুমিন ব্যতীত অন্যেরা সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে শয়তানের পথ অবলম্বন করেছে। যেমন ইয়ায বিন হেমার (عياض بن حمار) থেকে মরফূ সূত্রে একটি হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে,إِنِّى خَلَقْتُ عِبَادِى حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ ‘আমি আমার সকল বান্দাকে একনিষ্ঠ দ্বীনের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তানেরা তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়’। একই হাদীছে অন্য বর্ণনায় حُنَفَاءَ مُسْلِمِينَ ‘একনিষ্ঠ মুসলিম রূপে’ সৃষ্টি করেছি- কথা এসেছে (বায়হাক্বী, আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বদর হা/৫৮৯)। অত্র হাদীছে রাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) উক্ত মর্মের পক্ষে বর্ণিত সূরা রূমের ৩০ আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন (মির‘আত)।
বর্ণিত ‘ফিৎরাত’ শব্দের অর্থ ‘ইসলাম’। তবে ইসলামের দু’টি দিক রয়েছে। একটি হ’ল প্রাকৃতিক বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ। যেমন পিতা-মাতার মাধ্যমে মানব সন্তানের জন্মগ্রহণ। অতঃপর কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্যে উপনীত হওয়া ও মৃত্যু বরণ করা, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ ও আশা-নিরাশার মাঝে জীবন কাটানো ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিধানের প্রতি মুমিন-কাফির সকলেই বাধ্যতামূলকভাবে আত্মসমর্পণ করে থাকে। এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ পাক বলেন,أَفَغَيْرَ دِيْنِ اللهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ طَوْعاً وَكَرْهاً وَإِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ- ‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর আনুগত্য করছে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এবং সকলে তাঁর দিকেই ফিরে যাবে’ (আলে ইমরান-মাদানী ৩/৮৩)।
দ্বিতীয় দিক হ’ল, শারঈ বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ। মানবজীবনকে সঠিক ও কল্যাণময় পথে পরিচালনার জন্য নবীদের মাধ্যমে যা আল্লাহর পক্ষ হ’তে প্রেরিত হয়েছে। এই বিধানের প্রতি যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদেরকে বলা হয় ‘মুসলিম’ অর্থাৎ আত্মসমর্পণকারী। আর যারা প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদেরকে বলা হয় ‘কাফির’ বা প্রত্যাখ্যানকারী। আর যারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে কিন্তু ভিতরে অস্বীকার করেছে, তারা হ’ল ‘মুনাফিক’। যদিও বাহ্যিক আইন অনুযায়ী তারা মুসলিম হিসাবে গণ্য। দ্বিতীয় অর্থে ইসলাম কবুল করা বা না করার ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে এখতিয়ার দিয়েছেন স্রেফ তাকে পরীক্ষা করার জন্য। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا ‘আমরা মানুষকে সরল পথ প্রদর্শন করেছি। এক্ষণে সে কৃতজ্ঞ হ’তে পারে কিংবা অকৃতজ্ঞ হ’তে পারে’ (দাহর-মাক্কী ৭৬/৩)। আর বিধান জারি হবে তার বয়ঃপ্রাপ্তির পর হ’তে, তার পূর্বে নয়। এমনকি বয়ঃপ্রাপ্তির পরেও সে পাগল, বেহুঁশ, অপ্রকৃতিস্থ বা বাধ্যগত অবস্থায় পতিত হ’লে তার উপরে বিধান মাফ হবে। এক্ষণে মূসা ও খিযিরের কাহিনীতে খিযির কর্তৃক বালক হত্যার ঘটনায় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যে বলেছেন, طبعا كافرًا ‘প্রকৃতিগতভাবেই সে কাফের’ ছিল-এর অর্থ হ’ল, إنه لو عاش يعيد كافرًا ‘যদি সে বেঁচে থাকত, তাহ’লে কাফির হ’ত’ (মির‘আত)। এর অর্থ এটা নয় যে, সে এখনই কাফির হয়ে আছে।
এক্ষণে সৃষ্টিগত পর্যায়ে যখন মানুষ বাধ্যগত অবস্থায় থাকে, তখনই সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহকে চেনা ও তার বিধান মেনে চলার যোগ্যতা আল্লাহ প্রত্যেক মানবসন্তানের প্রকৃতিতে সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আর এই যোগ্যতাও এক অর্থে ইসলাম। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, الَّذِي أَعْطَى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَى ‘পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্ত্তকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন। অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন’ (ত্বোয়াহা-মাক্কী ২০/৫০)। আর এই পথপ্রদর্শন বা হেদায়াতের অপর নাম ইসলাম। যা প্রকৃতিগতভাবেই প্রত্যেক মানব সন্তানকে আল্লাহ দান করেছেন। আলোচ্য হাদীছ এবং আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই ইসলাম আসার পরে তা কবুল না করার কারণে মানুষ দায়ী হবে এবং জাহান্নামী হবে। এই ফিৎরাত ও সত্যকে চেনার যোগ্যতা কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللهِ ‘আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম-মাক্কী ৩০/৩০)। শয়তানী ধোঁকায় বা পিতা-মাতার কারণে বা শিক্ষা ও পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে মানুষ ইহূদী, নাছারা, মজূসী সবই হ’তে পারে। কিন্তু ইসলামী সত্যকে চেনা ও তা কবুল করার যোগ্যতাকে কেউ পুরাপুরি নিঃশেষ করতে পারে না। আর এজন্যেই তো বিগত যুগে আবু সুফিয়ানকে এবং বর্তমান যুগে মরিস বুকাইলী (১৯২০-১৯৯৮ খৃ.)-কে ইসলাম কবুল করতে দেখা যায়। যারা স্ব স্ব যুগে ছিলেন ইসলামের ঘোর বিরোধী।
উল্লেখ্য যে, অত্র হাদীছে সন্তানের ইহূদী-নাছারা-মজূসী হওয়ার যে কথা এসেছে, এতে ফিৎরাত পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি। বরং বয়ঃপ্রাপ্তির পর তার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। যেখানে ইসলামের শারঈ বিধানগত দিক গ্রহণ করা বা না করার এখতিয়ার বান্দাকে দেওয়া হয়েছে তাকে পরীক্ষা করার জন্য।
(فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ وَيُمَجِّسَانِهِ) ‘অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহূদী-নাছারা বা অগ্নি উপাসক বানায়’। يُهَوِّدَانِهِ অর্থ يجعلانه يهوديا ‘বাপ-মা তাকে ইহূদী বানায়’। সাধারণত বাপ-মায়ের কারণেই সন্তানের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিচিতি নির্ধারিত হয়ে থাকে বিধায় এখানে পিতা-মাতাকে খাছ করে বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া প্রায় সকল নবীকেই তাঁদের স্ব স্ব উম্মতগণ বাপ-মায়ের ধর্ম ও রীতি-নীতির অনুসরণের দোহাই পেড়েছিল (বাক্বারাহ-মাদানী ২/৭০; লোকমান-মাক্কী ৩১/২১) এবং তাওহীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেকারণেই এখানে পিতা-মাতার উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাপ-মা তাদের সন্তানকে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইহূদী, নাছারা বা অগ্নি উপাসক করে গড়ে তোলে। ফলে পরিণত বয়সে সে উক্ত নামেই পরিচিত হয়। আর এটা যে হবে, সেকথা পূর্বেই ‘রোযে আযলে’ তার তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ ছিল। এমন নয় যে, আগেভাগে আল্লাহ এগুলো জানতেন না। অতএব বাপ-মায়ের কারণে সন্তানের ধর্ম পরিবর্তনের মধ্যে ক্বাদারিয়াদের জন্য কোন দলীল নেই।
(كَمَا تُنْتَجُ الْبَهِيمَةُ بَهِيمَةً جَمْعَاءَ هَلْ تُحِسُّونَ فِيهَا مِنْ جَدْعَاءَ) ‘যেমন চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা প্রসব করে। তোমরা তাতে কানকাটা দেখ কি’?تُحِسُّونَ অর্থ تُدْرِكون ‘তোমরা দেখকি বা পাওকি’? বাক্যটি রাসূল (ছাঃ) উদাহরণ স্বরূপ পেশ করেছেন শ্রোতাকে ভালভাবে বুঝানোর জন্য। পূর্ণাঙ্গ একটা সুন্দর বাছুরকে চিহ্নিত করার জন্য অনেক সময় মালিক তার কান কেটে বা ছিদ্র করে চিহ্নিত করে। এর দ্বারা চিহ্নিত হয় বটে। কিন্তু সে খুঁৎওয়ালা হয়ে যায়। অমনিভাবে একটা পূর্ণাঙ্গ মানব শিশু বড় হয়ে আমৃত্যু যদি ইসলামের উপরে থাকে, তবে সে থাকে একজন পূর্ণ মানুষ হিসাবে। কিন্তু যদি সে পরবর্তীতে বেঈমান কিংবা ইহূদী-নাছারা ইত্যাদি হয়ে যায়, তবে সে হয় ঐ কানকাটা বাছুরের ন্যায় খুঁৎওয়ালা পশুর মত। পশু তার এই খুঁতের কারণে কেবল চিহ্নিত হয়। পক্ষান্তরে কাফের-মুশরিক ও ফাসেক হওয়ার কারণে মানুষ কেবল দুনিয়াতেই খুঁৎওয়ালা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বরং আখেরাতেও সে জাহান্নামী হয়।
(ثم يقول : فطرة الله- الاية) ‘অতঃপর তিনি পাঠ করেন কুরআনের আয়াত...)। এখানে ‘তিনি পাঠ করেন’ অর্থ রাবী হযরত আবু হুরায়রা পাঠ করেন। অর্থাৎ তিনি রাসূলের উপরোক্ত হাদীছের পক্ষে দলীল হিসাবে সূরা রূমের ৩০ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন।
ভূপৃষ্ঠে এমন কোন স্থান থাকবে না যেখানে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছবে না (আহমাদ হা/২৩৮৬৫, মিশকাত হা/৪২)। এরপরও কারু নিকটে যদি ইসলামের দাওয়াত না পৌঁছে, তবে আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তাদের আনুগত্যের পরীক্ষা নিবেন। এতেই তারা জান্নাতী বা জাহান্নামী হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন চার ব্যক্তি ঝগড়া করবে। বধির, বোকা, অতিবৃদ্ধ এবং যে ইসলামের দাওয়াত পায়নি এমন ব্যক্তি। বধির বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে অথচ আমি কিছুই শুনতে পাইনি। বোকা বলবে, ইসলাম আগমন করেছে। অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে। অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি। আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোন দাওয়াতদাতা আমার নিকটে আসেনি। অতঃপর আল্লাহ তাদের নিকট হ’তে আনুগত্যের শপথ নিবেন। এরপর তাদের নিকট একজন দূত প্রেরণ করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ কর। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ, তার কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন তার উপর ঠান্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (ছহীহাহ হা/১৪৩৪)।
অতএব আমাদেরকে নিরন্তর দাওয়াত চালিয়ে যেতে হবে। অতঃপর প্রত্যেকের আমল ও ফিৎরাত অনুযায়ী আল্লাহ বিচার করবেন।