সাংবাদিক নির্মল সেন-কে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত

[নির্মল কুমার সেনগুপ্ত (১৯৩০-২০১৩ খৃ.) বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংবাদিকতা জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ যেলার কোটালীপাড়া উপযেলার দিঘীরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর বয়স থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৬ সালে পরিবারের সবাই পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলেও তিনি এদেশে থেকে যান। জীবনের দীর্ঘ সময় তাঁর কারাগারে কেটেছে। ১৯৬১ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন। অতঃপর দৈনিক বাংলা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় আজীবন সাংবাদিকতা করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এদেশের সমকালীন সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির প্রেক্ষিতে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় লেখা ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’ নামক একটি উপ-সম্পাদকীয় তাঁকে লেখক হিসেবে প্রভূত খ্যাতি ও পরিচিতি দান করে। ‘আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ’ তাঁর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা।

মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব তাঁর কারাজীবনের (২০০৫-২০০৮) শেষ দিকে দৈনিক ইত্তেফাকে নির্মল সেনের লিখিত কয়েক কিস্তিতে প্রকাশিত ‘আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ’ নামক প্রবন্ধটি পাঠ করার পর তাঁকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়ে একটি পত্র লেখেন। এর ১৪ দিন পরে তিনি বগুড়া কারাগার হ’তে যামিনে মুক্তি পান। বেরিয়ে আসার পর নানা ব্যস্ততায় চিঠিটি আর তাঁকে পাঠানো হয়নি। ইতিমধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চিঠিটির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এটি পাঠকবৃন্দের জ্ঞাতার্থে পত্রস্থ করলাম- সম্পাদক]

শ্রদ্ধেয়                   বগুড়া যেলা কারাগার হ’তে 

বাবু নির্মল সেন,    ১৪.০৮.২০০৮ইং বৃহস্পতিবার       

আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেন। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত আপনার লেখা ‘আমার জীবনে ’৭১-এর যুদ্ধ’ প্রায় সবগুলো কিস্তি পড়েছি। দু’একটা বাদ গেলেও যেতে পারে। আজ শেষ কিস্তি পড়ে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার জন্য মনটা উদ্বেলিত হয়ে উঠল।

প্রথমেই বলছি, আপনার বিশাল হৃদয়ের খবর যারা জেনেছিল, তারা আপনাকে ভালবেসেছিল। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আজ জীবনের পড়ন্ত বেলায় আমি (৬১) আপনাকে চিনলাম আপনার লেখার মাধ্যমে। যদিও সাংবাদিক নেতা হিসাবে আপনার পরিচিতি আমাদের কাছে ছিল অনেক পূর্ব থেকেই।

শ্রদ্ধেয় সেন! আপনি আপনার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য গর্ভধারিণী মায়ের স্নেহ ও ভাইদের আন্তরিক আবেদনকে প্রত্যাখ্যান করে পশ্চিমবঙ্গে না থেকে ফিরে এসেছিলেন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নিজ জন্মভূমিতে। আপনি আপনার আদর্শের জন্য পাকিস্তান আমলে জেল খেটেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নিশ্চিত আশা আপনার ছিল। কিন্তু যেসব বাধা আপনি পেয়েছেন ইতিপূর্বে পাকিস্তানী শাসকদের কাছ থেকে, ভিন্ন মাত্রায় প্রায় একই রূপ বাধা পেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকদের কাছ থেকে। কারণ পাকিস্তানী শাসক ও বাংলাদেশী শাসকদের চেহারায় অমিল থাকলেও, মানসিকতায় অমিল ছিল না। শোষক ও যালেমদের চরিত্র দল মত ও স্থান কাল নির্বিশেষে সকল যুগে একই। সে যুগের ফেরাঊন-নমরূদ, আবু জাহলরা যে নষ্ট চরিত্রের অধিকারী ছিল, এ যুগের বুশ-ব্লেয়ার, গান্ধী-সাদ্দামরা একই চরিত্রের অধিকারী। বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় এসেছিল বা যাদেরকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল, তারা ছিল অত্যাচারী শোষক পুঁজিবাদী বিশ্ব মোড়লদের হাতের পুতুল। আজও তারাই আছে। আপনার কান্না শোনার মত কান তাদের কোথায়? আপনি মযলূমদের হৃদয়ের বেদনা বুঝেছেন ও তাদের বোবা কান্না ভাষায় প্রকাশ করেছেন এবং চেয়েছিলেন তার প্রতিকার। কিন্তু পাননি। নির্বাচনী যুদ্ধে জয়লাভ করে ক্ষমতা দখল করাই কি এর প্রতিকার? ওটা তো শোষকদের পাতানো ফাঁদ। যাতে মানুষ ক্ষমতা পাবার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে এবং জন কল্যাণের সকল সুচিন্তা হারিয়ে যায়। তাছাড়া মযলূমদের অধিকাংশ গোলামী মানসিকতার ধারক। শোষিত ও বঞ্চিত হওয়াটাকেই অনেকে তাদের ভাগ্য ভেবে নিশ্চিন্ত হয়েছে। স্যার স্যার বলতে আর স্যালুট দিতেই ওরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বা অভ্যস্ত বানানো হয়েছে। কিন্তু একদিক দিয়ে শোষক ও শোষিতদের একটা অদ্ভূত মিল আছে। আর তা হ’ল দু’হাতে দুনিয়া কামানোর মানসিকতা। ভোটার ও ভোটপ্রার্থী দু’জনে এদিক দিয়ে সমান। তাই এই ভোগবাদী মানসিকতার পরিবর্তন ব্যতীত সমাজের আমূল পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব? আপনার ত্যাগী মানসিকতার আমরা প্রশংসা করি। আর কেবল সেজন্যই আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই।

এক্ষণে প্রশ্ন হ’ল, এই ভোগবাদী মানসিকতা দূর হবে কিভাবে? পুলিশ-র‌্যাব আর জেল-যুলুমের ভয় দেখিয়ে কি এটা রোধ করা যাবে? ধনিক শ্রেণী তাদের ধনের একটা অংশ কি এমনিতেই দরিদ্র শ্রেণীকে দিয়ে দিবে? ধনী বা গরীব কেউ কি অল্পে তুষ্ট হবে?

শক্তিশালী যালেমকে শক্তিহীন দুর্বলের উপরে অন্যায় ও যুলুম  থেকে বিরত রাখবে কে? কেবল মানবিক মূল্যবোধ দিয়েই কি সেটা সম্ভব? তাছাড়া জন্মগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে পশুসূলভ চরিত্র। কে তার পশুত্বকে নিবৃত্ত করবে? বাম নেতৃবৃন্দের কাছে এর কোন জওয়াব নেই। ডানদের কাছে জওয়াব থাকলেও তাদের অধিকাংশ কপট বিশ্বাসী ও কার্যক্ষেত্রে বিরোধী।

শ্রদ্ধাষ্পদ নির্মল বাবু!

আমরা কেউ আপনা আপনি দুনিয়াতে সৃষ্টি হইনি। আমাদের অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। যিনি আসমান-যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যকার সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও ব্যবস্থাপক। ধোঁয়া দেখে যেমন আগুনকে চেনা যায়, ফল দেখে যেমন গাছকে চেনা যায়, তেমনি সৃষ্টি দেখে স্রষ্টাকে চেনা যায়। তিনিই আল্লাহ। মানুষ তার সেরা সৃষ্টি এবং একমাত্র জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান প্রাণী। মানুষকে তিনি ভাল-মন্দ ও পাপ-পুণ্য বিচার করে একটাকে বেছে নেবার স্বাধীনতা দিয়েছেন। আর এতেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বিচার হয়ে থাকে। মানুষ তার ভবিষ্যৎ ভাল-মন্দের খবর রাখে না। তাই আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়ে মানুষের নিকট তাঁর ইলাহী হেদায়াত তথা সত্যবিধান সমূহ পাঠিয়েছেন। সবশেষে মরু আরবের নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লামের নিকট মানব জাতির চিরন্তন পথ নির্দেশিকা হিসাবে পবিত্র ‘কুরআন’ নাযিল হয়। যাতে রয়েছে অতীত জাতিসমূহের ইতিহাস, রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস সমূহ, রয়েছে মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগের চিরস্থায়ী কল্যাণের নির্দেশনা। সর্বোপরি তাতে রয়েছে পরকালীন জীবনে পুরস্কার ও শাস্তির ঘোষণা। মানুষের দায়িত্ব হ’ল তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তা যথাযথভাবে নিজের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করা। যাতে খুব সহজে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব হয়।

যেমন গরীবের রক্ত শোষণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হ’ল সূদী প্রথা। বহু পূর্বে প্লেটো এ বিষয়ে কঠোর বক্তব্য রেখে গেছেন। সকল নবী-রাসূল এর বিরুদ্ধে বলে গেছেন। আল্লাহ একে হারাম করেছেন। কিন্তু মুসলিম-অমুসলিম সকল রাষ্ট্রে সূদ চালু আছে চক্রবৃদ্ধি হারে। তাহ’লে কিভাবে শোষণ বন্ধ হবে? কূয়ার পচা বিড়াল উঠিয়ে না ফেলে কেবল পানি সেচা হচ্ছে। ফলে পানির পচন থেকেই যাচ্ছে। ১৯২০ সালে মার্কিন কংগ্রেস তাদের দেশে সূদ বন্ধের আইন করেছিল। যা Prohilition law নামে খ্যাত। কিন্তু তাতে সূদের প্রচলন হু হু করে বেড়ে গিয়েছিল। ফলে ১৯৩৩ সালে সূদ আবার আইন সম্মত করতে বাধ্য হয় মার্কিন সরকার। এই ব্যর্থতার কারণ, তাদের জনগণের বিশ্বাসের পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের পুঁজিবাদী মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটিয়েই আইনের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। তাই জনগণ তা মানেনি।

এবার দেখুন খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মদীনায় সূদ বন্ধের ইতিহাস। সূদে অভ্যস্ত মানুষগুলো সমাজনেতাদের মনগড়া আইনের দাসত্ব পরিত্যাগ করে আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করল। তাদের সে দাসত্বে ও বিশ্বাসে কোন খাদ ছিল না। এরি মধ্যে সূদ নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান এলো আল্লাহর নিকট থেকে তার শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে। ছাহাবী আবু তালহার বাড়ীতে তখন খানা-পিনার বিরাট অনুষ্ঠানে সিরিয়া থেকে আমদানী করা উন্নতমানের মদ পরিবেশিত হচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তা দিয়ে যাওয়া ঘোষকের কণ্ঠ শোনা গেল, ‘মদ হারাম করা হয়েছে’। ব্যস, শুরু হ’ল মদের ভান্ড ভেঙ্গে ফেলার প্রতিযোগিতা। মদীনার রাস্তায় রাস্তায় মদের স্রোত বইতে লাগল। যারা কিছু খেয়েছিল, তারা গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করতে লাগল। কানে শোনা মাত্রই পরিবর্তন! কিভাবে সম্ভব হ’ল?

নির্দেশ এলো, ‘যে পেট ভরে খায় আর তার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়’। রাসূলের এই নির্দেশ মেনে নিয়ে মুসলমান নিজে না খেয়ে প্রতিবেশীকে খাওয়াতে লাগল। জনৈকা মহিলা চোরের পক্ষে সুফারিশ এলে বলে দিলেন, ‘আমার মেয়ে ফাতেমা যদি চুরি করে, তাহ’লে শাস্তি স্বরূপ আমি তার হাত কেটে দেব’। জানা গেল, জনৈক রাজস্ব কর্মকর্তা নিজের জন্য উপঢৌকন নিয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে ডেকে বললেন, তুমি বাড়ীতে গিয়ে তোমার পিতৃগৃহে অবস্থান কর। দেখি কে তোমাকে উপঢৌকন দেয়? এর ফলে দেখা গেল স্বয়ং খলীফা থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যক্তি পর্যন্ত সূদ-ঘুষ ও সকল প্রকার দুর্নীতি থেকে তওবা করল। ফল দাঁড়ালো এই যে, ওমর (রাঃ)-এর মাত্র ১০ বছরের শাসনকালের মধ্যে ২২ লাখ বর্গমাইলের বিশাল আরব উপদ্বীপে দরিদ্র মানুষ দূরে থাক ‘যাকাত’ নেয়ার মত একজন ফকীর-মিসকীনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ আজ বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও এখানে মানুষ না খেয়ে ঘুমায়। রচিত হয় ‘বাসন্তী’দের কাপড় বিহনে জাল পরার ইতিহাস। যা ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষের সময় ঘটেছিল। কারণ তো একটাই, আমরা কপট বিশ্বাসী হয়ে গেছি। যা বলি তা করি না। যা দাবী করি, তা বুঝি না।

জ্ঞান তাপস নির্মল বাবু!

আপনার বয়স এখন ৭৫। আপনি কি মনে করেন মৃত্যুর পরেই মানুষের যাত্রা শেষ? যে মানুষের সেবার জন্য আসমান ও যমীনের সবকিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, সেই মানুষ সর্বাধিক একশ’ বছরের মধ্যেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে। যার মধ্যে যালেম যুলুম করেও প্রশংসা পাচ্ছে। অন্যদিকে নিরপরাধ মযলূম বদনামগ্রস্ত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছে। তাহ’লে যালেমের যুলুমের শাস্তি এবং মযলূমের যথাযথ পুরস্কার পাবার উপায় কি?

প্লেটো বা এরিষ্টটলের দর্শনে এর কোন জবাব নেই। তারা বলেছেন মানুষ মরে গিয়ে পরম সত্তার মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। যা স্রেফ কাল্পনিক কথা। হিন্দু দর্শনে রয়েছে ‘জন্মান্তরবাদ’ ও বৌদ্ধ দর্শনে রয়েছে ‘নির্বাণবাদ’। সবটারই ফলাফল শূন্য। এইসব দর্শনের ফলে মানুষ হয়ে পড়ে স্বেচ্ছাচারী। কেননা মরার পরেই যখন সব শেষ, তখন সে যা খুশী তাই করবে, এটাই স্বাভাবিক। এইসব নাস্তিক্যবাদী দর্শনের প্রভাবে একদল মানুষ হয়ে পড়ে সংসার বিরাগী। আরেক দল মানুষ হয়ে পড়ে চরম স্বেচ্ছাচারী ও ভোগবাদী।

খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে ‘ইসলাম’ এসে মানুষকে অভয় বাণী শুনায় যে, ‘হে মানুষ! এ জীবন তোমার শেষ নয়। যে রূহ আল্লাহর নিকট থেকে তোমার মায়ের গর্ভে এসেছিল। যেখান থেকে বুদ্ধিমান মানবশিশু আকারে ভূমিষ্ট হয়ে তুমি দুনিয়ার পরীক্ষাগারে পরীক্ষা দিচ্ছ। অতঃপর নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল পূর্ণ করে পুনরায় ফিরে যাবে সেখানে, যেখান থেকে তোমার রূহটা এসেছিল। অতঃপর সেখানে যালেম তার শাস্তি পাবে ও মযলূম তার প্রতিদান পেয়ে ধন্য হবে। বস্ত্ততঃ সেটাই হ’ল পরজগত। যা হবে সীমাহীন শান্তির অথবা তার বিপরীত।

স্রষ্টা আর সৃষ্টি কখনো এক নয়। সৃষ্টি কখনো স্রষ্টার সত্তায় লীন হয়ে যাবে না। জন্মান্তরের নামে একজনের পাপ-পুণ্যের ফলাফল অন্যে পাবে না। নির্বাণবাদের নামে মানুষ জীবন-যন্ত্রণা থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। বরং আনন্দ ও বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন। যার ভাল ও মন্দের পুরস্কার ও প্রতিফল সে পাবেই। জান্নাত অথবা জাহান্নাম হবে তার সেই ফলাফলের চিরস্থায়ী ঠিকানা।

উক্ত বিশ্বাস যে ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে লালন করে, সেই-ই হ’তে পারে প্রকৃত অর্থে পূর্ণ মানুষ। সেই মানুষের কাছে সকল মানুষ নিরাপদ। বর্তমান দুনিয়ামুখী রাজনীতি ও অর্থনীতি মানুষকে স্বার্থপর হিংস্র জীবে পরিণত করেছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন মানুষের চিন্তাজগতে পরিবর্তন আনা। দুনিয়ার উদ্দেশ্যে নয়, আখেরাতের উদ্দেশ্যে দুনিয়ার সকল কাজ করা। তাহ’লেই ভোগবাদী মানুষ ত্যাগী মানুষে পরিণত হবে। অতএব আল্লাহ ও আখেরাতে জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী মানুষই কেবল দুনিয়া ও আখেরাতে সত্যিকারের সফলকাম মানুষ।

দেশীয় শোষক গোষ্ঠী ও বিদেশী শকুনদের চক্রান্তে আমি ও আমার সাথীগণের অনেকে আজ কারা নির্যাতিত। আমরা আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি। আর সেজন্যই আপনাকে আহবান জানাই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম ‘ইসলাম’ কবুল করার জন্য। যে আল্লাহ আপনার মধ্যে উন্নত মানবিক চেতনা দান করেছেন, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হউন এবং তাঁর নিকটে আত্মসমর্পণ করুন। মৃত্যুর পর যে চিরস্থায়ী জীবনের দ্বারপ্রান্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেই পরকালীন জীবনে যেন আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভে আমরা ধন্য হ’তে পারি, সেজন্য মৃত্যুর আগেই মহান আল্লাহকে অন্তর থেকে কবুল করে নিয়ে আসুন আমরা বলি, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর দাস ও তাঁর প্রেরিত রাসূল’।

            ইতি-

আপনার হিতাকাংখী

        মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব